shono
Advertisement

বাধা হয়নি রাজনীতি, তিন দলের হয়ে লড়েও সম্পর্ক অমলিন পরিবারের তিন প্রার্থীর

করিমপুর এক নম্বর ব্লকের হোগলবেড়িয়া থানার চরমেঘনার বাসিন্দা এই তিন প্রমীলা।
Posted: 03:07 PM May 15, 2018Updated: 03:22 PM May 15, 2018

পলাশ পাত্র, তেহট্ট: রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটে হিংসা নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, তখন সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে চরমেঘনায় ধরা পড়ল অন্য মেজাজ। কোথায় কী অশান্তি চলছে বা ভোট ব্যাংকের পাল্লা ভারী কোনদিকে, সে সবের কোনও কিছুতেই নেই তাঁরা। দলীয় প্রার্থী হয়েও সবুজ, গেরুয়া, লাল কোনও রঙেই নেই। তাঁরা আছেন খাঁচাবন্দি জীবনের যন্ত্রণা নিয়ে। তাই গ্রামের উন্নয়নের আশায় তিন প্রার্থী লড়াইয়ে ব্রতী হয়েছেন। তিনজনই অবশ্য আত্মীয়। বুলুরানি, সুমিত্রা ও অর্চনা মণ্ডল।

Advertisement

করিমপুর এক নম্বর ব্লকের হোগলবেড়িয়া থানার চরমেঘনার বাসিন্দা এই তিন প্রমীলা। পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী হতে করিমপুরে মনোনয়ন দাখিল করতে এক সঙ্গেই গিয়েছিলেন তাঁরা। তৃণমূল প্রার্থী হয়ে লড়েছেন বছর পঁয়ত্রিশের বুলুরানি। তাঁর কাকিমা অর্চনা হয়েছেন সিপিএম প্রার্থী। বুলুরানির দিদির বাড়ির তরফে আত্মীয় সুমিত্রা মণ্ডল। তিনি বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর বাড়ি বুলুরানির বাড়ির পাশেই। এই ২০২ নম্বর বুথের  চরমেঘনায় ভোটার রয়েছেন ৫৪৭ জন। ভোটের দিন সকাল থেকে উৎসবের মেজাজে নারী-পুরুষ ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছেন।গতকাল বিকেল পর্যন্ত যা খবর, তাতে ৪২০ জন ভোট দিয়েছেন।

[ নির্দল কাঁটায় বিদ্ধ তৃণমূল, বিরোধিতা করে জিতলেও দলে না ফেরানোর সিদ্ধান্ত মমতার ]

মাথাভাঙা নদীর অবস্থান চরমেঘনাকে ওপারে ফেলে দিয়েছে। কাঁটাতারের এপারে ভারত। ওপারে বাংলাদেশ। এখানকার বাসিন্দাদের ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, প্যান কার্ড রয়েছে। গোটা গ্রামেই হিন্দুদের বাস। একটি প্রাথমিক স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি স্কুলও রয়েছে। সকাল ছটা থেকে বিকেল ছটা পর্যন্ত চরমেঘনার গেট খোলা থাকে। এক হাজারের  বেশি মানুষের বাস  চরমেঘনায়। বাসিন্দারা কাঁটাতারের জন্য একপ্রকার খাঁচাবন্দি অবস্থাতেই থাকেন। কৃষিপ্রধান এই এলাকার মানুষের সমস্যা একাধিক। সেই সমস্যা সমাধানেই এগিয়ে এসেছে প্রমীলা বাহিনী। পঞ্চায়েত স্তরে সমস্যা নিরসনের জন্য প্রার্থী হওয়া এই তিন গৃহবধূর মধ্যে কোনও বিবাদ নেই। তা সে রাজনৈতিক হোক বা পারিবারিক। এসব কিছু না থাকলেও মণ্ডল জ্ঞাতিকুলের মধ্যে তিন প্রার্থী অবশ্য জেতার বিষয়ে আশাবাদী। বুলুরানি মণ্ডল বলেন, “আমার কাকা এতদিন সিপিএমের সদস্য ছিলেন। এবার মহিলা আসন হওয়ায় কাকিমা দাঁড়িয়েছেন। তাও আমি আমার কাকার বাড়ি দিন দুই আগেই গিয়েছিলাম। আশীর্বাদ চাইতে। কাকিমাও দাঁড়িয়েছে। তাও বললাম, আমি তো তোমার মেয়ে। হাসতে হাসতে বললাম, মেয়েকে ভোটটা দিও।  আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা করি। উনি কাজ করেছেন। তাই আমি জিতবই।”

[ নির্দল কাঁটায় বিদ্ধ তৃণমূল, বিরোধিতা করে জিতলেও দলে না ফেরানোর সিদ্ধান্ত মমতার ]

বুলুরানির পাশেই বাড়ি বিজেপি প্রার্থী সুমিত্রার। দিদির বাড়ির তরফ থেকে আত্মীয়।  কথাবার্তা সবই আছে। কোনও বিবাদ নেই। এদিন দুপুরে তিন প্রার্থী একসঙ্গে বসে মুড়ি, চানাচুর খেয়েছেন। বছর পঁচিশের বিজেপি প্রার্থী সুমিত্রা মণ্ডলের বুলুরানি মণ্ডল সম্পর্কে মাসি হয়। সুমিত্রা বলেন, “আমাদের দারুণ সম্পর্ক। দুপুরেও একসঙ্গে মুড়ি খেয়েছি। ভোটে দাঁড়িয়েছি বলে সম্পর্ক খারাপ হবে কেন? ভোটে যে জিতবে জিতবে। আমিও জেতার ব্যাপারে আশাবাদী।”  হোগলবেড়িয়া পঞ্চায়েতের দীর্ঘদিনের সিপিএম সদস্য বুদ্ধদেব মণ্ডলের স্ত্রী বছর পঞ্চাশের অর্চনা মণ্ডলও  প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাদের গ্রামের মানুষ নিয়ে কোন ঝুট-ঝামেলা নেই। আমরা যাঁরা ভোটে দাঁড়িয়েছি তাঁদের মধ্যেও কোন ঝগড়া নেই। ভোটের দিন তাই একসঙ্গেই আমরা ছিলাম। পাশাপাশি বসে একসঙ্গে খেলাম। যে যাকে ইচ্ছে ভোট দেবে। এ নিয়ে অশান্তি নেই।”

গ্রামে ভোট এলেই নেতারা আসে। হাজার প্রতিশ্রুতি দেয়। ভোট মিটতেই চরমেঘনাবাসী যে তিমিরে ছিল সেখানেই থেকে যায়। এই নিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে কম বেশি ক্ষোভ রয়েছে। এই ক্ষোভ নিরসন করতে তাঁরা  তিনজনই গ্রামের উন্নয়নের বিষয়ে একমত।  পানীয় জল, নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি থেকে কাঁটাতারের জীবন থেকে মুক্তি পাওয়া নিয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তিন প্রমীলা। ভোটে যেই জিতুক, উন্নয়নের বিষয়ে আশাবাদী তিনজনেই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement