সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: খাদ্যের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি দাঁতাল। হানা দিচ্ছে বিদ্যালয়-সহ গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে। এসবের পর এবার রাজ্য সড়কে উঠে পড়ে ধাক্কা দিয়ে একটি পিকআপ ভ্যান উলটে দিল দাঁতালটি। যাত্রীবাহী বিভিন্ন গাড়িতে শুঁড় গলিয়ে দরজায় ধাক্কা মেরে রীতিমতো আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করল গজরাজ। প্রায় আধ ঘন্টা ঘরে দাঁতালে তাণ্ডবে অবরুদ্ধ হয়ে গেল ঝাড়গ্রাম লাগোয়া রাজ্য সড়ক। সার বেঁধে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল যাত্রীবাহী এবং পণ্যবোঝাই গাড়ি।ভয়ে পালাতে গিয়ে পড়ে গিয়ে আহত হলেন কাউন্টারইনসাজেন্সি ফোর্সের এক কনস্টেবল। শুক্রবার সাতসকালে ঝাড়গ্রাম ব্লকের গড় শালবনি এবং জিতুশোলের মাঝে রাজ্য সড়কে এইভাবেই ত্রাস
ছড়াল দাঁতাল।
[ আরও পড়ুন: রক্ষকই ভক্ষক! রাতের ট্রেনে মহিলার শ্লীলতাহানির অভিযোগে ধৃত আরপিএফ কর্মী]
শুধু রাজ্য সড়কে হামলা চালিয়েই রোষ উগরে দেয়নি। এরপর দাঁতালটি গ্রামে ঢুকে আরেক যুবককে জখম করেছে। বরাতজোরে সে প্রাণে রক্ষা পেলেও আহত অবস্থায় সেও চিকিৎসাধীন ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সকাল সাতটা নাগাদ রাজ্য সড়কের উপর দিয়ে তখন যাত্রীবাহী সরকারি, বেসরকারি বাস-সহ বিভিন্ন পণ্যবাহী গাড়ির ভিড় শুরু হয়ে গিয়েছে। ব্যস্ত সড়কে হঠাৎই উঠে পড়ে একটি দাঁতাল। তাকে দেখে বিভিন্ন গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। রাস্তার অন্য প্রান্তে মানুষজন জড়ো হয়ে যান।
এরপর শুরু হয় দাঁতালের কার্যকলাপ। বাসের জানলা দিয়ে শুঁড় গলানোর চেষ্টা করছিল সে, দরজায় ধাক্কা দিচ্ছিল। তা দেখে যাত্রীদের একেবারে থরহরিকম্প দশা। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, হাতিটি খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছিল। আর তার জন্যেই এতটা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল সে। একটি বেসরকারি বাসের পিছনে ধাক্কা মারে দাঁতালটি। রাজ্য সড়কের উপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি ওষুধভরতি পিক ভ্যানের পিছনে এত
জোরে হাতিটি ধাক্কা মারে যে গাড়িটি উলটে যায়। গাড়ির চালক, খালাসি কোনও রকমে গাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রাণে বাঁচেন। পিকআপ ভ্যানটির চালক নিরঞ্জন বারিক বলেন, “রাস্তার উপরে হাতি দেখে সব গাড়িগুলি সার দিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।আমিও গাড়িতেই ছিল।হঠাৎ করে হাতিটি এসে ধাক্কা মারে।এক জোরে ধাক্কা মারে যে গাড়ি উলটে যায়। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছি।”
দীর্ঘক্ষণ গজরাজের এই তাণ্ডবে রাজ্য সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তা পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে যায়।পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ওই সময়ে বাইক নিয়ে শালবনি এলাকায় চা খেতে গিয়েছিলেন সিআইএফ-এর দুই কনস্টেবল। রাস্তায় হাতি দেখে তাঁরা ভয় পেয়ে বাইক ফেলে রেখেই পালিয়ে যান। পরে তাদের মধ্যে দীপক পাল নামে এক কনস্টেবল বাইকটি নিতে ফিরে আসেন। পুলিশ জানিয়েছে, তিনি এতটাই ভয় পেয়েছিলেন যে পালাতে গিয়ে পড়ে যান। আহত অবস্থায় তাঁকে ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভরতি করানো হয়েছে।
বেশ খানিকক্ষণ এভাবে সকলকে অতিষ্ঠ করে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে দেওয়ার পর হাতিটিক গ্রামের মানুষজন পাশের জঙ্গলে তাড়িয়ে নিয়ে যান। তাতেও রক্ষা মেলেনি অবশ্য। জঙ্গলের ভিতর দিয়ে গিয়ে শিরষি গ্রামে ঢুকে পড়ে উন্মত্ত দাঁতাল। সেই গ্রামে দুলাল মাহাতো নামে এক যুবক আহত হন। দুলালের দাদা প্রিয়রঞ্জন মাহাতো বলেন, “ভাই জমিতে ধান দেখতে গিয়েছিল। সেই সময় দাঁতালটি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসে। ভাই হাতিটির সামনে পড়ে যায়। শুঁড় দিয়ে ধাক্কা মেরে ফলে দেয়। পড়ে যাওয়ার পর হাতিটি ভাইকে দেখতে না পেয়ে চলে যায়। ভাইকে হাসপাতালে ভরতি করিয়েছি। শালবনির রাস্তায় তাণ্ডবের পরই হাতিটি আমাদের গ্রামে ঢুকেছিল।”
[ আরও পড়ুন: ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছেন মহুয়া! মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি ক্ষুব্ধ বিধায়কের]
এই বিষয়ে ঝাড়গ্রামের বনদপ্তরের আধিকারিক বাসবরাজ হোলেইছির কথায়, “বেশিরভাগ হাতিই ফিরে গিয়েছে। দু,একটি স্থায়ীভাবে রয়ে গিয়েছে। আমরা ওদের নজরে রাখছি।” ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহল এলাকায় হাতির তাণ্ডব প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। মানুষজনও এর সঙ্গে অভ্যস্ত।কখন পথের মাঝে গজরাজ উদয় হবেন, সেই ভয়েই দিন কাটে তাঁদের। তবে শুক্রবার ক্ষুধার্ত হাতির আস্ফালনে নতুন অভিজ্ঞতা
মুখোমুখি হলেন তাঁরা।
ছবি: প্রতীম মৈত্র।
দেখুন ভিডিও:
The post খিদের জ্বালায় রাজ্য সড়কে উঠে তাণ্ডব, শালবনিতে ত্রাস ছড়াল মূর্তিমান দাঁতাল appeared first on Sangbad Pratidin.
