স্টাফ রিপোর্টার: ভারতবর্ষের ‘টায়ার টু সিটি’ কিংবা দ্বিতীয় সারির শহরে আম্তর্জাতিক ক্রিকেটের এক আলাদা মাহাত্ম্য রয়েছে। কালেভদ্রে নামজাদা প্লেয়াররা সে সব শহরে খেলতে যান বলে, আনন্দ-উদ্দীপনাটা বল্গাহীন হয়। ম্যাচের টিকিট পলকে নিঃশেষ হয়ে যায়। খেলার দু’দিন আগে-পরে জুড়ে একটা উৎসব-উৎসব ভাব ছেয়ে থাকে চতুর্দিকে। জাতীয় মহানায়কদের প্র্যাকটিস দেখতে পর্যন্ত কাতারে-কাতারে লোক চলে আসেন। শনিবাসরীয় কটকে যা হল!
সাধারণত বরাবাটি স্টেডিয়ামে হাজার চল্লিশ লোক ধরে। তা, এ দিন ভারতীয় দলের প্র্যাকটিস দেখতে ঝাঁকে-ঝাঁকে চলে এলেন! আর সেই সংখ্যাটা এতই বিপুল যে, মাঠের একখানা আস্ত স্ট্যান্ড খুলে দিতে হল ক্রিকেট-উৎসাহীদের স্ফূরণ সামাল দিতে। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, শুভমান গিলরা তখন সবেমাত্র মাঠে নেমেছেন। ট্রেনিং পর্ব শুরু হয়েছে। কেউ ব্যাট করছেন, কেউ বল। কেউ শট খেলছেন, কেউ আউট হচ্ছেন। কিন্তু যখনই যা হচ্ছে, ছোট-বড়-মাঝারি, তীব্র হর্ষধ্বনিতে ফেটে পড়ছে কটকের ক্রিকেট-জনতা! দ্রুতই মাঠের একটা স্ট্যান্ডের ‘সীমানা’ পেরিয়ে প্রায় অর্ধেক স্টেডিয়াম ভরিয়ে ফেললেন ক্রিকেট পিপাসুরা। করার নেই কিছু। আড়াই বছরের ‘উপবাস’ যে! আড়াই বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরল কটকে। ২০২২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি ম্যাচের পর, এবার আবার।
বাকিদের কথা জানা নেই। তবে মনে হয় না, দুই ভারতীয় ক্রিকেটারের কটকের এ হেন আনন্দস্রোতে গা ভাসানোর সময় রয়েছে বলে। তাঁদের যে ফর্ম খুঁজতে হবে, ব্যাটিং ফর্ম! সময়ে যে প্রায় হয়ে এল। আর দিন দশেক পর শুরু হয়ে যাবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। কটক ওয়ান ডে ধরলে তার আগে মাত্র আর দু’টো ম্যাচ। বিরাট কোহলি কবে আর ফিরে পাবেন ফর্ম? রোহিত গুরুনাথ শর্মারও রান আর আসবে কবে?
ডান হাঁটু ফুলে যাওয়ায় নাগপুরে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডে খেলেননি বিরাট। রোহিত নেমেছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক ২ রানের বেশি কিছু করতে উঠতে পারেননি। তা, কটকে ফিরছেন কোহলি। এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে ভারতীয় ব্যাটিং কোচ সীতাংশু কোটাক বলে গেলেন, ‘‘কোহলি ফিট। কটকে ও নামছে। প্র্যাকটিসে কোনও সমস্যা টের পায়নি।’’ রোহিতের ফর্ম নিয়েও জিজ্ঞাসা করা হয় ব্যাটিং কোচকে। উত্তরে তিনি বিশেষ আমল দিলেন না। বললেন, ‘‘আমার মনে হয় না, রোহিতের কোনও সমস্যা হচ্ছে। এই সিরিজের আগে যে তিনটে ওয়ানডে খেলেছিল রোহিত, তাতে ৫৮, ৬৪ আর ৩৫ করেছিল। মনে রাখবেন ৩১-টা ওয়ানডে সেঞ্চুরি রয়েছে ওর। আমার মতে, এটা রোহিতের খারাপ সময় ছাড়া আর কিছুই নয়। এত ভাবার কিছু নেই।’’
মুশকিল হল সেই ‘খারাপ সময়ে’র শেষ কোথায়, কেউ জানে না। কেউ আন্দাজও পাচ্ছে না। অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে দুর্দশা চলছে ভারত অধিনায়কের। মাঝে রনজি ম্যাচে নামলেন। সেখানেও কিছু করতে পারলেন না। বিরাটেরও মোটামুটি একই অবস্থা। শেষ স্মরণীয় রান বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে পারথ টেস্টে সেঞ্চুরি। ব্যস, তার পর আর কোথাও কিছু নেই। কোহলি ফিরলে এক টিম কম্বিনেশন সংক্রান্ত সমস্যাতেও পড়বে ভারত। শ্রেয়স আইয়ার নাকি নাগপুরে ওয়ানডে অভিষেক করা যশস্বী জয়সওয়াল–কাকে বসাবে, ভেবে বার করতে হবে। সিরিজ জয়েরও ব্যাপার রয়েছে, যা কটকে জিতলে হয়ে যাবে। কিন্তু তার চেয়েও বড় দ্রষ্টব্য, কোহলি-রোহিত কী করেন? রানে ফেরেন? নাকি হতাশা আবার তাঁদের সঙ্গী হয়? একটা পরিসংখ্যান দেখছিলাম যে, ছ’বছর আগে শেষ বার কটকে যখন ওয়ানডে হয়, সেই ম্যাচে যুবরাজ সিং দেড়শো করেছিলেন। রোহিত করেন ৬৩। বিরাট ৮৫। বিগত ছ’বছরে মহানদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। যুবরাজ খেলা ছেড়ে দিয়েছেন, বহু দিন হল। রোহিত-বিরাট আছেন এখনও, তবে অস্তিত্বের সঙ্কট নিয়ে। রবিবাসরীয় কটকে ক্রিকেটদেবতা সেই সঙ্কট কাটিয়ে দেবেন?
আজ টিভিতে
ভারত বনাম ইংল্যান্ড
দ্বিতীয় ওয়ান ডে
কটক, দুপুর ১.৩০
স্পোর্টস ১৮
