সুলয়া সিংহ, বর্ধমান: পুত্রসন্তানের আকাঙ্ক্ষায় কার্তিক পুজো করেন অনেক দম্পতি। আবার ঠিক এই কারণেই নবদম্পতির বাড়িতে কার্তিক ফেলে আসার ঘটনাও নতুন নয়। এই নিয়ে কট্টর নারীবাদীরা অনেক বাগবিতণ্ডা করেছেন। কিন্তু সে সব গায়ে মাখতে নারাজ সনাতনী ধ্যানধারণা আঁকড়ে বসে থাকা মানুষরা। তাঁদের কাছে, বাড়িতে কার্তিক ফেলা মানেই পুত্রসন্তানের প্রার্থনা। এই ধারণাকে গোড়া থেকে উপড়ে ফেলতেই অভিনব এক উদ্যোগ নিয়েছেন বর্ধমান শহরের যুবক জয় ভট্টাচার্য ও তাঁর বন্ধুরা।
পূর্ব বর্ধমানের বাজেপ্রতাপপুর এলাকার তিনটি বাড়িতে এবছর দেবসেনাপতি কার্তিকের সঙ্গে রেখে আসা হয়েছে লক্ষ্ণীকেও। জয় ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, নবদম্পতিদের বাড়িতে কার্তিক রেখে আসা হয় সন্তান লাভের আশায়। কিন্তু অনেকে মনে করেন, কার্তিক মানে শুধুই পুত্রসন্তান। যখন বাড়ির গুরুজনরা নববধূ আশীর্বাদ করে, তখন আশিস দেন ‘শতপুত্রের জননী হও’। কেউ বলে না, ‘তোমার মেয়ে হোক’। আর এখানেই আপত্তি জয়ের মতো ছেলেদের। তিনি বলেন, “পুত্র ও কন্যা, দু’জনকেই তো আমরা সমানভাবে গ্রহণ করেত পারি। সেরকম আহ্বানও করতে পারি। এবছর আমার তিনটি বন্ধুর বিয়ে হয়েছে। তিনজনের বাড়িতেই আমরা কার্তিক ঠাকুর ও লক্ষ্মী ঠাকুর ফেলেছি। পুত্র বা কন্যাসন্তান, যাই হোক না কেন, যেন সুস্থ হয়, এই কামনাই করি।”
[ আরও পড়ুন: পাখির চোখ উপনির্বাচন, নিজে গান বেঁধে কালিয়াগঞ্জে প্রচার মন্ত্রী রাজীবের ]
যাঁদের বাড়িতে কার্তিক ও লক্ষ্মী ফেলা হয়েছে, তাঁরা কী বলছেন? নবদম্পতি সৌমেন ও অঙ্কিতা সিংহরায় জানালেন, এতদিন শুধু কার্তিকই আসতেন। তাঁকেই নবদম্পতির দোরগোড়ায় বসিয়ে যেত শুভাকাঙ্খীরা। কিন্তু এই প্রথমবার কার্তিকের সঙ্গে এলেন লক্ষ্মীও। “দু’জনকেই আমরা ঘরে তুলেছি। ভবিষ্যতে কার্তিক বা লক্ষ্মী, কোল আলো করে যাই আসুক, সে যেন সুস্থ থাকে, এই প্রার্থনা করছি।” বলেন সৌমেন ও অঙ্কিতা।
[ আরও পড়ুন: এলাকা দখল নিয়ে দুই কিন্নর গোষ্ঠীর সংঘর্ষ, ধারালো অস্ত্রের ঘায়ে গুরুতর জখম ১ ]
কার্যত এবছর কার্তিক পুজোয় পূর্ব বর্ধমানের বাজেপ্রতাপপুরের এই পরিবার বার্তা দিল পুত্রসন্তানের মতো কন্যাসন্তানেরও সমান গুরুত্ব রয়েছে। মেয়ে বলে বিদ্রুপ নয়, বরং দাদা বা ভাইয়ের মতো তারও সমান ভালবাসা প্রাপ্য, এটাই যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই পরিবার।
The post কার্তিকের সঙ্গে লক্ষ্মীও আসুক ঘরে, লিঙ্গবৈষম্য ভোলাতে বন্ধুর দুয়ারে ফেলা হল জোড়া দেবমূর্তি appeared first on Sangbad Pratidin.
