শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: এ যেন মধ্যযুগীয় বর্বরতা! যাতায়াতের রাস্তা দখল করে ময়দান সম্প্রসারণের প্রতিবাদ করায় সমাজিক বয়কটের 'নিদান'! বছর খানেক 'একঘরে' আবদুল, হবিবুররা। অভিযোগ প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও মেলিনি সুরাহা।
শুধু তাই নয়, চলতি মাসে আবদুলদের বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করায় আরও ১১টি কৃষক পরিবারকে একঘরে করে দেওয়ার নিদান দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। তাতে চরম বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথাবার্তাতো দূর অর্থ দিয়েও কিনতেন পারছেন নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীও। বিডিও থেকে থানার দ্বারস্থ হয়েছে সুরাহা হয়নি বলে দাবি। বিডিও দিবেন্দু সরকার বলেন, "ঘটনা ভালো করে জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের রামডাঙা বেকিডাঙায়। বছর খানেক আগে স্থানীয় রামডাঙা এলাকায় গ্রামীণ রাস্তা বেআইনিভাবে দখল করে স্থানীয় ঈদগাহ ময়দানকে সম্প্রসারিত করার অভিযোগ ওঠে। প্রতিবাদ জানান স্থানীয় যুবক আবদুল গফ্ফর ও হবিবুর রহমান। মূলত তারপরই থেকে আবদুল ও হবিবুররে পরিবারকে সামাজিক বয়কট করার নিদান দেন মাতব্বররা! এক বছর ধরে এই পরিস্থিতি চলছে। নানা জায়গায় অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা মেলেনি বলে অভিযোগ। এদিকে, গত ২৩ ডিসেম্বর আবদুল গফ্ফাররে বাড়িতে বিবাহের অনুষ্ঠান ছিল। আত্মীয়স্বজন সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। তারপর থেকে তাঁদেরকেও সামাজিক বয়কটের নিদান দেন মাতব্বরেরা। আরও ১১টি পরিবার এই নিদানের শিকার হন।
কার্যত একঘরে পরিবারগুলি বাজার করতে পারছেন না! নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে বাধার মুখে পড়ছেন। বাড়িতে আসতে পারছেন না কোনও আত্মীয়। সব মিলিয়ে দীর্ঘদিনের সামাজিক বয়কটে দিশাহারা পরিবার প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। জব্বর হোসেন, মাজেদুর রহমান-সহ একাধিক মাতব্বরদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন 'ঘরবন্দি' আবদুল গফফর, হবিবুর রহমান, সামিন রহমান-সহ ১১টি পরিবার। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ।
এদিন বিডিও দিবেন্দু সরকার বলেন, "ঘটনা ভালো করে জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে।" তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইটাহার গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের বিলকিস পারভীন বলেন, "এবিষয়ে কোনও অভিযোগ নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" যদিও এব্যাপারে ইটাহার থানার আইসি গৌতম চৌধুরী অবশ্য বলেন, "ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।"
