ধীমান রায়, কাটোয়া: আর মাত্র দু’দিন। তারপরেই পৌষপার্বণ। ঘরে ঘরে পিঠে-পুলি তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়ে যাবে। মা-ঠাকুমারা চাল ভাঙাতে ছুটবেন আটাচাকিতে। ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ জেনারেশনের অবশ্য সে সময়ও নেই। তাই কেনা পিঠে-পাটিসাপটায় রসনা তৃপ্তি করেন তাঁরা। আজ থেকে বছর দশেক আগেও এসময় কার্যত মেলা বসে যেত কাটোয়ার একাইহাটে কিরণ মণ্ডলের বাড়িতে। দাওয়ায় রাখা চার-চারটে ঢেঁকিতে চলত ধান ভাঙা। শুধুমাত্র পৌষপার্বণই নয়, সারা বছরই তাঁদের বাড়িতে ভিড় জমাতেন এলাকার মহিলারা। তবে মণ্ডলবাড়ির ঢেঁকিতে ধান ভাঙতে অবশ্য এক টাকাও খরচ করতে হত না এলাকাবাসীকে। কিন্তু আজ সে রাজাও নেই আর রাজত্বও নেই।
কাটোয়ার খাজুরডিহি পঞ্চায়েত এলাকার একাইহাটে থাকেন কিরণ মণ্ডলের। বয়স ৬২। স্ত্রী, দুই ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতি নাতনিদের নিয়ে ভরা সংসার। প্রান্তিক চাষি পরিবার, গো-পালনও করেন মণ্ডলবাড়ির সদস্যরা। তাঁদের বাড়িতে রয়েছে বহুকালের একটি ঢেঁকি। পাড়া প্রতিবেশীদের কারও প্রয়োজন হলে এই ঢেঁকি ব্যবহার করেন। তার জন্য ভাড়া নেন না কিরণবাবুরা। কিরণ মণ্ডল বলেন, “এই ঢেঁকি দাদুর আমলের। বাকিগুলি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। একটি রয়েছে। পারিবারিক ঐতিহ্য। তাই কোনও রকমে টিকিয়ে রেখেছি।” স্থানীয় বাসিন্দা কণিকা বায়েন সরকার বলেন, “পৌষপার্বণের সময় পাড়ার অনেকেই কিরণবাবুদের বাড়ির ঢেঁকিতেই চালগুঁড়ি করে নিয়ে যান। কারন ঢেঁকিতে চালগুঁড়ির পিঠে মেশিনের গুঁড়ির থেকে অনেক সুস্বাদু হয়। কিরণবাবুরা কোনও খরচ নেন না। এলাকায় দ্বিতীয় কোনও ঢেঁকি নেই।”
ছবি: জয়ন্ত দাস
[ কুম্ভ কি কেড়ে নেবে গঙ্গাসাগরের পুণ্যার্থীদের ভিড়? উঠছে প্রশ্ন ]
The post পৌষপার্বণে এখনও ঢেঁকিতেই ধান ভাঙা হয় কাটোয়ার এই গ্রামে appeared first on Sangbad Pratidin.
