সম্প্রতি একটি ফ্যাশন শোয়ে যোগ দিতে শহরে এসেছিলেন ঈশান খট্টর। তাঁর অভিনীত 'হোমবাউন্ড' এবারের অস্কারের শর্টলিস্টে। ঈশানের অভিনয় জীবনের আশ্চর্য উড়ান এবং অস্কার সম্ভাবনা নিয়ে কথা বললেন শম্পালী মৌলিক।
কেমন লাগছে এই শহরে?
- হাওড়া ব্রিজের ব্যাকগ্রাউন্ডে প্রকৃতির মধ্যে এই শো দারুণ লাগছে। সব সময় কলকাতাকে ভালোবাসি। 'ধড়ক'-এর শুটিং এখানে করেছি, তার স্মৃতি আছে। এছাড়া তেরো বছর বয়সে এখানে এসেছি মায়ের সঙ্গে। ক্লাসিক্যাল মিউজিক শুনতাম খুব ওই সময়। এখানকার খাবার খুব পছন্দ। আবার এখানে ফিরে শুটিং করতে চাই। আমার ভালো লাগে এখানে মানুষজন শিল্পমনস্ক। কিছুটা লেড ব্যাক এবং দুপুরে খাবার পরে এখানে অনেকেই একটু ঘুম পছন্দ করেন, যেটা দারুণ লাগে (হাসি)।
আপনার কলকাতা কানেকশন?
- আমার বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব রয়েছে এখানে। প্রিয়াংকা ঘোষ, 'দ্য রয়্যালস'-এর কিছু পর্ব পরিচালনা করেছিলেন। কলকাতার মানুষ। এটা আমার বড় কলকাতা যোগ। প্রায়ই ওর বাড়িতে যেতাম মাছের কিছু না কিছু পদ খেতে। আর ভালো লাগে বেগুনভাজা, নলেন গুড়ের আইসক্রিম এরকম।
ইতিমধ্যে আপনার অভিনীত ছবি ‘হোমবাউন্ড’ ২৬তম অস্কার্সের শর্টলিস্টে জায়গা করে নিয়েছে। এবার কতটা প্রত্যাশা?
- এতটা যাব আমরা আশা করিনি। ৯৮ বছরে ভারতের মাত্র ৫টা ছবি অস্কারে এতদূর গেছে। আমরা খুব গর্বিত। চেষ্টা করব সবাই মিলে। আশা করি আমরা অস্কার ক্যাম্পেনে ওখানে যাব এবং যথাসাধ্য পদক্ষেপ নেব সবাই মিলে। ছবির অন্যতম প্রধান অভিনেতা হিসাবে চেষ্টা করব, যাতে ছবিটা বেশি সংখ্যক মানুষের সমর্থন পায়। এবং ছবিটা দেখেন। মনে হয় ফিল্মটা নিজেই নিজের বক্তব্য রাখবে। যারা ছবিটা দেখেছে, মানবিক কারণেই গভীর সংযোগ অনুভব করেছে। যেটা আমাদের জন্য খুব স্বস্তির এবং অনুপ্রেরণাদায়ক।
কতটা শক্ত ছিল ‘শোয়েব’-এর মতো চরিত্রে অভিনয়? পরিযায়ী শ্রমিকের জীবন তো দেখেননি...
- আমি নিজের জন্য বলতে পারি সমগ্র অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েছি। যা আমি ভীষণভাবে চেয়েছিলাম। নীরজ (ঘেওয়ান) খুব ভালো পরিচালক বা দারুণ শিল্পী শুধু এই জন্য তাঁর সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিলাম এমন নয়, মানুষ হিসেবে নীরজ কেমন সেটাও জানি। ওঁর কাজটা আসে একেবারে অন্তর থেকে। দর্শকের কাছে বিষয়টা নিয়ে আসার আগে নিজে গভীরভাবে অনুভব করে। এই ধরনের কাজেই সব সময় বিশ্বাস করি। আমি সেই ধরনের ছবি করতে চাই যেগুলো এনগেজিং এবং এন্টারটেনিং। যদি আমি এমন কিছু রেখে যেতে পারি যা তোমার কাছে সিনেমার বাইরেও তোমার সঙ্গে থেকে যাবে, ভাবাবে, সেটাই বোধহয় পৃথিবীকে সংযুক্ত রাখে।
‘হোমবাউন্ড’-এর বিষয়ের সঙ্গে জাত-ধর্ম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। আপনার কাছে ধর্ম কী অর্থ বহন করে?
