shono
Advertisement
Khaleda Zia

বেগম জিয়ার আপসহীন মনোভাবই ভরসা বিএনপি-র

কলম ধরলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মহম্মদ মজিবুর রহমান।
Published By: Biswadip DeyPosted: 01:37 PM Dec 31, 2025Updated: 01:37 PM Dec 31, 2025

বেগম জিয়ার অদম‌্য মানসিকতাই তঁাকে এক অনন‌্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল। বেগম খালেদা জিয়া কেবল একটি দলের নেত্রী নন। তিনি জাতীয় নেত্রী। বাংলাদেশের একজন আইকনে পরিণত হয়ে উঠেছিলেন ।  লিখছেন মহম্মদ মজিবুর রহমান

Advertisement

নীতির প্রশ্নে বরাবরই আপসহীন চরিত্রের বেগম খালেদা জিয়া রহমান। ওঁর এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট‌্যটি বার বারই জনগণের চোখে পড়ছে, লক্ষিত হয়েছে। ওঁর এই তকমাটা ছিল বলেই নয়ের দশকের পরে যখন মনে করা হয়েছিল যে সামরিক সরকার গঠিত হবে, সেনা ক্ষমতায় আসবে– তা কিন্তু হয়নি। বরং বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল। এ ছাড়াও পরে বহু বার সুযোগ এসেছিল ওঁর বিদেশযাত্রার। বেগম জিয়া বিদেশে চলে যেতে পারতেন। চিকিৎসার নাম করেও চলে যেতে পারতেন। কিন্তু যাননি। বরং সাফ জানিয়েছিলেন, তঁার চিকিৎসা এ দেশেই হবে। বলেছিলেন ওঁর ঠিকানা দেশ। বাংলাদেশ। বেগম জিয়ার এই অদম‌্য মানসিকতাই তঁাকে এক অনন‌্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে গত দেড় বছরে আমরা দেখেছি, বেগম খালেদা জিয়া কেবল একটি দলের নেত্রী নন। তিনি জাতীয় নেত্রী। বাংলাদেশের একজন আইকনে পরিণত হয়ে উঠেছিলেন তিনি। একজন কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিলেন।

এখন এদেশে অনেকেই বলেন, দল-মত নির্বিশেষে বেগম জিয়া সকলের নেত্রী। কথাটি কিন্তু কেউ অস্বীকারও করছেন না। এমনকী, এখন যঁারা বিরোধী, তঁারাও না। বেগম জিয়ার গ্রহণযোগ‌্যতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে কোনও বিরোধী দল ওঁর বিরুদ্ধে নেতিবাচক কিছু বলেনি। এমনকী, বাংলাদেশ আর্মিও তাদের ভেরিফায়েড পেজ থেকে বেগম জিয়ার জন‌্য শোকবার্তা পোস্ট করেছে। তার মানে একটাই। তিনি আজ কিংবদন্তি।

বেগম জিয়ার ভাবনা ছিল, স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়বেন। স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়বেন। বর্তমানে দেশের যে ছবি, যে পরিস্থিতি– সেরকমভাবে দেশকে দেখতে তিনি কখনওই চাইতেন না। ওঁর ব‌্যক্তিগত জীবনধারা থেকে শুরু করে ওঁর দলের মতাদর্শ এমন ছিল না। ফলে আমার মনে হয়, বেগম জিয়াকে যঁারা পছন্দ করেন, তঁারা বিএনপি-কে ভোট দেবেন। ওঁর মতাদর্শকে মনে করে ভোট দেবেন। আর যঁারা তঁাকে পছন্দ করতেন না বা এখনও করেন না, তঁার চিন্তাধারার সঙ্গে যঁাদের ভাবনা-চিন্তা খাপ খায় না– তঁাদের ভোটের অধিকাংশই বিপক্ষে যাবে। কাজেই, অতি-অবশ‌্যই বেগম জিয়ার প্রয়াণ আগামী নির্বাচনে বিএনপি-র ভোটব‌্যাঙ্কে প্রভাব ফেলবে। তা সে প্রত‌্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, যে কোনওভাবে।

বেগম জিয়ার মৃতু‌্যতে সহানুভূতিই কি বিএনপি-র ভোটে জেতার এক্স ফ‌্যাক্টর হতে পারে? জল্পনা বাড়ছে। না। এখানে সহানুভূতির কোনও প্রশ্নই নেই। বাংলাদেশের মানুষ অনেক বেশি সচেতন। যে ‘মা মারা গিয়েছে, তাই ছেলেকে সহানুভূতির ভোট দেওয়া হবে’– এমন কিছুর কোনও অবকাশ নেই এখানে। তা ছাড়া বিষয়টা এত সহজও নয়। তবে একদিক থেকে বেগম জিয়া-পুত্র তারেক রহমানের জন‌্য বিষয়টি ইতিবাচক হবে এই কারণে যে তিনি শুধু বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে নন। তিনি ওই দলটারও (বিএনপি) নেতা। বেগম জিয়ার যে দৃঢচেতা, আপসহীনতা এবং কিংবদন্তি ভাবমূর্তি– এর ‘ম‌্যক্সিমাম ওয়েভ’টা যাবে বিএনপি-র দিকে। খুব স্বাভাবিকভাবেই। এটা ‘সিমপ‌্যাথি’ নয়। মতাদর্শের প্রশ্ন।

