"পিকুর সঙ্গে তুলনাটা কমপ্লিমেন্ট হিসেবে নিয়েছি" 'হাঁটি হাঁটি পা পা' ছবি মুক্তির আগে অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় রুক্মিণী মৈত্র। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
মুক্তি পেতে চলেছে ‘হাঁটি হাঁটি পা পা’। বাবা-মেয়ের সম্পর্কের ছবি। ট্রেলারে কেমন সাড়া পেয়েছেন?
- আমি অনেক মেয়ের থেকে রেসপন্স পেয়েছি। সমাজের নানা বৃত্ত থেকে মহিলারা আমাকে জানিয়েছেন, যে তাঁরা তাঁদের বাবার সঙ্গে মিল খুঁজে পাচ্ছেন।
প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার মতো আপনিও কি নিজেকে বলবেন ড্যাডি'স, গার্ল?
- (হাসি) উমম... আমি সবসময়ই 'ড্যাডি'স গার্ল। তবে এখন মাম্মাই আমার ড্যাডি।
ছবির ট্রেলার দেখলেই ‘পিকু’র কথা মনে পড়বে। যদিও গল্পের মোড় অন্য দিকে ঘুরছে। দর্শক একটা ধারণা তৈরি করেই নেবে। আপনি তাদের কী বলতে চান?
- টিজার বেরনোর পর যখন দেখলাম অনেকেই এটা ‘পিকু’র সঙ্গে কমপেয়ার করছে, আমি বলেছিলাম তুলনাটা হোক, অসুবিধে নেই। কারণ কনভারসেশনটা হওয়া জরুরি, একটা সাড়া পড়লে ভালো। ট্রেলার বেরনোর পর ধারণাটা বদলে যাবে জানতাম। সেটাই হয়েছে। আসলে ‘পিকু’ একটা আইকনিক ছবি, বাবা-মেয়ের গল্প। ওখানেও দুজন লম্বা মানুষ, আমাদের ছবিতেও তাই। আমি এই তুলনাটা কমপ্লিমেন্ট হিসাবেই নিয়েছি।
শুনলাম ‘হাঁটি হাঁটি পা পা’ ‘ইফি’তে দেখানো হবে! এটা কী করে সম্ভব হল?
- আমি সত্যিই জানি না, কী করে হল! একদিন রাত দুটোর সময় আমার প্রোডিউসারের ফোন পেলাম যে আমাদের ছবিটা ‘ইফি’র ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার বিভাগে দেখানো হবে বাইশ তারিখ।
অনেকেই বলছে পরিচালক রামকমল মুখোপাধ্যায়ের যোগাযোগের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। ‘বিনোদিনী’র যোগ থাকছে ‘ইফি’তে।
- অ্যাবসোলিউটলি নট। যখন ‘হাঁটি হাঁটি পা পা’র খবরটা প্রকাশ্যে আসে তখন ‘বিনোদিনী’র খবরটা আসেইনি। ‘বিনোদিনী’র নমিনেশনের খবরটা অনেক পরে পাই।
এই যেমন ‘পিকু’-র সঙ্গে তুলনা। শুভশ্রীর ‘বিনোদিনী’র সঙ্গেও আপনার তুলনা। নানাভাবে, নানা বিষয়ে সেলিব্রিটিদের এমন তুলনার মধ্যে পড়তে হয়। আপনি কীভাবে সামলান?
- আমাকে যারা চেনে তারা জানে আমার একটা ইকোসিস্টেম আছে যেটা খুব হেলদি। তাই বাইরে যাই ঘটুক সেটা আমাকে এফেক্ট করে না। নানা মানুষের বক্তব্য থাকে। আমার একটা বক্তব্য না থাকলে, বা কম থাকলে কিছু এসে যায় না। আর ডিল করি মানে, আই পে ফর দ্য নয়েজ, বাড়িতে ওয়াইফাইয়ের টাকাটা আমিই দিচ্ছি। মিউট আর আনমিউটের সিদ্ধান্তটা নিতে এখনও আমি ভালো পারি।
সৃজিতের সঙ্গে কাজ করেছেন! তাঁর নতুন ছবির ঝলক কেমন লাগল?
- নানা ব্যস্ততায় আমার এখনও দেখা হয়নি। তবে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে একজন ‘লহ গৌরাঙ্গ...’ নিয়ে আমাকে খুব প্রশংসা করল। আমি গাড়িতে উঠেই সৃজিতকে ফোন করে কনগ্র্যাচুলেশন জানালাম। সৃজিতকে এও বলেছি যদি ‘লহ গৌরাঙ্গ...’-এ প্রোমোশনে আমাকে কাজে লাগলে জানিও (হাসতে হাসতে), সৃজিত তো বলেই ফেলল, ‘এখনও পর্যন্ত এই ছবির প্রোমোশন তোর ওপরেই হয়েছে।’
এগজ্যাক্টলি...
