নন্দন দত্ত, সিউড়ি: মৃত ব্যক্তির নামে দেওয়া হল করোনা টিকা (Corona Vaccine)। বেরিয়ে এল তাঁর নামে দ্বিতীয় দফায় টিকা দেওয়ার শংসাপত্র! অন্যদিকে যিনি আবার দুটি টিকা নিলেন, তিনি শংসাপত্র পেলেন না। ভুয়ো এই টিকাকরণ নিয়ে তোলপাড় রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলা। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি ডেটা এন্ট্রির ভুল। কী করে এমন হল তার তদন্ত হবে।
রামপুরহাটের কবিচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা অমর মণ্ডল। তারাপীঠ মন্দিরের কাছে প্রসাদি প্যাড়া বিক্রি করেই তাঁর সংসার চলে। গত ১ এপ্রিল মা তোলাবতী ও স্ত্রী জ্যোতস্না মণ্ডলকে নিয়ে তিনি করোনা টিকা নেন। স্থানীয় বালিয়া গ্রামের উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের টিকাকরন শিবির থেকেই তিনজনে টিকা নেন। তিনজনের মোবাইলের নম্বর হিসাবে অমরবাবু তাঁর নম্বর দেন শিবিরে। তাঁর দাবি, কিছুদিন পরে তাঁর মোবাইলে চারজনের টিকাকরনের শংসাপত্র আসে। তাঁরা তিনজন। সঙ্গে তাঁর প্রয়াত বাবা দুলাল মণ্ডলের টিকা নেওয়ার শংসাপত্র এসে যায়।
[আরও পড়ুন: মধ্যবিত্তকে স্বস্তি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হল প্যাথোলজিক্যাল-রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষার খরচ]
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালে অমরবাবুর বাবা দুলাল মণ্ডল প্রয়াত হয়েছেন। মণ্ডল পরিবারের লোকেরা জানায়, প্রথম দফার শংসাপত্রের দরকার না হওয়ায় সেটি আর প্রিন্ট করানো হয়নি। দুলালবাবুর নামে ভুয়ো শংসাপত্রের সংশোধনও করা হয়নি। হিসাব অনুযায়ী ১৫ মে দ্বিতীয় দফায় টিকাকরণে ফের তিনজনে টিকা নেন। তার শংসাপত্র ফের অমরবাবুর মোবাইলে আসে। সেটি স্থানীয় একটি কম্পিউটার সেন্টারে প্রিন্ট করাতে গিয়ে চমকে ওঠেন তাঁরা।
অমর মণ্ডল জানান, “আমার ও স্ত্রীর দ্বিতীয় দফায় টিকা নেওয়ার শংসাপত্র বের হয়। যাতে আবার আমার যে ভোটার নম্বর দেওয়া আছে তা নেই। বরং অন্য কারও ভুয়ো নম্বর দেওয়া। মায়ের প্রথম দফার টিকাকরণের শংসাপত্র বের হচ্ছে। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় আসেনি। বাবার দ্বিতীয় দফার টিকাকরণের শংসাপত্র এল, আমার ভোটার আইডি নম্বর দিয়ে। বাবা কি স্বর্গ থেকে টিকা নিলেন?” কম্পিউটার দোকানের মালিক তথা প্রতিবেশী বুদ্ধদেব দাস জানান, তাঁর কাছে অমর মণ্ডল শংসাপত্রের প্রিন্ট বের করে। প্রথমবার তিনজন টিকা নিলেও আসে চারজনের শংসাপত্র। দ্বিতীয় দফায় অমরের বয়স ভোটার নম্বর বসিয়ে তাঁর মৃত বাবার শংসাপত্র বেরিয়ে আসে। পাশাপাশি মা টিকা নিলেও তাঁর দ্বিতীয় দফার কোনও শংসাপত্র নেই।
[আরও পড়ুন: ‘অশোভনীয়’ পোশাক পরে প্রবেশ নিষিদ্ধ! নাগরিকদের জন্য ফতোয়া জারি করে বিতর্কে পুরসভা]
এই কাণ্ডে নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য দপ্তর। জেলা প্রশাসনের টিকাকরণের দায়িত্বে থাকা এক আধিকারিক জানান, যদি ভুয়ো ডাটা এন্ট্রি হয়ে থাকে, তাহলে তার হিসাব মিলল কী করে? জেলা প্রশাসনের দাবি, যাঁরা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে টিকাকরণের ডেটা এন্ট্রির কাজে রয়েছেন, তাঁরা হয় অনভিজ্ঞ, নয় এর মধ্যে কোথাও গরমিল আছে। রবীন্দ্রনাথ প্রধান জানান, “আমার নজরেও বিষয়টি এসেছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত করে দেখছি।”