shono
Advertisement
Aravalli

আরাবল্লির ‘প্রকৃত’ সংজ্ঞা ও আইনি ব্যাখ্যা, স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন

স্বচ্ছতা ছাড়া কোনও ব্যাখ্যাই কি বিশ্বাসযোগ্য?
Published By: Kishore GhoshPosted: 02:51 PM Dec 30, 2025Updated: 02:51 PM Dec 30, 2025

আরাবল্লির ‘প্রকৃত’ সংজ্ঞা কি আদৌ আইনি ব্যাখ্যার উপর এতটা নির্ভর করে? স্বচ্ছতা ছাড়া কোনও ব‌্যাখ‌্যাই কি বিশ্বাসযোগ‌্য?

Advertisement

আরাবল্লি পর্বতমালায় খনন নিয়ে সরকারের সাম্প্রতিক অবস্থান, এবং সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ এক গভীর নীতিগত সংকটের দিকেই ইঙ্গিত করছে। ২০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট নতুন খনন লিজ স্থগিত রেখে যে-নির্দেশ দিয়েছে, তা আপাতদৃষ্টিতে ভারসাম্যপূর্ণ মনে হলেও এর অন্তর্নিহিত যুক্তি ও প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। দীর্ঘ দিন ধরে নির্বিচার খনন, পাথর কাটা ও বন উজাড়ের ফলে আরাবল্লি অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ জলস্তর বিপজ্জনকভাবে নেমে গিয়েছে, পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে, দিল্লি ও হরিয়ানার বায়ুদূষণ আরও তীব্র হয়েছে। তবু শীর্ষ আদালত সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার পথে না গিয়ে ‘অবৈধ খনন বাড়বে’ এই যুক্তিতে কেবলমাত্র ‘ক্রিটিক্যাল মিনারেল’-এর ক্ষেত্রে সরকারি অনুমোদনসাপেক্ষে খননের কথা বলেছে।

এই যুক্তি আসলে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক দুর্বলতাকেই স্পষ্ট করেছে। অর্থাৎ যে-রাষ্ট্র আইন কার্যকর করতে অক্ষম, সে উন্নয়নের প্রয়োজন দেখিয়ে পরিবেশ ধ্বংসের ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত। অন‌‌্যদিকে, আরাবল্লিতে খনন বন্ধ হলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির রাজস্ব ক্ষতি হবে– এই বাস্তবতাও আদালত স্বীকার করেছে। এখানেই মূল দ্বন্দ্ব– যদি রাজস্বই ‘লক্ষ‌্য’, সেখানে নিয়ন্ত্রণ আরোপ কার্যত স্বার্থের সংঘাত। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের ‘আরাবল্লি গ্রিন ওয়াল’ প্রকল্পের প্রচার এক ধরনের নীতিগত দ্বিচারিতা। বন উজাড়ের ক্ষতি যে পরিকল্পিত পুনর্বনায়নের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্যভাবে পূরণ করা যায় না, তা পরিবেশ বিজ্ঞানের মৌলিক সত্য। তবু এই সত্যকে উপেক্ষা করেই সবুজ প্রাচীরের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে, যেন গাছ লাগালেই পাহাড় কাটা মাপ হয়ে যায়! বিষয়টি আরওই জটিল হয়েছে আরাবল্লির ‘সংজ্ঞা’ নিয়ে।

বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রস্তাবানুযায়ী, স্থানীয় ভূপ্রকৃতির তুলনায় ১০০ মিটার বা তার বেশি উচ্চতার পাহাড়কেই আরাবল্লির অন্তর্ভুক্ত ধরা হলে, ২০১০ সালের ‘ফরেস্ট সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’-র হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৯২ শতাংশ পাহাড়ই এই পরিসরের বাইরে চলে যাবে। ভূতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিকভাবে নির্ধারিত একটি পর্বতমালার সীমানা যদি আইনি ব্যাখ্যার উপর এতটা নির্ভরশীল হয়, তবে তা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। অতঃপর, আরাবল্লি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের ২০ নভেম্বরের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।

কিন্তু সবচেয়ে সমস্যাজনক দিক হল, এসব সিদ্ধান্ত ও তথ্যের বড় অংশই ‘গোপন’। ফলে সাধারণ মানুষকে একপক্ষের বক্তব্যের উপর অন্যপক্ষের তুলনায় বেশি ভরসা করতে বলা হচ্ছে। পরিবেশ-নীতির ক্ষেত্রে এমন বিশ্বাসনির্ভর ব্যবস্থা কখনওই স্বাস্থ্যকর হতে পারে না। সরকার হয়তো বলবে যে, আরাবল্লির এই সংজ্ঞা কেবল খনন লিজের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, গাছ কাটা বা আবাসন প্রকল্পে নয়, কিন্তু যখন সরকারের বায়ুদূষণ মোকাবিলার রেকর্ডই জনমনে অনাস্থার সৃষ্টি করেছে, তখন স্বচ্ছতা ছাড়া এই ব্যাখ্যা বিশ্বাসযোগ্য হবে না। আরাবল্লির ভবিষ্যৎ আসলে একটি পাহাড়ি অঞ্চল রক্ষার প্রশ্ন নয়, রাষ্ট্র সতি‌্যই পরিবেশ সংরক্ষণে সৎ ও সক্ষম কি না, সেই পরীক্ষা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • এই যুক্তি আসলে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক দুর্বলতাকেই স্পষ্ট করেছে।
  • কিন্তু সবচেয়ে সমস্যাজনক দিক হল, এসব সিদ্ধান্ত ও তথ্যের বড় অংশই ‘গোপন’।
  • ২০১০ সালের ‘ফরেস্ট সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’-র হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৯২ শতাংশ পাহাড়ই এই পরিসরের বাইরে চলে যাবে।
Advertisement