shono
Advertisement
Bangladesh

ছাত্রদের কাছে নতি স্বীকার! এক রাতের আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতার বাইরে ৭ কলেজ

বেশ কয়েকজন পড়ুয়া সংঘর্ষে আহত হন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনজন। 
Published By: Suchinta Pal ChowdhuryPosted: 05:24 PM Jan 27, 2025Updated: 05:33 PM Jan 27, 2025

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফের ছাত্রদের আন্দোলনে জ্বলে উঠেছে বাংলাদেশ। রাতভর প্রতিবাদ, সংঘর্ষের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধীনে থাকা ৭ কলেজের পড়ুয়ারা তাঁদের দাবি পূরণের জন্য চার ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। অবশেষে সেই ছাত্রদের কাছেই নতি স্বীকার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের! বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ওই ৭ কলেজ আর ঢাবির অধীনে থাকবে না।

Advertisement

জানা গিয়েছে, ৫ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) মামুন আহমেদকে একটি স্মারকলিপি দিয়েছিলেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। সেখানে সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় ‘অযৌক্তিক’ কোটাপদ্ধতি বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবি ছিল। সেই স্মারকলিপির বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হলো, তা জানতে শিক্ষার্থীরা গতকাল রবিবার বিকেলে মামুন আহমেদের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পড়ুয়াদের অভিযোগ, তাঁদের কথা না শুনেই সহ-উপাচার্য নিজের ঘর থেকে বের করে দেন পড়ুয়াদের। জানান যে তিনি সাত কলেজের ব্যাপারে কিছু জানেন না, কোনও পদক্ষেপ নিতেও পারবেন না। সেই থেকেই ঝামেলার সূত্রপাত হয়। ক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা প্রকাশ্যে সহ-উপাচার্যের ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলেন। তাতে পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। ঢাকার নীলখেত, পলাশির মতো এলাকার রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে পড়ে ছাত্র বিক্ষোভ। তা দমনে পুলিশ লাঠিচার্জের পাশাপাশি সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ। বেশ কয়েকজন পড়ুয়া আহত হন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনজন। 

এর প্রতিবাদে পড়ুয়ারা সোমবার সকাল থেকে নিজের নিজের কলেজের সামনের রাস্তা অবরোধে শামিল হন। দুপুর ১২টা নাগাদ সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজেদের দাবিদাওয়া তুলে ধরেছেন। তা পূরণের জন্য ৪ ঘণ্টা সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছেন প্রতিবাদীরা। আজকের মতো সাত কলেজের সমস্ত ক্লাস, পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়। এরপরই ওই সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ বৈঠকে বসেন। এই আলোচনার পরই নিয়াজ আহমেদ জানান, ঢাকার বড় সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থাকছে না। এই কলেজগুলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্মানজনক পৃথক্‌করণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০২৪-২৫ সেশন থেকে সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ভর্তি করা হবে না।

এছাড়া আলোচনায় আরও কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সভায় জোর সুপারিশ করা হয়, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী আসনসংখ্যা, ভর্তি ফি নির্ধারণসহ যাবতীয় বিষয়ে মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের অধীন রয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্বশীল থাকবে, যাতে তাঁদের শিক্ষাজীবন কোনওভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

সময়সীমা বেঁধে দিয়ে পড়ুয়াদের ৬ দফা দাবি ছিল, ঢাকা কলেজ-সহ সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘাতের দায় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ক্ষমা চাইতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদকে পদত্যাগ করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সাত কলেজের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সম্পর্কের চূড়ান্ত অবসান ঘটিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রাকিবকে হত্যার উদ্দেশ্য হামলা-সহ শিক্ষার্থীদের উপর নিউমার্কেট থানা-পুলিশের হামলার ঘটনায় এসি-ওসিসহ জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কর্তৃক ইডেন কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজ-সহ সাত কলেজের নারী শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও অশালীন অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই পরিস্থিতি সমাধানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা, উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, ইউজিসির সদস্য ও ঢাবির উপাচার্যের সমন্বয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি টিমের সঙ্গে তাৎক্ষণিক উচ্চ পর্যায়ের মিটিংয়ের মাধ্যমে এই ঘটনার সমাধান করতে হবে। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। ফলে পড়ুয়াদের দাবি মতোই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতার বাইরে ৭ কলেজকে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ফের ছাত্রদের আন্দোলনে জ্বলে উঠেছে বাংলাদেশ।
  • রাতভর প্রতিবাদ, সংঘর্ষের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধীনে থাকা ৭ কলেজের পড়ুয়ারা তাঁদের দাবি পূরণের জন্য চার ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন।
  • অবশেষে সেই ছাত্রদের কাছে নতি স্বীকার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ওই ৭ কলেজ আর ঢাবির অধীনে থাকবে না।
Advertisement