আট বছরের প্যালেস্তিনীয় বালিকার চুল ঝরে যাচ্ছে অনবরত। লোকে খেপায় ‘টাকলা’ বলে। কেন পড়ছে চুল? না, যুদ্ধের অফুরান আতঙ্ক!
খবরের কাগজের পাতায় ‘গোপনে মদ ছাড়ানো’-র বিজ্ঞাপনের সঙ্গে যদি কেউ এঁটে উঠতে পারে, তা নিঃসন্দেহে কেশবতী তেলের নানা অ্যাড-বাহার। ঘন, কালো, রেশম-নরম চুলের প্রত্যাশা যে জনচিত্তে কত গভীরভাবে সুপ্ত, সে-ও বিজ্ঞাপন থেকে বোঝা যায় বইকি। তবে তেল না শ্যাম্পু, কন্ডিশনার না ডাই– কোনটা যে ঘন ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য শ্রেষ্ঠ, নির্ভুলভাবে সেটা কে বলবে? কেননা, প্রতিটি আইটেম একই দাবি করে। ফলে বিভ্রান্ত হওয়ার কারণ আছে।
চুল– রূপের অন্যতম নিরিখ। বেণী দুলিয়ে যাওয়া কিশোরীর প্রতি পুরুষ-মন কীভাবে অাকৃষ্ট হয়, তার ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত বাংলা সাহিত্যে রয়েছে। একসময় পাড়ার সেলুনের লম্বা আয়নায় যত্ন করে আটকানো থাকত সিনেমার প্রথিতযশা নায়কদের ছবি। রাজেশ খান্না থেকে অমিতাভ বচ্চন, মিঠুন চক্রবর্তী থেকে সঞ্জয় দত্ত, শাহরুখ খান থেকে ‘দিল চাহাতে হ্যায়’-র অক্ষয় খান্না। এসব ছবি অনবরত ক্লায়েন্টদের ইশারা দিত– চুলের ছঁাটটি কেমন হওয়া উচিত। দুর্গাপুজোর মাস দেড়েক আগে থেকে ধুম পড়ে যেত, বাজারের হাওয়া বুঝে চুলের ছঁাটটিকে সেরকম করে তোলার।
[আরও পড়ুন: ত্রিপুরার কালীমন্দিরে দুষ্কৃতী হামলা, পালটা ক্ষোভের আগুনে পুড়ে ছাই ডজন খানেক বাড়ি]
অবশ্য বছর কুড়ি আগে শহরতলিতে মেয়েদের ‘সঁালো’ কনসেপ্ট সেভাবে পল্লবিত হয়নি। মেয়েলি সৌন্দর্যের পরাকাষ্ঠা রূপে তাই কোমর-ছাপানো ঘনবদ্ধ চুলের ঢালকেই বোঝানো হত তখন। সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে চুল নিয়ে খোলামেলা আলোচনার পরিসর তৈরি হয়েছে। সঁালোতে এখন মেয়েরা নয়, ছেলেরাও নিয়মিত যাতায়াত করে। কেশ-সৌন্দর্য যে কত সংবেদনশীল হতে পারে, তার প্রমাণ ইন্দ্রলুপ্ত মানুষের মনোদুঃখ নিয়ে তৈরি হওয়া সিনেমা। আয়ুষ্মান খুরানা অভিনীত ‘বালা’ সেদিক থেকে একটি সামাজিক ভাবনার নির্মাণ।
সামা তাবিল যদিও ‘বালা’ দেখেনি। আট বছরের এই প্যালেস্তিনীয় মেয়েটির একসময় একমাথা রেশম-রেশম চুল ছিল। এখন সব উধাও। অনুদার লোকজন তাকে ‘টাকলা’ বলে। কেউ-বা ধরে নেয়, সে বুঝি ক্যানসারে আক্রান্ত। কারণ কর্কট রোগে চুল ঝরে যায়। সামা এখন মোবাইলে নিজের পুরনো ছবি দেখে কঁাদে। কীভাবে ঝরে গেল তার সব চুল? বাড়ির লোকের বক্তব্য, ডাক্তার নাকি বলেছে, ঘটমান যুদ্ধের আতঙ্কে। যেভাবে ইজরায়েলের আক্রমণের আতঙ্কের সঙ্গে জুঝে নিত্য ঘর করতে হয় প্যালেস্তিনীয়দের, তাতে স্ট্রেস স্বাভাবিক। আর, সামারও চুল পড়ে যাওয়ার কারণ সেই অত্যধিক স্ট্রেস। ভাল-ভাল খাবার ও ভিটামিন-সমৃদ্ধ ওষুধ খেতে হবে, এই হল সামার প্রতি ডাক্তারদের নিদান। কিন্তু প্রথমত, সে এসব পাবে কী করে? দ্বিতীয়ত, যুদ্ধের সাইরেন কি জীবনযাত্রাকে স্বাভাবিক রেখেছে?
[আরও পড়ুন: ‘ব্যক্তিগত অভিমত’, কৃষক আন্দোলন নিয়ে কঙ্গনার বিতর্কিত মন্তব্যের পাশে নেই BJP]
অন্ন-বস্ত্র ও বাসস্থানের সংকুলান করতে প্যালেস্তাইনের মানুষজন হিমশিম খাচ্ছে। সঙ্গে রয়েছে অফুরান শঙ্কা। আর কতদিন ধরে চলবে এই যুদ্ধ? ‘গিফট অফ দ্য মাজাই’ গল্পে চিরুনি ও চুলের অনুপম জোড় তৈরি হয়েছিল– প্রেমের জন্য আত্মত্যাগের মূল্য বোঝাতে। আর, সামার করুণ গল্পটি দেখাচ্ছে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে আনুষঙ্গিক ক্ষয়-ক্ষতির বিচিত্র বহর!