সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মাস খানেক আগে গুলশন হামলার স্মারক গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। স্মারক বেদি ভেঙে সেখানে লাগিয়ে দেওয়া হয় সশস্ত্র সংগঠন হিজবুত তাহরিরের পোস্টার। এবার সেই হিজবুতকে ফের নিষিদ্ধ সংগঠন ঘোষণা করা আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক মহম্মদ ময়নুল ইসলাম। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানী ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়। ওই ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ২ পুলিশ আধিকারিক। তাঁদের স্মৃতিতেই তৈরি করা হয়েছিল ‘দীপ্ত শপথ’ স্মারক। সেই ভাস্কর্যই গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামাত সরকারের আমলে এই জঙ্গি সংগঠনটি বাংলাদেশে ঘাঁটি মজবুত করে। কিন্তু ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর হাসিনার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন আওয়ামি লিগ সরকার হিজবুত তাহরিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। জনগণের নিরাপত্তার জন্য এই সংগঠনটি বিপজ্জনক বলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। শুধু বাংলাদেশই নয় বিশ্বের বহু মুসলিম দেশেই হিজবুত তাহরিরকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় ফের বাংলাদেশে মাথাচারা দিয়েছে তারা। পালন করা হচ্ছে নানা কর্মসূচি। এমনই অভিযোগ উঠছিল নানা মহলে।
গত শনিবার চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনারের সম্মেলনে চট্টগ্রামের শীর্ষ পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন পুলিশ প্রধান। বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে চট্টগ্রামে হিজবুত তাহরির তৎপরতার উদাহরণ দিয়ে পুলিশের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। উত্তরে পুলিশ প্রধান বলেন, “হিজবুত তাহরির জঙ্গি সংগঠন। আমাদের মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। জঙ্গিদের ক্ষেত্রে আমরা আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি।” অনেক তরুণ না জেনে এই সংগঠনের সঙ্গে জড়াচ্ছে। এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে, পুলিশ প্রধান বলেন, “যারা কিশোর বা যারা এটাতে জড়িয়ে পড়ছে বা আকৃষ্ট হচ্ছে, সেক্ষেত্রে আমাদের সমাজের অনেক কিছু করণীয় আছে। আমাদের নজরদারি সবসময় রয়েছে। কোন ধরণের অপরাধে জঙ্গি বা সন্ত্রাসীদের জড়িত হওয়ার কোনও সুযোগ নেই।”
২০০১ সালে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে হিজবুত তাহরির। এর নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিএর একজন শিক্ষক। ২০০৯ সালে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সংগঠনটির মিডিয়া সমন্বয়ক ইমতিয়াজ সেলিম সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলে, সরকার পতন আন্দোলনের শুরু থেকেই তাদের কর্মীরা অংশ নিয়েছিলেন। তবে তারা কোনোও ব্যানার ব্যবহার করেননি।
বিশ্লেষকদের মতে, হিজবুত তাহরিরকে মদত দেওয়ার পিছনে জামাতের হাত থাকতে পারে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে হিংসাত্মক করে তোলার অভিযোগে জামাত-ই-ইসলামি ও ইসলামি ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল তৎকালীন হাসিনা সরকার। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ার পর সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। সক্রিয় হয় হিজবুতও। এর মধ্যে জেল থেকে মুক্তি পেয়েছে একাধিক জঙ্গি নেতাও। যার মধ্যে আল কায়দা শাখা সংগঠনের নেতা জসীমউদ্দিন রহমানি অন্যতম। বিভিন্ন মামলা থেকে নিষ্কৃতি পাচ্ছে রাজাকাররা। অনেকেই মনে করছেন, পরোক্ষভাবে অন্তর্বর্তী সরকারকে চালনা করছে জামাত। ফলে এবার হিজবুত তাহরিরের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করায় জামাতের কী প্রতিক্রিয়া হয় সেদিকে নজর রয়েছে ওয়াকিবহাল মহলের।