নব্যেন্দু হাজরা: ‘টুম্পা’কে নিয়ে ব্রিগেড যাওয়ার হাতছানিতে লাভ হয়নি। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কিংবা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কখনও আলিমুদ্দিনে আসেননি! কিন্তু তাঁদের বর্ণপরিচয় কিংবা সহজপাঠকে লাল রঙে চুবিয়ে কমিউনিজমের শিক্ষা ছড়াতে গিয়েও ধাক্কা খেতে হয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে কাছে টানতে গান-গল্পের প্রভাব রাস্তায় কিংবা ভোটবাক্সে না পড়ায় তাই বাকি ছিল শুধু বোধহয় এটাই। কমরেডরা এখন বাইশ লাখি গাড়ি চড়তেও দ্বিধাবোধ করেন না আর কাঁধে করে লাল পতাকা ধরে বিপ্লবের স্লোগানও তোলেন না। তার চাইতে টি-শার্টেই ‘বিপ্লব’-এর বুলি আওড়াতে বেশি স্বচ্ছন্দ নয়া প্রজন্মের কমরেডরা।
কোথাও সেখানে বদলের ডাকের স্লোগান। কোথাও আবার লেনিনের ছবি আঁকা বিপ্লবের কথা লেখা। কমরেডদের গায়ে তা চড়াতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ইউথ উইথ সিপিএম’ গ্রুপে টি-শার্টের মেলা। নববর্ষ উপলক্ষে ওই গ্রুপেই হরেক টি-শার্টের ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন সৈকত মণ্ডল। চৈত্র সেলের অফারে যার দাম ছিল ২৫০ টাকা। সৈকত জানান, চাহিদাও বেশ ভালই। যাদবপুরের দিকে প্রচুর বিকিয়েছে। চাহিদা ভাল উত্তরবঙ্গেও। ক্যাশ অন ডেলিভারির ব্যবস্থাও করেছিলেন তিনি। তবে তাঁর জন্য ৫০ টাকা বাড়তি।
[আরও পড়ুন: পয়লা বৈশাখেই বড়দিনের খবর, এবারের ক্রিসমাসে আসছে দেবের ‘প্রধান’!]
বামেদের নয়া প্রজন্মের এক কমরেডের কথায়, আসলে বদল তো আনতেই হবে। বামপন্থী নেতা বলতে মানুষ কেন শুধু ধুতি-পাঞ্জাবি পরা এক বয়স্ক লোককে বুঝবেন! ট্রেন্ডি টি-শার্ট পরা ছেলেও যে বামপন্থী নেতা হতে পারে তা বোঝাতেই আমরা যে কোনও মিছিল-মিটিংয়ে এই ধরনের গেঞ্জি পরে যাচ্ছি। এই ধরনের টি-শার্ট পরে রাস্তায় বেরোলে মানুষের মনে যদি জায়গা পাওয়া যায়, তা হলে ক্ষতি কী!
সৈকত ডোমজুড়ের বেগড়ি অঞ্চলের ডিওয়াইএফআইয়ের লোকাল ইউনিটের সভাপতি। বলেন, ‘‘২০১৩ সাল থেকে এসএফআই করি। আমি নিজেই স্লোগান লিখে টি-শার্ট বানাই। শুধু এই বামপন্থী টি-শার্টই আমি বিক্রি করি। কমরেডদের কাছে চাহিদাও ভাল। পুজোতেও ব্যাপক বিকিয়েছে। ভোটের আগে ত্রিপুরাতেও প্রচুর টি-শার্ট গিয়েছে। অন্তত ১০টা বিধানসভায়।’’ তাঁর বানানো এই গেঞ্জি পার্টির ফেসবুক পেজে বিক্রির জন্য যে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, তাতে পার্টির অনুমোদন নেওয়া হয়েছে! সৈকত জানান, এতে পার্টি থেকে পারমিশানের কোনও ব্যাপার নেই। কতজন তো কতকিছুই পোস্ট করে গ্রুপে। পুজোয় যেমন বইয়ের স্টল থাকে জনসংযোগের জন্য তেমনই নতুন প্রজন্ম যদি আকর্ষিত হয়ে দলে আসে, তাহলে ক্ষতি কী!–মন্তব্য এসএফআইয়ের এক নেতার।