shono
Advertisement

শতাধিক বাংলা ছবির ভিড়ে বুদ্ধির সিনেমা ‘তারিখ’

কেমন হল চূর্ণী গঙ্গোপাধ্য়ায়ের 'তারিখ'। সিনেমা হলে যাওয়ার আগে জেনে নিন। The post শতাধিক বাংলা ছবির ভিড়ে বুদ্ধির সিনেমা ‘তারিখ’ appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 03:01 PM Apr 13, 2019Updated: 03:01 PM Apr 13, 2019

নির্মল ধর: সাহিত্য আর সিনেমার আন্তর্সম্পর্ক নিয়ে তক্কো চলছে সেই রবি ঠাকুরের সময় থেকে। আমরা যতই গোঁদার-তারকোভস্কি চর্চা করিনা কেন, বাংলা সিনেমার সংখ্যাগুরু দর্শক একটি নির্ভেজাল ‘গপ্পো’ দেখতে এখনও হলে ঢোকেন। এই সত্যটি স্বীকার করেছেন সত্যজিৎ রায়ও। কিন্তু সাহিত্যকে সিনেমার ভাষায় অনুকৃতি করতে হলে ছবি মাধ্যমের প্রতিই আস্থা ও ক্ষমতা থাকা একজন সিনেমা পরিচালকের কাছে জরুরি। কথাগুলো মনে এল চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন (দ্বিতীয়) ছবি ‘তারিখ’ দেখতে দেখতে।

Advertisement

কাহিনি তাঁর নিজস্ব। চিত্রনাট্যও সাজিয়েছেন তিনি। এক মুক্তমনা-স্বাধীন চিন্তার অধ্যাপকের (অরিন্দম) পেশাগত জীবনের ঝক্কি এবং ব্যক্তিগত জীবন ও সম্পর্কের বহুতলিক অবস্থানকে চূর্ণী সাজিয়েছেন ফেসবুক-এর ফর্মাটে। ফলে ফেসবুকে পাঠানো এবং পাওয়া পোস্টের মতো আগু-পিছু হয়ে ঘটনা পরম্পরা পর্দায় এসেছে ‘তারিখ’ সূত্র ধরেই। চূর্ণী এমন চিত্রনাট্যের পরিকল্পনার মধ্যে অনায়াসে সাহিত্যের গুণগুলিও ঢুকিয়ে দিতে পেরেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীর যৌনহেনস্তা নিয়ে তিনি যেমন প্রতিবাদ করতে পারেন, তেমনটি করে উঠতে পারেন না স্ত্রীর (ইরা) সঙ্গে বাল্যবন্ধুর (রুদ্র) ঘনিষ্ঠতা নিয়ে। সেখানে অনেক সময়েই তাঁকে ‘ইনসাফারেবল এসকেপিস্ট’ হয়ে থাকতে হয়। অনির্বাণ ইরা-রুদ্রর সম্পর্কের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদলের আন্দোলনকেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে চিত্রনাট্যে।

[আরও পড়ুন: এক আত্মবিশ্বাসহীন মেয়ের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প ‘সোয়েটার’]

ধারাবাহিকভাবে ‘গপ্পো’ বলেননি চূর্ণী। তিনি ন্যারেটিভকে ভেঙে একাধিকবার অতীত ও বর্তমানকে পাশাপাশি জায়গা করে দিয়েছেন। ফলে, তারিখ হয়ে উঠেছে বুদ্ধিমানের সিনেমা এবং গল্পের দিক থেকে অনুভবের, উপলব্ধির, অনুভূতির। যার মধ্যে বুনে দেওয়া হয়েছে প্রেম-বন্ধুত্ব-ঈর্ষা-সহমর্মিতা। সিনেমার সিনট্যাক্স ব্যবহার করে এমন সাহিত্যধর্মী ছবি অনেকদিন পর দেখবে দর্শক। ২০১৫ থেকে ২০১৮ অর্থাৎ তিন বছর ধরে ছড়ানো কাহিনির চরিত্র ও ঘটনা। অনির্বাণের এক জন্মদিন থেকে তাঁর তৃতীয় জন্মদিন পর্যন্ত তাঁর বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা উপলক্ষে লন্ডন ভ্রমণ, সেখানে এক বিদেশিনীর (জর্জিনা) সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব’ হওয়া, তাঁর পারিবারিক পরিমন্ডল, রুদ্র- মেয়ে নীহারিকার জন্মদিন পালন, তাঁদের বিবাহবার্ষিকী, এমনকী দুটি দোলের চিত্রও এসেছে। এক দোলের সন্ধ্যায় তো ইরা-অনির্বাণ-রুদ্র ওপেন কনফেশনে স্পষ্ট হয়ে যায় পারস্পারিক অবস্থানগুলোও।

শেষপর্যন্ত অবশ্য ‘তারিখ’ শুধু আর এই তিন জনের গল্প থাকে না। অনির্বাণের আদর্শ, মূল্যবোধ ও চেতনায় উদ্বুগ্ধ হয়ে ছাত্র-ছাত্রী দল ‘লাল’ (রক্তিম) রংয়ের জয় পতাকা ওড়ানোর উদ্দেশ্য়ে মিছিল করে। ছবির এমন সমাপ্তিই বুঝিয়ে দেয় পরিচালকের সামাজিক ও নৈতিক অবস্থানটি কোথায়! এখনকার প্রায় ক্লীব পরিবেশের মধ্যে দাঁড়িয়েও চূর্ণী স্থান্যচ্যূত হন না। মাথা উঁচু করে থাকেন। থাকে ‘তারিখ’ ছবিটিও শতাধিক বাংলা ছবির ভিড়ে অন্যতম ‘মুখ’ নিয়ে, মুখোশের আড়ালে নয়।

[আরও পড়ুন:  রহস্যে মোড়া ‘বসু পরিবার’-এর অন্দরমহল, জানতে একবার ঢুঁ মারতেই পারেন]

টেকনিকাল বিভাগের (ফটোগ্রাফি, সম্পাদনা, শিল্প নির্দেশনা) চোখে পড়ার মতো ত্রুটি নেই। যেমন ত্রুটিহীন প্রধান তিন শিল্পীর অভিনয়। অনির্বাণ হয়ে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় একেবারেই ‘অভিনয়’ করেননি। একে রক্তমাংসের মানুষই মনে হয়েছে। ইরার চরিত্রে রাইমা সেন প্রেমে-অভিমানে-দুঃখে সমান স্বচ্ছন্দ। রুদ্র হিসেবে ঋত্বিক চক্রবর্তী আবারও চমক। কী শান্ত অথচ গভীর তাঁর দৃষ্টি। অন্তর্যন্ত্রণা ক্লোজআপগুলোয় ভয়ংকর স্পষ্ট। ছোট্ট দুটি চরিত্রে জুন মালিয়া ও কৌশিক এবং দুই মায়ের চরিত্রে অনুসূয়া মজুমদার ও অলোকানন্দা রায়ও যোগ্য সহযোগিতা করেছেন। চূর্ণীর এই ছবি হয়তো বক্স অফিসে ঝড় তুলবে না, কিন্তু রসিক সিনেমা দর্শকের কাছে সম্মান দাবি করবে।

The post শতাধিক বাংলা ছবির ভিড়ে বুদ্ধির সিনেমা ‘তারিখ’ appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement