সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নোট বাতিল রাতারাতি নেওয়া কোনও পদক্ষেপ নয়৷ অর্থনীতির সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁরাই চেনেন এমন হাতেগোনা কয়েকজন আমলাকে সঙ্গে নিয়ে দেশের প্রায় ৮৬ শতাংশ বড় নোট স্রেফ কাগজে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷
মোট ছয়জন আমলাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ থেকে কালো টাকা নির্মূল করার অভিযানে নেমেছিলেন প্রধানমন্ত্রী, যাঁদের মধ্যে অগ্রণী ছিলেন হাসমুখ আধিয়া৷ এই ছয় শীর্ষ আমলা চূড়ান্ত গোপনীয়তা বজায় রাখার শপথ নেন৷ এমনকি, পরিবারের কাউকেই এই কথা জানানোর অধিকার ছিল না তাঁদের৷ একঝাঁক তরুণ গবেষক আমলাদের এই বিশেষ দলটিকে টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়েছেন৷ নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দুটি ঘর বরাদ্দ করা হয় তাঁদের জন্য৷ ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কালো টাকার বিরুদ্ধে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করার পরিকল্পনা ছিল মোদির৷ শুক্রবার এই সব তথ্য ফাঁস করেছে সংবাদসংস্থা রয়টার্স৷
তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সহজ ছিল না৷ নোট বাতিলে ব্যাঙ্কের ঘরে প্রচুর নগদ ঢুকলেও মজদুর, সাধারণ মানুষের নগদের জোগানে যে টান পড়বে সেটা স্পষ্টই ছিল৷ তার উপর ২০১৭-তে উত্তরপ্রদেশে ভোট৷ যে নির্বাচনের ফলাফলের উপর নির্ভর করে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী ফের ক্ষমতার তখতে বসবেন কি না! তবে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি নয়, দেশবাসীর স্বার্থে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষপে করতেই পুরনো বড় নোট বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন মোদি৷ ৮ নভেম্বর ক্যাবিনেটের বৈঠকে মোদি তাঁর ঘনিষ্ঠদের বলেন, “আমার সবদিক খতিয়ে দেখা হয়ে গিয়েছে৷ এই অভিযান বিফল হলে, ব্যর্থতার দায় একমাত্র আমার৷” মোদির মুখে এই কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে যান তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা৷
কালো টাকার বিরুদ্ধে এই অভিযানে মোদির সহ-যোদ্ধা ছিলেন হাসমুখ আধিয়া৷ মোদি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৩-২০০৬ সাল পর্যন্ত তাঁর মুখ্যসচিব ছিলেন ৫৮ বছরের আধিয়া৷ মোদির সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কও ছিল দারুন৷ ২০১৫-তে আধিয়াকে রাজস্ব বিভাগের সচিব হিসাবে নিয়োগ করা হয়৷ যে কোনও বিষয়ে সরাসরি মোদিকে ফোন করার অধিকার ছিল আধিয়ার৷ যে অধিকার মন্ত্রিসভার অনেক তাবড় সদস্যদেরও নেই৷ এক ধাক্কায় দেশের ১৫.৪০ ট্রিলিয়ন টাকাকে রদ্দি কাগজে পরিণত করার পরামর্শ দেওয়াটা তাঁর পক্ষেও কঠিন কাজ ছিল৷ ৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার পর আধানি টুইট করে এই সিদ্ধান্তকে কালো টাকার বিরুদ্ধে নেওয়া সবচেয়ে সাহসী পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেন৷ জানা গিয়েছে, পুরনো বড় নোট বাতিল করার আগে, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে গোটা দেশ ঘুরে এই বিষয়ে গবেষণা চালানো হয়৷ প্রধানমন্ত্রীর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলি ও তাঁর অ্যাপে জমা পড়া বহু মানুষের মতামত, পরামর্শ, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছিল৷
কিন্তু শুধু পরিকল্পনা করলেই তো হবে না, দেশের মানুষের হাতে বিকল্প নতুন নোট তুলে দেওয়ার ব্যবস্থাও তো করতে হবে৷ প্রধানমন্ত্রী আবেদনে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি৷ স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার অ্যানালিস্টরা চলতি বছেরের এপ্রিল মাসে কেন্দ্রকে আশ্বস্ত করেন, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ধাক্কা কিছু দিনের মধ্যে সামলে নেওয়া যাবে৷ অর্থমন্ত্রকের অনুমতি মিললে, এটিএমগুলিতে ৮ ট্রিলিয়ন টাকার জোগান দেওয়া যাবে৷ মে মাসে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া কেন্দ্রকে জানায়, নয়া ২০০০ টাকার নোটের ডিজাইন তৈরি৷ রয়টার্সের কাছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ আমলা জানিয়েছেন, চূড়ান্ত গোপনীয়তা বজায় রেখে ঠিক হয়, ১৮ নভেম্বর নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী৷ কিন্তু অর্থমন্ত্রক, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরের যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নোট ছাপানো, নোট সরবরাহ ও রাখঢাক অন্যদের নজর এড়ায়নি৷ নোট বাতিলের খবর যাতে কোনওভাবেই ফাঁস না হয়ে যায়, তাই তড়িঘড়ি ৮ নভেম্বর রাতে প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে বড় নোট বাতিল বলে ঘোষণা করেন৷ সেই নোট বাতিলের এক মাস সদ্য পেরিয়ে এসেছে দেশ৷ প্রধানমন্ত্রী সকলের কাছে ৫০ দিনের সময় চেয়ে নিয়েছেন৷ যে সাধু উদ্দেশ্যে তাঁর এই বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত, সেটি কতদূর ফলপ্রসূ হয়, সেদিকেই এখন নজর প্রত্যেকের৷
The post ৮ নভেম্বর নয়, তবে নোট বাতিল করার কথা ছিল কবে? appeared first on Sangbad Pratidin.