অভিষেক চৌধুরী, কালনা: বাংলাদেশে এক সদ্যোজাত-সহ দুই শিশুকন্যা ও স্ত্রীকে রেখে ভারতে এসেছিলেন চিকিৎসা করাতে। কিন্তু বাংলাদেশের অশান্তি ও অস্থিরতায় দুচোখের পাতা এক করতে পারছিলেন না তিনি। ওপারে থাকা পরিবারের কথা ভেবে মানসিক উদ্বেগ ও চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। সামান্য সুস্থ হতেই তাই দেশে ফেরার কথাও ভেবেছিলেন। কিন্তু পরিবারের সঙ্গে আর তাঁর দেখা হল না। হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ায় কালনায় মৃত্যু হল বাংলাদেশি যুবকের!
জানা গিয়েছে, মৃতের নাম লিটন অধিকারী (৩৭)। তিনি বাংলাদেশের মাদারিপুর জেলার বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে লিটন আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপরই তাঁকে কালনা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। অতিরিক্ত চিন্তা ও মানসিক উদ্বেগের কারণে অসুস্থ হয়ে লিটনের মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবারের লোকজন অনুমান করলেও মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে এদিন কালনা হাসপাতাল থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের মর্গে মৃতদেহ পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, লিটন অধিকারী নামের বাংলাদেশি ওই যুবকের দিদির বাড়ি পূর্বস্থলীতে। হার্টের সমস্যা থাকায় গত ১৫ নভেম্বর ভারতে চিকিৎসা করাতে আসেন লিটন। বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে পূর্বস্থলী থানা এলাকার উখুরা গোঁসাইপাড়ায় থাকা দিদি পলি বিশ্বাস, জামাইবাবু সঞ্জয় বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। সেখানে থেকেই তিনি কল্যাণীর এইমসে চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। প্রায় সুস্থও হয়ে উঠেছিলেন। এমতাবস্থায় বাবা মেরত অধিকারী অস্থির পরিস্থিতির মধ্যেই বাংলাদেশ চলে যান। মা পরিষ্কার অধিকারীকে নিয়ে লিটন দিদির বাড়িতে থেকে যান। কিন্তু হলে কি হবে, ওপার বাংলায় থাকা সদ্যোজাত ও ৩ বছরের দুই শিশুকন্যা ও স্ত্রী পূর্ণিমা অধিকারীর জন্য রাতে ঘুমোতে পারছিলেন না তিনি। লিটনের উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়। প্রতিনিয়ত স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রেখে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছিলেন তিনি। দেশে ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে তিনি অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
লিটনের জামাইবাবু পেশায় দিনমজুর সঞ্জয় বিশ্বাস জানান, “শ্বশুর ও শাশুড়িকে নিয়ে শ্যালক বাংলাদেশ থেকে নভেম্বর মাসে আসেন। এখানে থেকেই শ্যালকের হার্টের চিকিৎসা চলছিল। অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু কয়েকদিন আগেই শ্বশুরমশাই দেশে ফিরে যান। এরপর বাংলাদেশের অশান্তি শুরু হতেই শ্যালকের চিন্তা আরও বেড়ে যায়। প্রতিনিয়ত ফোনে স্ত্রীর থেকে পরিস্থিতির কথা জানত। যেহেতু ওর পরিবার ওখানে রয়েছে সেই নিয়েই মানসিক উদ্বেগ বেড়ে গিয়েছিল। সেই কারণেই শ্যালক অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বলে আমাদের অনুমান। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে কাগজপত্র ঠিক করে এখানেই শ্যালকের শেষকৃত্য করা হবে।” কালনা এসডিপিও রাকেশ কুমার চৌধুরি জানান, বাংলাদেশি এক যুবকের মৃত্যুর পর আইনি বিধি মেনে তাঁর পরিবারকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। ওই যুবকের এখানে চিকিৎসা চলছিল বলে জানা গিয়েছে।