সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গত দেড় মাসে অনেকটাই বদলে গিয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিত্র। শেখ হাসিনার পতনের পর এখন ক্ষমতায় ফিরতে মরিয়া খালেদা জিয়ার দল বিএনপি। জাতীয় নির্বাচনকে পাখির চোখ করেছে জামাত-ই-ইসলামির মতো মৌলবাদী দলও। ইসলামপন্থী কয়েকটি দলের সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্য গড়ে ভোটে লড়ার চিন্তা করছে পাকিস্তানপন্থী জামাত। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে অন্তত পাঁচটি ইসলামি দলের সঙ্গে পৃথক বৈঠক সেরে ফেলেছে তারা। প্রশ্ন উঠছে, এবার কী ধর্মের হাওয়া তুলে গণতন্ত্রকে হাতিয়ার করে ক্ষমতায় আসতে চাইছে জামাত?
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রায় সাড়ে ১৫ বছর পর স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রমে ফিরেছে ইসলামপন্থী জামাত। ভোটের ময়দানে নামতে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তারা। প্রথম আলো সূত্রে খবর, দলের বিভিন্ন নেতার বক্তব্য থেকে জানা গিয়েছে, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এখনই অন্তর্বর্তী সরকারের উপর কোনও চাপ তৈরি করতে চাইছে না জামাত। নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক এক শীর্ষ নেতা জানান, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে এক বছর সময় দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে দলের নির্বাহী পরিষদে। সেভাবেই তাঁরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জানা গিয়েছে, ১৫ আগস্ট থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক শুরু করে দিয়েছে জামাত। এর মধ্যে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন, জাকের পার্টি, লেবার পার্টি, খেলাফত মজলিস ও ফরায়েজী আন্দোলন উল্লেখযোগ্য। এছাড়া খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির আবদুল মাজেদ আতাহারী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির আবু জাফর কাসেমী, জামিয়া মাদানিয়ার মুহতামিম মনিরুজ্জামান কাসেমী, জনসেবা আন্দোলনের আমির ফখরুল ইসলাম-সহ বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক ও আলেমদের (ইসলামি ধর্মগুরু) সঙ্গে জামাতের আমির মতবিনিময় করেছেন। এই ভাবেই ইসলামপন্থীদের মধ্যে ঐক্য তৈরি করতে চায় বলে জানিয়েছে জামাত। বিশেষ করে নির্বাচনী ঐক্য। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ধর্মের জিগির তুলে এবার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায় পাকিস্তানপন্থী দলটি।
এর আগে সাধারণ মানুষের ভোটদানের মাধ্যমে বাংলাদেশে মসনদে বসেছে বিএনপি, আওয়ামি লিগের মতো রাজনৈতিক দল। কিন্তু জামাত মৌলবাদী সংগঠন। নির্বাচনে লড়াই করলেও খুব বেশি আসনে জিততে পারেনি তারা। হাসিনার আমলে খুব বেশি প্রভাবও বিস্তার করতে পারেনি জামাত। কিন্তু বাংলাদেশের এখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গিয়েছে। আওয়ামি লিগ সরকারের পতনের পর এখন ক্ষমতায় মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। জামাতের উপর থেকে তৎকালীন হাসিনা সরকারের জারি করা নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে জেল থেকে মুক্তি পেয়েছে একাধিক জঙ্গি নেতাও। যার মধ্যে আল কায়দা শাখা সংগঠনের নেতা জসীমউদ্দিন রহমানি অন্যতম। বিভিন্ন মামলা থেকে নিষ্কৃতি পাচ্ছে রাজাকাররা। অনেকেই মনে করছেন, পরোক্ষভাবে অন্তর্বর্তী সরকারকে চালনা করছে জামাত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে ইউনুস সরকারের কার্যক্রম ও পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের উপর নজর রয়েছে ভারতের। হাসিনার দেশত্যাগের পর যেভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুরা তা চিন্তা বাড়িয়েছে দিল্লির। এর মধ্যে বাংলাদেশের জেল থেকে মুক্তি পাচ্ছে রহমানির মতো জঙ্গি নেতা। এর পর জামাতের মতো মৌলবাদী দল ক্ষমতার রাশ ধরলে মাথাচারা দেবে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনগুলো। অনুপ্রবেশ বাড়বে অসম, মণিপুর, পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে। বাংলাদেশের মাটিতেই নাশকতার ছক কষা হবে ভারতের বিরুদ্ধে। ফলে আগামিদিনে কোন দিকে মোড় নেয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা, সেদিকেই নজর ওয়াকিবহাল মহলের।