বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: ভাঙারাসের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার বৈচিত্রময়তা, অভিনব আলোকসজ্জা, সমাজ সচেতনতার উপর দৃষ্টিনন্দন মডেল, বিভিন্ন ধরনের বাজনা মিলিয়ে রবিবার শান্তিপুরের শোভাযাত্রা বর্ণময় হয়ে উঠেছিল। তা ছড়িয়ে গিয়েছিল এ রাজ্যের বাইরেও। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা তো বটেই, ভিনরাজ্যে এমনকী বিদেশে বসেও প্রবাসী বাঙালিরা শান্তিপুরের ঐতিহ্যবাহী ভাঙারাসের শোভাযাত্রার শরিক হয়েছেন। মনোমুগ্ধকর শোভাযাত্রা দেখে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়ালে পোস্ট দিয়েছেন। যদিও এত বৈচিত্রের মধ্যেই কিছুটা তাল কাটল চটুল গানের সুরে স্বল্পবসনা মেয়েদের কোমর দোলানো নাচ দেখে। এমন নাচে অনেকেই ভ্রু কুঁচকিয়েছেন। তাঁদের মতে, “এত বছরের মধ্যে এই প্রথম তাঁরা এমন অশালীন নাচ দেখলেন। চটুল গানের সুরে স্বল্পবসনা মেয়েদের কোমর দোলানো ওই নাচ শোভাযাত্রায় রাখা মোটেই ঠিক হয়নি। এইসব নাচ থাকলে শান্তিপুরের ভাঙা রাসের ঐতিহ্য আগামিদিনে কালিমালিপ্ত হবে। তাই এখন থেকেই সাবধান হওয়া উচিত।” রবিবার সন্ধ্যা ছ’টা থেকেই শুরু হয়ে যায় ভাঙারাসের শোভাযাত্রা। রাইরাজা-সহ বিভিন্ন মডেলের মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলাকে তুলে ধরে বিগ্রহবাড়িগুলির আয়োজিত শোভাযাত্রা ছিল সত্যিই মনোমুগ্ধকর।
[পরকীয়ায় আর আগ্রহ নেই গৃহবধূর, অন্তরঙ্গ ছবি ভাইরালের হুমকি যুবকের]
এবারে ১৭টি বিগ্রহবাড়ি অংশ নিয়েছিল শোভাযাত্রায়। রাত সাড়ে আটটা অবধি চলার পর শুরু হয় বারোয়ারিগুলির শোভাযাত্রা। চন্দননগরের রংবেরংয়ের আলোর অভিনব কেরামতি দেখে চোখ ফেরাতে পারেননি মানুষ। সূদুর মিশর থেকে আসা একজন শিল্পীর সারা শরীরে আলোর খেলা দেখেছেন মানুষ। অন্যান্য বাজনার পাশাপাশি আদিবাসীদের বিরাট বিরাট ডমরুর তালে তালে গমগম করে উঠেছিল নতুনপাড়া বারোয়ারির শোভাযাত্রা। শান্তিপুর পুরসভার সাইটে অভিনব এই শোভাযাত্রা দেখে রাজ্য, এমনকী বিদেশ থেকেও মানুষ তাঁদের কমেন্ট পাঠিয়েছেন বলে জানালেন পুরসভার চেয়ারম্যান অজয় দে। তিনি জানিয়েছেন, “এবারের শোভাযাত্রায় নতুন রূপের আলো, বাজনা, মডেল দেখে মালয়েশিয়া, গুজরাট, দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ জানিয়েছেন তাঁদের ভালোলাগার কথা। স্বচক্ষে দেখতে এবার শান্তিপুরেও মানুষের ব্যাপক ভিড় হয়েছিল। যদিও রাত প্রায় সাড়ে তিনটে অবধি শোভাযাত্রা চললেও কোথাও এতটুকু কোনও গন্ডগোল হয়নি। শান্তিতেই মিটেছে।”
[কুকুর-বিড়ালের মাংস ভাগাড় থেকে হোটেলে পাচার! মধ্যমগ্রামে চাঞ্চল্য]
অবশ্য আলোর বৈচিত্রময়তা, অভিনব মডেল, বাজনার মধ্যেই কোনও এক বারোয়ারি কেন যে স্বল্পবসনা মেয়েদের চটুল গানের সুরে অশালীন নাচ রাখল, সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না অনেকে। ট্র্যাকটরের পিছনে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে চলন্ত গাড়িতে ছিল সেই নাচ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, “চলন্ত সেই মঞ্চে আলো আঁধারিতে কোমর দুলিয়ে উদ্দাম নাচছে তিনটি মেয়ে। তাদের শরীরের ঊর্ধ্বাঙ্গ বেশ কিছুটা খোলা। পরনের বসন নেহাতই ছোট। বক্সে বাজছে ভোজপুরি ঢঙের চটুল গান। কোমর দুলিয়ে নাচছে স্বল্পবসনারা। তাদের দেখে যুবকদের ভিড় জমে গিয়েছে। তারাও নাচছে। আর মাঝেমধ্যেই নাচতে নাচতে ছুড়ে দিচ্ছে কিছু। কোথাও গাড়ি দাঁড়াতেই বেড়েছে ভিড়।” ওয়াকিবহাল মহলের মতে, “শান্তিপুরের রাসের শোভাযাত্রায় এই ধরনের অশালীন নাচ রাখা ঠিক হয়নি। রাসযাত্রীদের কাছে অন্যরকম বার্তা পৌঁছবে। ইদানীং কোনও কোনও এলাকায় এই ধরনের নাচ করা হচ্ছে। এসব অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার। শান্তিপুরের রাসে চটুল গানের সুরে অশালীন নাচ একেবারেই সমর্থনযোগ্য নয়।”
এবার প্রায় ত্রিশটি বারোয়ারি অংশ নিয়েছিল এই শোভাযাত্রায়। তার মধ্যে কোনও এক বারোয়ারির শোভাযাত্রায় দেখা গিয়েছে এই অশালীন নাচের প্রদর্শন। যদিও এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে শান্তিপুর পুরসভার চেয়ারম্যান অজয় দে বলেছেন, “আসলে শোভাযাত্রার অনুমতি নেওয়ার সময় তো কে কী করবে, ওইভাবে কিছু বলে না। আমাদের বলা থাকে, শোভাযাত্রায় মডেল, লাইটের যাই উচ্চতা থাকবে তা যেন থাকে আঠারো ফুট ও চওড়া আট ফুটের মধ্যে। ডাকঘরের মতো কিছু কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় সময়ের মধ্যে উঠতে হবে। কে চটুল সুরে নাচ বা কী করল, সেটা বারোয়ারির ব্যাপার। সেটা ওরাই বলতে পারবে।” যদিও শান্তিপুরের গণ্যমান্য অনেকেরই মতে, এই ধরনের নাচ নিয়ন্ত্রণ না করলে আগামিদিনে এর প্রবণতা বাড়তে পারে।
[ব্যাগে বুলেট নিয়ে কেজরিওয়ালের অফিসে যুবক! কী হল তারপর?]
