অপরাজিতা সেন: তৃণমূল কংগ্রেস এক এবং ঐক্যবদ্ধ পরিবার। এ নিয়ে বিরোধীদের মাথা ঘামানোর কারণ নেই। উন্নয়নের কাজকে সামনে রেখে ইতিবাচক রাজনীতি নিয়ে তৃণমূল এগোচ্ছে এবং এগোবে। মানুষ সমর্থন করবেন। ভোট আসা মানে বিরোধীদের পরাজয়, তাই হতাশা থেকে তারা নিজেদের কাজ ছেড়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কুৎসা নিয়ে ব্যস্ত।
ইদানীং সংবাদমাধ্যমে তৃণমূলের সিনিয়র-জুনিয়র নিয়ে বিতর্ক তোলার চেষ্টা দেখছি। কথা হল, এখানে বিতর্কের কিছু নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে এই দল তৈরি। তাঁর লড়াই, আত্মত্যাগ, আন্দোলন, উন্নয়নই তৃণমূলের সম্পদ। তিনিই শেষ কথা এবং মুখ। এটা সর্বজনবিদিত। দশকের পর দশক, এখনও পরীক্ষিত সত্য। তিনি নিজেই বঙ্গ রাজনীতিতে পাঁচ-ছটি প্রজন্ম তৈরি করে দিয়েছেন। এবং সময়ের দাবি মেনেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরণ। নেত্রীর যোগ্য সেনাপতি হিসাবে উঠে এসেছেন তিনি। একাধিক পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ, বিরোধীদের গলার কাঁটা। তাই তৃণমূল বলে, মমতাদির নেতৃত্বে, অভিষেকের সেনাপতিত্বে লড়াই চলবে। এতে সংঘাত কোথায়? এ তো সময়োচিত বাস্তব। মমতাদিকেই নেত্রী মানে অভিষেক এবং অভিষেককে স্নেহ করেন নেত্রী। দলে সিনিয়র-জুনিয়র দুই প্রজন্মেরই সহাবস্থান। সিনিয়রদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে, আবার নতুনদের প্রাসঙ্গিক ভাবনা, গতিকেও এগিয়ে দেওয়া দরকার। এরা একে অপরের পরিপূরক। নেত্রী নিজে বলছেন, “পুরনো চাল ভাতে বাড়ে আর নতুন চাল আগে বাড়ে। সকলকেই চাই।” তাই তৃণমূল এভাবেই চলবে। এত বড় পরিবার, কোথাও কোনও ইস্যুভিত্তিক মতপার্থক্য তুচ্ছ। বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস সব দলে এই ধরনের সমস্যা প্রকট। তৃণমূলে উল্টো, সকলের কাছেই শেষ কথা মমতাদি। আর অভিষেকের সেনাপতিত্বে যে কাজ, সে তো নেত্রীর হাত শক্তিশালী করার জন্যই। ফলে বিরোধীরা তৃণমূল নিয়ে যে এত সময় নষ্ট করছেন, ভোটের সময় দেখবেন একটা সুসংহত তৃণমূল মানুষের দরবারে দাঁড়িয়ে আছে।
[আরও পড়ুন: নতুন বছরে লক্ষ্মীলাভ করতে ১২ রুটে পিপিপি মডেলে চলবে বাস]
একটা দল ছাব্বিশ পার হয়ে সাতাশ বছর, বড় কম কথা নয়। এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃতিত্ব। একটা সময় বিরোধী রাজনীতি; এখন রাজ্যে শাসক, জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধী; সাফল্যের সঙ্গে চলছে তৃণমূল। কেন্দ্রের যাবতীয় চক্রান্ত সামলে। আগে তৃণমূলের মূল সম্পদ ছিল আবেগ। এখন তার সঙ্গে আছে বুথভিত্তিক সংগঠন, পেশাভিত্তিক শাখা ও গণসংগঠন। সময় কাটছে। যুগ বদলাচ্ছে। নতুনদের আসা স্বাভাবিক। এখানে প্রবীণ, নবীন মেলবন্ধন জরুরি, এবং সেটা হচ্ছেও। কোনও কোনও বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিকেন্দ্রিক সমস্যাকে সামগ্রিকতায় ধরা যায় না। নেত্রী সবার উপরে। তাঁর যা পরিশ্রম ও ভাবনার ক্ষমতা, সেটা ঈশ্বরের দান। তার সঙ্গে রয়েছে অভিজ্ঞতা। অভিভাবকের মতো সকলকে নিয়ে চলতে চান। কিন্তু বাকি সিনিয়রদেরও যেমন বুঝতে হবে নতুনদের কাজের সময়-সুযোগ এসেছে; নতুনদেরও মানতে হবে সিনিয়রদের কাজের অবদানেই আজকের সাফল্যের জমি। কিন্তু সেটা তো ধরে রাখা দরকার। দ্রুত দিন বদলাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে কাজের পদ্ধতি, মাধ্যম। বদলাচ্ছে মানুষের প্রয়োজনের সংজ্ঞা। বদলে যাচ্ছে জীবনের অগ্রাধিকার। ফলে এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে দলকেও সাংগঠনিক কাঠামো, পরিকল্পনা বদলাতে হবে। সময়ের উল্টোদিকে চলা যায় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতিত্বে তৃণমূল কংগ্রেস এই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলার চ্যালেঞ্জটা নিচ্ছে, তার ইঙ্গিত স্পষ্ট। এই মিশ্রণটা বিঘ্নিত হলে প্রক্রিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্ব বিষয়টা দেখছেন। ফলে এসব নিয়ে মাথা ঘামালে বিরোধীদের খানিকটা সময় নষ্টই হবে, তার বেশি কিছু নয়।
