সুকুমার সরকার, ঢাকা: দুর্গাপুজোর বাকি মাত্র আর হাতেগোনা কয়েকদিন। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। কিন্তু আগস্ট মাসে বড় রাজনৈতিক পালাবদল ঘটেছে বাংলাদেশে। গণঅভ্যুত্থানের জেরে পদচ্যুত হয়েছেন শেখ হাসিনা। পতন ঘটেছে আওয়ামি লিগ সরকারের। তার পর থেকেই দেশের নানা প্রান্তে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন হিন্দুরা। প্রশ্ন উঠছে, এবছর কতটা নির্বিঘ্নে হবে দুর্গোৎসব? কিন্তু দুর্গাপুজো নির্বিঘ্নেই উদযাপন করার আশ্বাস দিয়েছে মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী সরকার। একই সঙ্গে অনুদান বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে দেওয়া হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট ব্যাপক গণ আন্দোলনের জেরে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়েন হাসিনা। তার পর থেকে অত্যাচারের খাঁড়া নেমে আসে হিন্দু-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর। বিশেষ করে হিন্দুদের বাড়ি-ঘর, সম্পত্তি সব কিছুতে হামলা চালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু হিন্দু মন্দিরও। ফলে সন্ত্রাসের আবহেই শুরু হয় পুজো প্রস্তুতি। মনে ভয়,আশঙ্কা, উদ্বেগ নিয়েই চলছে প্রতিমা নির্মাণ, প্যান্ডেল গড়ার কাজ। ইতিমধ্যে নমাজ আর আজানের সময়ে দুর্গাপুজোর গানবাজনা বন্ধ রাখতে হিন্দুদের অনুরোধ জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে শান্তিতে পুজো উদযাপন করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ করছে ইউনুস সরকার।
জানা গিয়েছে, দুর্গোৎসব সাড়ম্বরে আয়োজনের জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। ধর্ম উপদেষ্টা আফম খালিদ হোসেন জানিয়েছেন, "দুর্গাপুজোর সময় নিরাপত্তার জন্য টহলদারিতে হেলিকপ্টার থাকবে। দশমীর দিন ডুবুরি থাকবে। পুজোর সময় পুলিশ উচ্চপর্যায়ের সতর্কতা নেবে।" দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি নিয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের হল অব প্রাইডে আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংক্রান্ত সভায় আইজিপি জানান, "দুর্গাপুজোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।পুজো -পূর্ব, পুজো উদযাপন ও পুজো পরবর্তী প্রতিমা বিসর্জন।" এর আগে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট সংবাদ সম্মেলনে, অস্থায়ী ও স্থায়ী পুজো মণ্ডপে সার্বক্ষণিক নজরদারির জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর দাবি জানায়। পাশাপাশি দুর্গাপুজোয় অন্তত তিন দিনের সরকারি ছুটির দাবি জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মহম্মদ জাহাঙ্গির আলম চৌধুরি জানিয়েছিলেন, দুর্গাপুজোর আয়োজকদের কাছে বিশেষ অনুরোধ জানানো হয়েছে সরকারের তরফে। বলা হয়েছে, যে সময়ে নমাজ বা আজান হবে তখন দুর্গাপুজোর সমস্ত সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ রাখা হোক। গান বাজনা হোক বা ঢাক-মন্ত্রোচ্চারণের আওয়াজ, পুজোমণ্ডপ থেকে যেন শব্দ না বেরয়। এই কথা বলার পরে জাহাঙ্গির জানান, তাঁদের এই অনুরোধ মেনে নিতে ইতিমধ্যেই সম্মতি দিয়েছে পুজো কমিটিগুলো। এবার বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে কীভাবে নির্বিঘ্নে দুর্গাপুজো সম্পন্ন করে ইউনুস সরকার, সেদিকে নজর রাখবে ভারতও।