রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিতে কৃষিজ পণ্যের বাজারে দামে সাময়িক লাগাম। কিন্তু এই রক্ষাকবচ কত দিনের স্বস্তি ও নিশ্চয়তা দেবে?
‘বারো মাসে তেরো পার্বণ’-সমৃদ্ধ বাঙালি জাতির নোলা-ঝরা ‘টেস্ট বাড’-ও যে বৈচিত্রময় ও বহুধাবিস্তৃত, তা নতুন করে বলার নয়। তাই, বাংলার আনাজ-আমিষ বাজার কেবলই নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সংস্থানের হাট হয়ে থাকেনি, হয়ে উঠেছে স্থানীয় ইতিহাস, মানুষের ধরনধারণেরও পাঠশাল। এলাকার সংস্কৃতি থেকে সমাজের পরিবর্তন সবচেয়ে সহজ ও সূক্ষ্মভাবে ধরা পড়েছে এই বাজারহাটের পণ্য ও মানুষের আনাগোনার আড়ালে। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘বাজার সফর’ যার প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত।
কিন্তু এসবই যেন হালে ধ্রুপদী অতীত ঠাওরাচ্ছে। ছাপোষা বাঙালি আগে যেভাবে ভাবত, এ-বেলা ও-বেলা মিলিয়ে কী খাওয়া হবে, কিংবা কার কাছে গেলে পরে ভালো মাছটা, ভালো আনাজটা পাওয়া যাবে, কিংবা কার কাছে মিলবে এমন আনাজ যা আর কারও কাছে নেই– সেসব গল্পময় দিনকাল পর্যবসিত হয়েছে ‘বেলা পড়ুক, বাজার যাব’ আখ্যানে। অর্থাৎ, আনাজ যখন উদ্বৃত্ত অবস্থায়, পচে আসছে, তখন কিছু কমে পাওয়ার আশায় বাজার যাওয়া। আগুন বাজারে বৈচিত্রও প্রায় নেই।
[আরও পড়ুন: ‘বাড়ির বাইরে বেরবেন না’, অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশে নাগরিকদের সতর্কবার্তা ভারতের]
অনাবৃষ্টি, বেসামাল ঋতু পরিবর্তনের হেতু চাষের অবস্থা যে ভালো নয়, এ-কথা বাসি। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগকে হাতিয়ার করে সেই সংকট যেভাবে মুনাফাবৃদ্ধির খেলা হয়ে দঁাড়িয়েছে, তা কালোবাজারির নবকলেবরে প্রত্যাবর্তন মাফিক। এমনিতেই সামগ্রিক অর্থনৈতিক সংকটে মানুষের হাত মুঠো, উপর্যুপরি উচ্চ মূলে্যর বাজার। রসনাময় বাঙালি জিভ গুটিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও পেটকে ভুখা রাখবে কী করে! তাই, তার সুযোগ নেওয়া চলছে পুরোদমে, আর আগুন বাজারে চলছে হাত পোড়ানোও। অথচ অন্যদিকে, কৃষক শ্রেণির মানুষের অভিযোগ রয়েছে সেই একই। ফলনের পড়তা কুলোচ্ছে না! যে-দামে ফসল কৃষকের থেকে বাজারে পৌঁছচ্ছে, তার বহুগুণ মূলে্য বিক্রি হচ্ছে পাইকারি বা খোলা বাজারে। তাহলে এই বানিয়ে তোলা সংকট স্থায়ী কেন? আগুন দামের টাকা যাচ্ছে কোথায়?
দীর্ঘকাল এই হেলদোলহীন পরিস্থিতিতে অবশেষে হস্তক্ষেপ করেছেন রাজে্যর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। ‘মুনাফাখোর’ দাগিয়ে তঁার অভিযোগের আঙুল মধ্যসত্ত্বভোগীদের দিকেই। ভারতের কৃষিজ পণে্যর অর্থনীতিতে যা চিরকালীন বিতণ্ডা। ন্যায্য মূলে্যর প্রাপ্তির দাবিতে কৃষকের হাহাকার এবং সেই পণে্যর আপামর মধ্যবিত্ত ক্রেতার মধি্যখানে বায়বীয় হাঙর হয়ে আছে যারা।
[আরও পড়ুন: মোদির সঙ্গে বৈঠক শাহের, রাজ্যপালের দ্বারস্থ যোগী, উত্তরপ্রদেশে কি বড়সড় বদল?]
১০ দিনের মধে্য কৃষিপণে্যর দাম কমানোর নির্দেশ দিয়ে বাজারে টাস্ক ফোর্স, পুলিশি নজরদারির তামঝামে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন বাজারে পণে্যর দাম কমার নিশ্চয়তা মিলছে বলে জানা যাচ্ছে। প্রশাসনিক স্তরে এই সচেতনতা কুর্নিশযোগ্য। কিন্তু এমন হুঁশিয়ারিতে কত দিন আটকানো যাবে দুর্নীতি ও নৈতিক অবমূল্যায়নের গ্রাফটিকে? সার্বিকভাবে এই পরিস্থিতির অবসান ঘটানো বা ভারসাম্য আনার পন্থা কি নেই? মানুষ কি তবে এবার মানচিত্র খাবে?