ইংল্যান্ড সিরিজে ভারতের অন্যতম সেরা পারফর্মার তিনি। বোলিংয়ে জশপ্রীত বুমরাহর সময়-সময় অনুপস্থিতি যিনি শুধু ঢেকে দেননি, গোটা সিরিজে ১৮৬ ওভার বল করে ২৩-টা উইকেটও তুলে নিয়েছিলেন। সেই মহম্মদ সিরাজ খোলামেলা সাক্ষাৎকার দিলেন ইংল্যান্ড সিরিজ নিয়ে। শুনলেন বোরিয়া মজুমদার।
প্রশ্ন: আজকাল ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে এত কথা শুনি। সেই যুগে মহম্মদ সিরাজ ইংল্যান্ড সিরিজে ১৮৬ ওভার বোলিং করলেন কী করে? কী করে পাঁচটা টেস্ট খেললেন?
সিরাজ: সত্যি বলতে, জানি না। কিন্তু দেশের হয়ে খেললে শরীরের উপর কতটা চাপ পড়ছে, সে সমস্ত মাথায় থাকে না। আমাদের মতো মানুষের ছোট থেকে একটাই স্বপ্ন থাকে। দেশের হয়ে খেলা। আর সেই সুযোগ যখন আসে, তখন একটাই কাজ থাকে। সেই সুযোগকে দু'হাত দিয়ে নেওয়া।
প্রশ্ন: ওভাল টেস্টের শেষ দু'দিন নিয়ে বলুন না। হ্যারি ব্রুকের ক্যাচ ফেলা থেকে দেশকে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জেতানো, পুরো সফরটা একটু বলুন।
সিরাজ: শেষ টেস্টের চতুর্থ দিন নিজের প্রথম স্পেলটা সত্যি ভালো করেছিলাম। যে স্পেলে অলি পোপকে আউট করি। তারপর টি শার্ট বদলাতে আমি মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাই। দু'এক ওভার মতো ছিলাম না মাঠে। ফিরে আসার পর প্রথম বলটাই আমার দিকে উড়ে আসে। ক্যাচটা ধরতে গিয়ে ব্যালান্স হারিয়ে ফেলি। কারণ, ওই একটা উইকেট টেস্টকে পাঁচ দিনে যাওয়া থেকে আটকাতে পারত। ক্যাচটা পড়ার পর থেকে জো রুট আর ব্রুক যে ভাবে ব্যাটিং করছিল, মনে হচ্ছিল ম্যাচটা বোধহয় বেরিয়ে গেল হাত থেকে। কিন্তু আমি চেষ্টা করছিলাম, বর্তমানে থাকতে। কারণ যা হয়ে গিয়েছে, তা আমি আর শত চেষ্টা করেও ঠিক করতে পারব না। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণও দারুণ বল করেছিল সে দিন। জেকব বেথেল আর জো রুটকে আউট করে দিল। আকাশ দীপ আউট করল ব্রুককে। আর ক্যাচটা সেই আমার কাছেই এল! পঞ্চম দিন টেস্ট জিততে ৩৫ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। আমাদের চার উইকেট। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল যে, ওই রানের মধ্যে ইংল্যান্ডের চার উইকেট নেওয়া সম্ভব। চতুর্থ দিন রাতে এগারোটা নাগাদ ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আমি। পরের দিন ভোর ছ'টায় ঘুম ভেঙে যায়। তারপর আর ঘুমোতে পারিনি। কী করব ভাবতে ভাবতে গুগলে গিয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর একটা ওয়ালপেপার নামালাম। যেখানে লেখা, বিলিভ। আর তার পর যা করব ভেবেছিলাম, করে ফেললাম। ম্যাচ জিতিয়ে দিলাম টিমকে!
প্রশ্ন: সিরিজ শেষে আকাশ দীপের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। উনি বললেন, ওভাল টেস্টের শেষ দিন আপনার মধ্যে একটা মারাত্মক বাড়তি বিশ্বাস কাজ করছিল যে, কোনও না কোনও ভাবে ঠিক ম্যাচ জিতিয়েই দেবেন।
সিরাজ: আমার কাঁধে যদি গুরুদায়িত্ব থাকে, তা হলে আমার পারফরম্যান্স দিন দিন উন্নত হতে থাকে। দায়িত্ব সম্পূর্ণ অন্যরকম এক আনন্দ দেয় আমাকে। আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। এজবাস্টনে আমাকে নিয়ে প্রচুর কথা হয়েছিল। তাই সমস্ত কথাবার্তা আমি থামিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। আমি লোকের কথা বিশেষ শুনি না। কারণ, লোকে আমার স্ট্রাগলটা জানে না। কিন্তু তার পরেও ও সমস্ত ক্যাঁচরম্যাচর থামাতে হত। কারণ একটু বাড়াবাড়িই হয়ে যাচ্ছিল। আকাশ-সহ বাকি সতীর্থদের সঙ্গে কথা বলার সময় ওদের বারবার বলছিলাম, ম্যাচটা আমরা জিততে পারি।
প্রশ্ন: তার পরেও ১৮৬ ওভার। অতিরিক্ত নয়? একটা কথা বলুন, সিরিজে আরও একটা টেস্ট থাকলে, খেলতেন?
সিরাজ: হান্ড্রেড পার্সেন্ট। অবশ্যই খেলতাম।
প্রশ্ন: ক্লান্ত হন না আপনি?
সিরাজ: না। দেশের হয়ে খেলা, দেশের সেবা করা আমার প্রায়োরিটি। আমি টেস্ট ক্রিকেটের জন্য সব কিছু করতে পারি। টেস্ট যে ভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে প্রতিনিয়ত ছুড়ে ফেলে, তা আমার অত্যন্ত ভালো লাগে। ঠিক জীবনের মতো। টেস্ট ক্রিকেট আপনাকে শারীরিক ভাবে, আবেগের দিক থেকে, সব রকম ভাবে ক্লান্ত করে দেবে। কিন্তু তার পরেও টেস্ট ক্রিকেটের চ্যালেঞ্জটা আমার দারুণ লাগে।
প্রশ্ন: বিরাট কোহলিকে এক সময় যে ভাবে টিমকে তাতাতে দেখতাম, এবার আপনার মধ্যে সেটা দেখলাম। আপনার মধ্যে বিরাটের প্রভাব কতটা?
সিরাজ: একটা জিনিস বিরাট ভাইয়ের থেকে শিখেছি আমি। তা হল, খেলার সময় কী ভাবে লড়তে হয়। মাঠের বাইরে বিরাট ভাই খুব ভালো ভাবে সবার সঙ্গে কথা বলবে। কিন্তু মাঠে বিপক্ষ ওর কাছে হল শত্রু! আমার যে জিনিসটা খুব ভালো লাগে। আর আমার বোলিংটা আসে, নিজের আগ্রাসন থেকে। আগ্রাসন না থাকলে আমি বলই করতে পারব না। ওভালে রুট আর ব্রুক যখন ভালো ব্যাটিং করছিল, আমাদের কাঁধ কিছুটা ঝুলে গিয়েছিল। কিন্তু তারপর আমি টিমকে তাতাতে শুরু করি। ম্যাচের কর্তৃত্ব নিজেদের হাতে নিতে। আর রুটের উইকেট পড়ার পর কিন্তু ঠিক সেটাই হল!
