সুমন করাতি, হুগলি: যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মেসিকাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই গত রবিবার সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে জিতের বাঁকুড়ার অনুষ্ঠানে। ভাঙচুর, লুটপাট, পোস্টার ছেঁড়া সবমিলিয়ে পরিস্থিতি এমন রণক্ষেত্রে পরিণত হয় যে উন্মত্ত দর্শককে সামাল দিতে লাঠিচার্জ করতে হয় পুলিশকে। বাকুঁড়ার সেই বিভীষিকাময় রাত থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার শ্রীরামপুরে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হল প্রশাসনিক স্তরে।
মঙ্গলবার শ্রীরামপুরে 'জিৎ নাইট'-এর জন্য মুখিয়ে রয়েছেন হুগলিবাসী। খবর, বাকুঁড়ার মতোই জনসুনামি হতে পারে এখানে। তাই এক্ষেত্রে যেন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তাই আগেভাগেই কোমর বেঁধে ময়দানে নেমে পড়েছে পুলিশ। সোমবার রাতেই অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে এসেছিলেন পুলিশ আধিকারিকরা। সুপারস্টার জিতের নিরাপত্তাও আটসাঁট করা হয়েছে। বাকুঁড়ারমতো যাতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয় তাই বিশাল পুলিশ বাহিনীও মোতায়েন রয়েছে অনুষ্ঠান চত্বরের এলাকাজুড়ে। উল্লেখ্য, সোমরাতেই আরামবাগে অনুষ্ঠান করেছেন জিৎ। তবে সেখানে যথাযথ ব্যবস্থা থাকায় কোনওরকম ডামাডোলের খবর পাওয়া যায়নি। বাকুঁড়া থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার জিতের কনসার্টের জন্য প্রস্তুত শ্রীরামপুর।
ঠিক কী ঘটেছিল বাকুঁড়ায়? রাঢ় বাংলার কুটিরশিল্প, পর্যটন ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে গত ২৩ ডিসেম্বর থেকে বিষ্ণুপুর মেলা শুরু হয়েছে। জাতীয় মেলার স্বীকৃতি পেয়েছে এই মেলা। শনিবার সকাল থেকে সবই স্বাভাবিক ছিল। তাল কাটল রাতে। মেলার যদুভট্ট মঞ্চে জিতের অনুষ্ঠান ছিল। সূচি মেনে রাত ৮টা নাগাদ অনুষ্ঠান শুরুও হয়। অনুষ্ঠান দেখতে শুধু বিষ্ণুপুর নয়, জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় জমান অনুষ্ঠানস্থলে। স্থানীয় সূত্রে খবর, ধীরে ধীরে ভিড় এতটাই বেড়ে যায়, তা সামলাতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। ভিড়ের মধ্যেই শুরু ধাক্কাধাক্কি। কিছু ক্ষণের মধ্যেই কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় অনুষ্ঠানস্থল। উত্তেজিত দর্শকদের একাংশ মঞ্চের সামনে থাকা ব্যরিকেড ভেঙে ফেলেন। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় মঞ্চের সামনে থাকা কয়েকশো চেয়ার। ভাঙচুর করা হয় প্রবীণ নাগরিক ও মহিলাদের বসার জন্য নির্দিষ্ট জায়গার চেয়ারও।
অভিযোগ, আশপাশের বেশ কিছু দোকানেও ভাঙচুর চালানো হয়। দোকান থেকে লুট করে নেওয়া হয় টাকাপয়সা। ছিঁড়ে ফেলা হয় অনুষ্ঠানস্থলে থাকা একাধিক ব্যানার-ফ্লেক্স। মেলার পাশেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশাল বড় ফ্লেক্স ছিল। সেটিও ভেঙে ফেলা হয়। ধাক্কাধাক্কিতে বেশ কিছু দর্শক আহতও হয়েছেন বলে খবর। পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠিচার্জ করে পুলিশও। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অভিযোগে পুলিশ মেলাস্থল থেকে বেশ কয়েক জনকে আটক করেছিল। যদিও পরে তাঁদের ব্যক্তিগত বন্ডে ছেড়ে দেওয়া হয়। এবার সেই বাকুঁড়ার বিভীষিকা থেকে শিক্ষা নিয়ে শ্রীরামপুরে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হল পুলিশ প্রশাসনের তরফে।