- আরে আমি তো বলছি, এই গোটা বছরটাই সব ছবির প্রচার আমার ওপর দিয়েই গিয়েছে (হাসি)।
হ্যাঁ ‘ধূমকেতু’, ‘রঘু ডাকাত’-এর প্রোমোশনেও রুক্মিণী প্রসঙ্গ এসেছে।
- ইয়েস! আমি বলেই দিয়েছি যে আমি ছিলাম, আমি আছি, আমি থাকব। সব ছবির প্রসঙ্গেই আমাকে টেনে আনা হয়। লোকেরা পেড পি.আর. করে, আমার ক্ষেত্রে এমনিই হয়ে যায়। ইটস ওকে! আমি এগুলোর মজা নিই।
চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
- ‘চ্যাম্প’-এ অল্প কিছু সময়ের জন্য স্ক্রিন শেয়ার করেছিলাম। আর এখানে বাবাকে শাসনে রাখা দাপুটে একটা মেয়ের চরিত্রে। আমি নিজের বাবা-মায়ের সঙ্গেও জোরে কথা বলিনি। বাবার সঙ্গে সেই সুযোগটাই পাইনি। মায়ের সঙ্গে একটু-আধটু হলেও অতটা সাহস হয় না। চিরঞ্জিৎদাকে ওভারপাওয়ার করা, বাপ রে! তবে কমেডির দৃশ্যগুলো শুট করতে দারুণ লেগেছে। চিরঞ্জিতদা ইজ আ মাস্টার। তিনি সব সময় বলতেন চিত্রনাট্যের বাঁধাধরা সংলাপে কমেডিকে বেঁধে দেওয়া যায় না। এটা খানিকটা ইন্সটিংক্ট থেকে আসে। আমি অনেক কিছু শিখেছি।
সম্প্রতি ‘টু মাচ’ টক শোয়ে উঠে এসেছে কাজলের বিবৃতি, যেখানে বলা হয়েছে ইমোশনাল চিটিং বেশি ক্ষতিকর, ফিজিক্যাল চিটিংয়ের চাইতে। আপনার কী স্ট্যান্ড এই বিষয়ে?
- এটার সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক!
ছবি: ইনস্টাগ্রাম
সেলেবদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে তো সারাক্ষণ কাটাছেঁড়া হয়!
- আই থিংক উইথ অল ডিউ রেসপেক্ট উনি যেভাবে জীবনটা দেখেছেন সেই জায়গা থেকে কথাগুলো বলেছেন। উনি জীবনের যে প্রান্তে রয়েছেন সেখান থেকে বক্তব্য রেখেছেন। আর আমাদের সম্পর্ক নিয়ে মূল্যবোধ, সিদ্ধান্তও আলাদা হয়। আমার মা-মাসি যমজ, একই স্কুলে পড়েছে, একসঙ্গে বড় হয়েছে কিন্তু চিন্তাভাবনা আলাদা।
চিটিং নিয়ে আপনার কী বক্তব্য?
- আমার টেক হল চিটিং ইজ চিটিং। ইমোশনাল হোক বা ফিজিক্যাল– সবটাই চিটিং। এবার সেটা নির্দিষ্ট ব্যক্তির উপর নির্ভর করছে, সেটা নিয়ে জীবনে কীভাবে এগবে। সম্পর্কটা ওখানেই ছেড়ে দেবে, না কি ক্ষমা করে সঙ্গে নিয়ে এগোবে– সেটা তো যার যার তার তার ব্যাপার।
অনেকেই বলছে দেবের সঙ্গে আপনার দূরত্ব হয়ে গিয়েছে। আপনি বেশিরভাগ সময়টা মুম্বইয়ে থাকছেন, বাড়ি নিয়েছেন!
- আমি কিন্তু সারা জীবনই বেশিরভাগ সময়টা মুম্বইয়ে কাটিয়েছি। দশ-পনেরো দিন মাসে এমনিই মুম্বইয়ে থাকতাম। আমি জানি না কেন এই কথাবার্তাগুলো হচ্ছে। একটু আগেই বললাম গোটা বছর জুড়েই আমাকে নিয়ে কথা হচ্ছে। তো ‘বদনাম’ শব্দটাতেও ‘নাম’ আছে (হাসি)। সোশাল মিডিয়াতে কোনও লিমিট নেই। এটা তাদের ভার্সন। আমার ইকোসিস্টেমের ভার্সনটা অনেকটাই আলাদা।
নতুন বছরে কী প্ল্যান?
- নতুন কাজ করা, খুশি থাকা, সুস্থ থাকা। এটা আমি উপলব্ধি করেছি বলতে পারো। সম্প্রতি আমি আমার পরিবারের বেশ কিছু আত্মীয়কে হারিয়েছি। অনেকেই ভাবছে রুক্মিণীকে কেন দেখা যাচ্ছে না! এই যে তোমার সঙ্গে আজ কথা বলছি, গতকাল একজন মারা গিয়েছেন। আমার দাদু, মাসি, মেসো– প্রায় ব্যাক টু ব্যাক বিগত ছয় মাসে চলে গিয়েছেন। সেভাবে কেউ জানে না। আই হ্যাভ বিন থ্রু এ লট! তাই আমার যা আছে সেটা নিয়ে আমি খুশি থাকতে চাই। জীবন খুব আনপ্রেডিক্টেবল। সেই জন্য ‘হাঁটি হাঁটি পা পা’ আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমার যে চরিত্রটা সে মাকে হারিয়েছে, বাবাকে হারাতে চায় না। আর রুক্মিণীর মধ্যেও কোথাও না কোথাও আজকের দিনে দাঁড়িয়ে নিজের সুস্থ থাকা, প্রিয়জনের সুস্থ থাকা খুব জরুরি। আমি মাকে হারাতে পারব না!