বিএনপি কি আগামী নির্বাচনে বিপুল ভোট পাবে, না নেতৃত্বের অভাবে টালমাটাল হয়ে পড়বে? এখনও পর্যন্ত যা স্ট‌্যাটিসটিক্স, তাতে স্পষ্ট যে, বিএনপি ভালোই ভোট পাবে। বিপুল হারে ভোট পাবে। ‘ল‌্যান্ডস্লাইড’ জয় বিএনপি-র হবে, এটাই আশা করা যায়– যদি না কোনওরকম কারচুপি, কোনওরকম কারসাজি করা হয়। বা দেশি/বিদেশি, কোনওরকম ‘মেকানিজম’ করা হয়।

এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, বর্তমানে যে ধরনের পরিস্থিতি বাংলাদেশে চলছে, যে ধরনের আচরণ করা হচ্ছে, দেশের অধিকাংশ মানুষ কিন্তু তা পছন্দ করেন না। মধ‌্যবিত্তদের অধিকাংশই পছন্দ করেন না। সকলে চান, ব‌্যক্তিগত জীবনে যে যে ধর্ম পালন করেন, তা-ই করবেন। ধর্মের নামে কোনও কিছু চাপিয়ে দেওয়া হবে না। এটা বাংলাদেশের মানুষেরও পছন্দ না। এখানকার মানুষ উদারপন্থায় বিশ্বাসী। ভদ্রতায় বিশ্বাসী। সেই জায়গাটা এখন একমাত্র বিএনপি-ই ধরে রাখতে পারবে বলে জনমত। ফলে এবারের ভোটে সংখ‌‌্যাগরিষ্ঠ সমর্থন বিএনপি-র দিকে যাবে বলে মনে হয়।

সদ‌্য দেশে ফিরেছেন তারেক রহমান। রাজপাট গুছিয়ে নিতে পারবেন? এখন এটাও এক প্রশ্ন। প্রথমত, তারেক রহমান দেশে ফিরেছেন এক সপ্তাহ হল ঠিকই। কিন্তু এখন তঁার যে কথাবার্তা, চালচলন–এঁকে কিন্তু সতেরো বছর আগের সেই তারেক রহমানের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে ভুল হবে। এখনকার খালেদা-পুত্র সতেরো বছর আগের খালেদা-পুত্র নন। এঁর কথাবার্তা, আচার-আচরণ সব কিছু বদলে গিয়েছে। অনেক পজিটিভনেস দেখা যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে দেখছি, তিনি বিএনপি কর্মী-সমর্থকদের বার বার বলছেন, ‘‘আপনারা ভিড় করবেন না। জোরে কথা বলবেন না। দেখবেন, মানুষের যাতে কষ্ট না হয়।’’ কিন্তু এসব কিছু সত্ত্বেও ঝঁুকি তো কিছু থেকেই যায়! এখন মায়ের মৃতু‌্যর পর তিনি বিএনপি-কে গুছিয়ে নিতে পারবেন কি না, তা নির্ভর করছে তিনি এখন কাদের সাহচর্যে আসবেন। তিনি কি সতি‌্যকারের বাংলাদেশের ভালো যঁারা চান, বিকশিত বাংলাদেশ যঁারা চান– তঁাদের সাহচর্যে থাকছেন? না কি যঁারা দুর্নীতিবাজ, কলুষিত, তঁাদের অগ্রাধিকার দিচ্ছেন? তা ছাড়া ওঁর দলের মধে‌্যও তো সকলে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নন। সুবিধাবাদীও তো অনেকে আছেন। ফলে তারেক কাদের সান্নিধে‌্য আসছেন, কাদের কথায় গুরুত্ব দিচ্ছেন– এর উপর নির্ভর করবে বিএনপি-র ভবিষ‌্যৎ কী হবে? বেগম জিয়া-পুত্র যদি কোনও রকমের ‘ট্র‌্যাপ’-এ পড়ে যান, তাহলে ওঁর লক্ষ‌্যভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। তবে মনে হয়, গত সতেরো বছরে তিনি অনেক পরিশীলিত হয়েছেন, বিকশিত হয়েছেন, প্রজ্ঞার অধিকারী হয়েছেন। দলকে অবশ‌্যই নেতৃত্ব দিতে পারবেন।

বেগম জিয়ার মৃতু‌্যতে বাংলাদেশে জামাত বা অন‌্যান‌্য শক্তিদের ক্ষমতা কি বাড়বে? এই জল্পনা তৈরি হয়েছে। তবে আমার মনে হয় এটা ঠিক নয়। বেগম জিয়ার প্রয়াণের সঙ্গে জামাতের উত্থান-পতনের সম্পর্ক নেই। তিনি এই সব ক্ষেত্রে মধ‌্যপন্থী ছিলেন। জামাতকেও গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বেগম জিয়া তঁার ব‌্যক্তিগত জীবনযাপন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় নীতি পালন– কোনওটাই কিন্তু ইসলাম বা জামাত দ্বারা প্রভাবিত হয়ে করেননি। বেগম জিয়া যা করেছেন, নিজস্ব ভাবে করেছেন। নিজস্ব স্টাইলে করেছেন। বরং আমার মনে হয়, বেগম জিয়ার মৃতু‌্যতে বিএনপি-র ভোটব‌্যাঙ্কে প্রভাব পড়বে। ওঁকে যঁারা পছন্দ করেন, তঁারা ওকেই ভোট দেবেন। জামাতকে নয়।

(লেখক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক)

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • বেগম জিয়ার অদম‌্য মানসিকতাই তঁাকে এক অনন‌্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল।
  • বেগম খালেদা জিয়া কেবল একটি দলের নেত্রী নন। তিনি জাতীয় নেত্রী।
  • বাংলাদেশের একজন আইকনে পরিণত হয়ে উঠেছিলেন । 
Advertisement