- যত আমি বড় হয়েছি মনে হয়েছে, ধর্ম যত না আধ্যাত্মিক তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক। আই ফিল মোর অ্যাক্লেমড টু স্পিরিচুয়ালিটি অ্যান্ড সেলফ ইভোলিউশন। আমি মনে করি প্রত্যেক ধর্মের সৌন্দর্য সেইখানে যখন তা মনুষ্যত্বের পাঠ শেখায়। আমাদের সবার মনে রাখা উচিত, আমরা একটাই জাতি এবং কোথায় আমরা এক, কোথায় আমরা আলাদা সেটা নয়।
প্রথম ছবিতে (‘বিয়ন্ড দ্য ক্লাউড’) মাজিদ মাজিদির সঙ্গে কাজ করেছেন, আর এখন আপনার ছবি আন্তর্জাতিক মঞ্চে। ওই প্রথম কাজটাই কি কেরিয়ারে লং রানে সাহায্য করছে?
- আমার মনে হয় তাই। তবে কেরিয়ারের থেকেও বলব আমি শিল্পী হিসাবে কেমন হব, সেই ভিতটা উনি প্রাথমিক তৈরি করে দিয়েছিলেন। নিজের প্রতি আস্থা রাখার বিশ্বাসটা উনিই দিয়েছিলেন। আমি সেই রকম অভিনেতা হতে চেয়েছিলাম যে চরিত্রে নিমজ্জিত হতে পারে। এবং কাজের মধ্যে নিজেকে সমর্পণ করতে পারে। সেটা যে সম্ভব, উনি সেই বিশ্বাস দিয়েছিলেন, সাহস দিয়েছিলেন যে জন্য আমি তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। অনেক কিছু শিখিয়েছিলেন। পরিচালক যদি চ্যালেঞ্জ দেন অভিনেতাকে, সেটা দুর্দান্ত হয়। উনি যেভাবে শুট করেন একটা দৃশ্য, তার অভিনয়ের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ভীষণ আলাদা। যা আমাকে ভালো করতে সাহায্য করেছে।
আপনার ফিল্মোগ্রাফি খুব অন্যরকম। ‘বিয়ন্ড দ্য ক্লাউড’, ‘ধড়ক’, ‘পিপ্পা’, ‘সুটেবল বয়’, ‘দ্য রয়্যালস’ কিংবা ‘হোমবাউন্ড’। বলিউডের চাপ অনুভব করেন?
- না, আমি বরং উত্তেজনাই অনুভব করি। যত আমরা এগোব, মনে রাখতে হবে আমাদের শিকড়কে। যা ছবিকে স্পেশাল করবে। কিছুদিন আগে করণ জোহর যেমন বলেছিলেন, ‘পাশ্চাত্য দেশগুলো প্রায়ই আমাদের ছবিকে মিউজিক্যালস বলে। কিন্তু সেগুলো তা নয়। আমাদের গল্প গানের মাধ্যমে বলি না। বরং গল্পটা থামিয়ে আমরা অনুভবগুলো প্রকাশ করি গানের মাধ্যমে।’ আমি প্রেশার ফিল করি না, বরং কানেক্টেড ফিল করি। যে ধরনের কাজই হোক না কেন, আমি ভালো কাজ করতে চাই।
মার্টিন স্করসেসি ‘হোমবাউন্ড’-এর এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসার হিসেবে যুক্ত হয়েছেন....
- উনি সিনেমার ঈশ্বর। একজন ২৯-৩০ বছরের তরুণ অভিনেতা যদি তাঁর কাছে শোনে, ‘কিড ইউ আর গ্রেট।’ তখন মনে হয়– ইওর লাইফ ইজ মেড অ্যাজ অ্যান অ্যাক্টর (হাসি)। এই রকম প্রশংসা তো আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। ইটস ভেরি ভেরি স্পেশাল। হি ইজ আমেজিং। এরকম একটা ছবিকে সমর্থন করার তো কোনও প্রয়োজন ওঁর নেই। এটা খুব সৎ অনুভব থেকে আসে, যে উনি সত্যিকারের সিনেমায় বিশ্বাস করেন। এটা ওঁর উদারতা বা বড় মনের পরিচয় এবং সিনেমার প্রতি কমিটমেন্ট, বোঝা যায়। উনি কোল্যাবরেটর হিসেবে যুক্ত হয়েছেন, শুধুই নিজের নামটা দিয়েছেন এমন নয়। দু’বছর সময় দিয়েছেন। রিরাইটিং, এডিটিংয়ে সাহায্য করেছেন। উই আর অনার্ড। অনেক কিছু শিখেছি। নীরজকে খালি জিজ্ঞেস করতাম, উনি কী বললেন? যাতে আমি আরও শিখতে পারি (হাসি)।
