মণিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: চোখের সামনে দাউদাউ আগুনে পুড়ে মারা গেলেন চারজন। আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও ভিতরে ঢুকতে পারা যায়নি। এই ঘটনার পরে অবশেষে বাড়ি ফিরলেন মৃত দুধকুমার দলুইয়ের ছেলে সঞ্জু। সোমবার রাত তিনটে নাগাদ সরাসরি উলুবেড়িয়ার (Uluberia) বাউড়িয়ায় আসেন তিনি। সেখানেই শেষকৃত্য হয় পরিবারের সকলের। বিস্ফোরক সঞ্জু উড়িয়ে দিচ্ছেন না ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনা। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর কথা ভাবছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিন সঞ্জু বলেন, "মায়ের সঙ্গে রোজই কথা হতো। রবিবার সন্ধ্যায় কথা হয়েছিল। বেশিক্ষণ কথা হয়নি ব্যস্ত ছিলাম বলে। তারপর ভোরের ছোট মাসি এই দুর্ঘটনার কথা জানান। কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না কি করব।" তিনি আরও বলেন বাবার অবস্থা রোজগার বেশি না হওয়ায় পাকা বাড়ি করতে পারেননি তিনি। দ্রুত পাকা বাড়ি করে মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাতে, ছোট বয়সেই কাজে চলে যান তিনি। রোজগার থেকে বাবা-মার কাছে অল্প অল্প করে টাকা পাঠাতেন সঞ্জু।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বাড়ির জন্য কিছু মাল কিনেছিলেন সঞ্জুর বাবা। সঞ্জু বলেন, "যাদের মুখে হাসি ফোটাতে এই পরিশ্রম করছিলাম, তারাই চলে গেল। আর কি করব। যাইহোক, তবুও তো মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে হবে। সেটাই করব ধীরে ধীরে।" সঞ্জু জানিয়ে দিয়েছেন এরপরে আর বাইরে কাজে যাবেন না। কলকাতা বা আশপাশেই কাজ করার ইচ্ছা তাঁর।
তিনি জানিয়েছেন জমিকে কেন্দ্র করে কেউ তার বাবা-মাকে হুমকি দিত। তাই এটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি এর পিছনে কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে তা নিয়ে পুলিশি তদন্তের দাবি করেন সঞ্জু। থানায় লিখিত অভিযোগ করার কথা ভাবছেন বলেও জানান তিনি। এদিন ঘটনাস্থলে স্থানীয় তৃণমূল নেতা প্রণব মেটে। তিনি বলেন, "আমি ওদের সঙ্গে কথা বলেছি। ওদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছি। বলেছি যে কোনও সমস্যায় যেন আমার কাছে আসেন। দলের তরফ থেকে বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব ততটা ওদের জন্য করা হবে।"
রবিবার রাত ১২টার পর ওই বাড়িতে আগুন লেগেছিল বলে খবর। দুধকুমারের জ্যাঠতুতো দাদার বাড়ি ওই বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ ফুট দূরে। রাতে শৌচকার্য করার জন্য তিনি বাইরে বেরিয়েছিলেন। তখনই ওই আগুন দেখে আশপাশের মানুষজনকে খবর দেন। গতকাল গঙ্গাপুজো উপলক্ষে রাতে সাঁওড়িয়া বিশালক্ষীতলায় একটি অনুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠান দেখতে গ্রামের বেশিরভাগ লোকই সেখানে ছিলেন। হাতে গোনা কিছু মানুষই নিজেদের বাড়িতে ছিলেন। আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন সকলে। স্থানীয়রা প্রথমে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছিলেন। দমকল ও পুলিশকেও খবর দেওয়া হয়।
