সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: মর্জি হলেই রাস্তার উপরে বসে পড়ত। আর একবার বসে পড়লে তাঁকে নড়ানোর সাধ্য কারও ছিল না। হর্ন বাজালেও বা কে শুনছে? নীল বাতির গাড়িকে পর্যন্ত ভ্রুক্ষেপ করত না পুরুলিয়ার রাস্তায় বসে থাকা গরুগুলি। তাদের উপদ্রবে অতীষ্ট হয়ে উঠেছিলেন নিত্যযাত্রীরা। প্রায়দিনই ট্রাফিক পুলিশকে গরুর গায়ে জল ছেটাতে হত। যাতে তারা উঠে রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ায়। আর গাড়ি যাওয়ার সুযোগ পায়। তবে রোজ রোজ তো আর এভাবে জল ছিটিয়ে যানজটের সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়। তাই দাবিদারহীন বা মালিকহীন গরুদের গাড়িতে চাপিয়ে গো-শালায় পুনর্বাসনে পাঠানো শুরু করল পুরুলিয়া পুরসভা (Purulia Municipality)।
মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে পুরুলিয়া পুরসভার সঙ্গী হয়েছে পুরুলিয়া সদর থানা-সহ ওই থানার ট্রাফিক বিভাগও। পুরুলিয়া সদর থানা এলাকা থেকে ভিক্টোরিয়া স্কুল মোড় পর্যন্ত এ দিনের অভিযানে মোট ন’টি গরুকে শহর পুরুলিয়ার অলঙ্গিডাঙ্গা মোড়ের গো-শালায় পাঠাচ্ছে পুরসভা। দাবিদারহীন বা মালিকহীন গরুদের বাগে আনতে কম কাঠ-খড় পোড়াতে হয়নি। কালঘাম ছুটে গিয়েছে পুরসভার কর্মীদের।
এক গরুকে দড়ি বেঁধে ধরে নিয়ে আসা হচ্ছে তো, আরেক গরু দড়ি বাঁধা অবস্থাতেই টানা হ্যাঁচড়া করে লেজ তুলে দৌড়ে পালাচ্ছে। ব্যস্ততম শহরের রাস্তায় ওই ‘বেয়াড়া’ গরুদের পুরসভার গাড়িতে তুলতে যেমন পুরসভার অস্থায়ী কর্মীরা ছুটেছেন, তেমনই ছুট লাগাতে হয় ট্রাফিক বিভাগের পুলিশকর্মীদের। এই বিভাগের ওসি গোপিকাসুন্দর দত্ত তো নিজে এই কাজে হাত লাগান। তবে এদিনের অভিযানে ওই ‘গো-মাতা’দের গাড়িতে তুলতে জনবহুল রাস্তায় যেভাবে ঝুঁকি নিতে হয়। তাতে অভিযানের সময় বদলানোর কথা চিন্তা ভাবনা করছে ট্রাফিক বিভাগ। ফলে বুধবার থেকে রাতের বেলায় পরবর্তী অভিযানের কথা ভাবা হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: শিলিগুড়িতে আবর্জনার স্তূপ থেকে উদ্ধার কয়েকশো Aadhaar Card! প্রশ্নের মুখে আমজনতার নিরাপত্তা]
পুরুলিয়া পুরসভার প্রশাসক মৃগাঙ্ক মাহাতো বলেন, “দাবিদারহীন বা মালিকহীন গরুকে আমরা গো-শালায় পাঠানোর কাজ শুরু করলাম। যানজট রুখতেই আমাদের এই পদক্ষেপ।” উল্লেখ্য, গত দু-তিন মাসে পুরুলিয়া শহরে এই দাবিদারহীন বা মালিকহীন গরুদের নিয়ে ব্যাপক সমস্যায় পড়েছে ট্রাফিক পুলিশ। গরুর দল শহরের বিভিন্ন রাস্তায় যেখানে সেখানে বসে পড়ায় অবরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে সড়ক। যানজটের ফাঁসে আটকে পড়ছেন নিত্যযাত্রীরা।
পুরুলিয়া সদর থানার ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, এইরকম দাবিদারহীন বা মালিকহীন গরুর সংখ্যা এই শহরে প্রায় ২০০। এর মধ্যে অনেকের আবার মালিক রয়েছে। তা সত্ত্বেও রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। যেখানে-সেখানে গরু ছেড়ে রাখা মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও এই পদক্ষেপ বলে জানা গিয়েছে। পরবর্তীকালে কেউ ওই গরুগুলির মালিকানার দাবি করেন, গো-শালায় রেখে পরিচর্যার খরচ তাঁদের কাছ থেকে নেওয়া হবে। তবে গো-শালায় পাঠানো এই সমস্ত গরুর আপাতত সব খরচ বহন করবে পুরুলিয়া পুরসভা-ই। কোন গরুর মালিকের হদিশ যদি না পাওয়া যায় তাহলে সেই গরুর জীবনভর পরিচর্যার খরচ বহন করে যাবে পুরুলিয়া পুরসভা ও গো-শালা কর্তৃপক্ষ। গো-শালা কর্তৃপক্ষের তরফে শ্রাবণকুমার শর্মা বলেন, “আমরা ১২৩ বছর ধরে গো-মাতার সেবা করছি। শহর পুরুলিয়ায় যে দাবিদারহীন বা মালিকহীন গরু ঘুরে বেড়াচ্ছে আমরা পুরসভার সহযোগিতায় তাদের পরিচর্যার কাজ করব।”
ছবি ও ভিডিও – সুনিতা সিং