shono
Advertisement
Deep Fridge

ছবির গল্প দু’লাইনের, অভিঘাত সুদূরপ্রসারী, কেমন হল জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত 'ডিপ ফ্রিজ'?

আনন্দ-বিষাদের দিনলিপিতে অর্জুন আদ্যন্ত আধুনিক জীবনের আবেগ ধরেছেন।
Published By: Arani BhattacharyaPosted: 07:46 PM Nov 22, 2025Updated: 08:23 PM Nov 22, 2025

শম্পালী মৌলিক: কিছু কিছু নীরবতা থাকে যার সামনে তুমি আর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে না। নিষ্ফল প্রয়াসে তোমার বাক্য ফিরে আসবে তোমারই কাছে। উল্টো দিকের মানুষটা ততক্ষণে মনের মধ্যে ডিপ ফ্রিজ তৈরি করে ফেলেছে। সব স্মৃতি চালান করেছে সেই হিমশীতলে। হতাশা, না-পাওয়া, বিশ্বাসভঙ্গ- সবটা মিলেমিশে এমন চূড়ান্ত চাপ তৈরি করে, ছিঁড়ে যায় সম্পর্কের তার। সত্যিই কি ছিঁড়ে যায়? অর্জুন দত্তর ‘ডিপ ফ্রিজ’ এমন প্রশ্ন তোলে।

Advertisement

ছবির কাহিনি দু’লাইনের কিন্তু তার অভিঘাত সুদূরপ্রসারী। সংবেদনশীল চিত্রনাট্য (অর্জুন দত্ত, আশীর্বাদ মৈত্র), অব্যর্থ সংলাপ (অর্জুন, আশীর্বাদ ও আত্মদীপ), ডিওপি সুপ্রতিম ভোলের লিরিকাল সিনেমাটোগ্রাফি ছবিটাকে অন্য মাত্রায় উত্তীর্ণ করে। একরাতের গল্পই বলা যায়। মাঝে মাঝে ফ্ল্যাশব্যাকে অতীতের সেই সব মধুর মুহূর্ত ফিরে আসে। খানিকটা কবিতার রিফ্রেনের মতো। সুজয় দত্ত রায়ের সম্পাদনা চমৎকার।

কোনও চরিত্রই পুরোপুরি সাদা বা কালো বলা যায় না। এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের ছবির অবিচ্ছেদ্য অংশ বৃষ্টি। দুটো মানুষ এক ছাদের তলায় অনেকদিন পর। তাদের রাত্রিবাসের ক্ষেত্রে ক্যাটালিস্টের কাজ করছে বৃষ্টি। একঘেয়ে, দমবন্ধকরা কিন্তু অনিবার্য। একটা বাতিল হয়ে যাওয়া সম্পর্ক, প্রত্যাশা ফুরিয়ে গিয়েছে যখন, তেমন সময়ে দুটো মানুষ মুখোমুখি। কিন্তু তারা এতদিনে যথেষ্ট পরিণত, একবারের জন্যও মাত্রা ছাড়ায় না। শেষের সেই দিন ঘুরেফিরে আসে ছবিতে। ততদিনে দুজনেরই নতুন সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এইখানে ছবিটা ভীষণভাবে এই সময়ের। তারা পরস্পরকে সম্মান দিতে জানে, দায়িত্ব নিতে জানে। আমাদের মতোই নানারকম ত্রুটি নিয়ে তারা জড়িয়ে থাকে, কিন্তু কয়েক মুহূর্তের বিচ্যুতি আদতে আমাদের জীবন বদলে দিতে পারে। তখন আর অভিমুখ বদলানো যায় না। এই কথাটাই শান্তভাবে বলা হয়।

এই ছবিতে বিবাহ বিচ্ছিন্ন দম্পতির ভূমিকায় আবির চট্টোপাধ্যায় ও তনুশ্রী চক্রবর্তী। ছবিতে তাঁরা স্বর্ণাভ ও মিলি। তাদের সুখের সংসার ছিল। বিবাহ বার্ষিকীর দিনে একটা অনভিপ্রেত ঘটনায় তাদের দাম্পত্য ভেঙে যায়। রয়েছে সন্তান তাতাই। বাচ্চার জ্বরের কারণে বাবা এসেছে দেখা করতে। বর্ষার সে রাত। প্রাক্তন স্ত্রীর সঙ্গে স্বর্ণাভর কথা বন্ধ এমন নয়, কিন্তু যন্ত্রণার ঝাঁঝ এখনও কমেনি মিলির। যে ছেলেটা স্ত্রীকে সত্যিই ভালোবাসত, তার ক্ষণিকের চ্যুতি অবিশ্বাস্য লাগে নিজের কাছেও। ‘একটা ভুলের কি ক্ষমা হয় না?’ প্রশ্নটা ওঠে বার বার। তখন একটা খটকা জাগে ভুলই যদি হয়, সেই ভুলকে কী মানুষ জীবনে জড়িয়ে নেয়? এতদিনে স্বর্ণাভ বিয়ে করেছে রঞ্জাকে। সেই রাতে রঞ্জার ফোন আসে। তাকে বাড়ি ফিরতে বলে। ছেলেটা সুনিশ্চিত কণ্ঠে বলে, ‘তোমায় যে ভালোবাসি বারবার বোঝাতে হবে কেন?’– এটাই জীবন, ভালোবাসলেও রোজ বোঝাতে হয়! দৈনন্দিন সম্পর্ক যে চারাগাছে জল দেওয়ার মতো। আর আঁধার রাতে ভালোবাসা আর নিরাপত্তাহীনতা হাত ধরাধরি করে চলতে থাকে– মেঘ-বৃষ্টির মতো। মিলি একসময় জিজ্ঞেস করে, ‘আমার জায়গায় তুমি হলে কী করতে’? স্বর্ণাভর উত্তর যাই হয়ে যাক থেকে যেতাম।

‘ইজাজত’-এর কথা মনে পড়তে পারে ছবিটা দেখতে গিয়ে। আনন্দ-বিষাদের দিনলিপিতে অর্জুন আদ্যন্ত বাঙালি আবেগ ধরেছেন। এবং ঠিক-ভুল দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেননি। প্রচণ্ড ভালোবাসার মানুষকেও কখনও ছেড়ে দিতে হয়। জীবন চাইলে সে ফিরে আসবে বা আসবে না, বা অন্য আঙ্গিকে ফিরে আসবে। ভালোবাসার ব্যাপ্তি নির্ধারণ করবে ফেরা-না-ফেরার কম্পাস। বরফ গললেও কী আর সম্পর্ক আগের মতো হয়? কে জানে!

এবার আসি অভিনয় প্রসঙ্গে। আবির স্বর্ণাভর চরিত্রের অসহায়তা-প্রেম নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তনুশ্রী মিলির চরিত্রে বেশ সাবলীল। রঞ্জার ভূমিকায় সারপ্রাইজিংলি দক্ষতার ছাপ রেখেছেন অনুরাধা মুখোপাধ্যায়। খুব ভালো লাগে শোয়েব কবীরকে। তাঁর মুখে ‘ইউ নো রাইট, আই লাভ ইউ?’ বেশ লাগে। স্বল্প পরিসরে দেবযানী চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক চট্টোপাধ্যায় একদম ঠিকঠাক। সৌম্য ঋত-এর মিউজিক ছবির মেজাজের সঙ্গে অত্যন্ত সুপ্রযুক্ত। ‘আমরা দু’জন ঘর ভেঙেছি কোন সুখে’ গানটা বেশ লাগে। আর অবশ্যই রবীন্দ্রগানের ব্যবহার সুন্দর। তবে ছবিতে ছেলের জ্বর কেমন এবং কফি খাওয়ার সিকোয়েন্সের পুনরাবৃত্তি ভালো লাগে না। গল্পে সামান্য হলেও সারপ্রাইজ এলিমেন্ট থাকলে ভালো হত। নয়তো শেষটা প্রেডিক্টেবল হয়ে যায়। আর ভালো লাগে ভাঙন মানে সব শেষ নয়। নতুনের শুরুও। পরিচালক তেমনভাবে ভাবতে পেরেছেন। অর্জুন ছবির আবহ তৈরি করতে জানেন। তবে জাতীয় পুরস্কারের স্বীকৃতির পরেও, দর্শকের রায় জরুরি। তাঁরা প্রেক্ষাগৃহে এলে নিরাশ হবেন না।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • কোনও চরিত্রই পুরোপুরি সাদা বা কালো বলা যায় না।
  • এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের ছবির অবিচ্ছেদ্য অংশ বৃষ্টি। দুটো মানুষ এক ছাদের তলায় অনেকদিন পর।
  • তাদের রাত্রিবাসের ক্ষেত্রে ক্যাটালিস্টের কাজ করছে বৃষ্টি। একঘেয়ে, দমবন্ধকরা কিন্তু অনিবার্য।
Advertisement