shono
Advertisement
Days of Love

সমাগত প্রেমের দিন!

কথার খেলাপ মানে প্রেমেরও খেলাপ।
Published By: Kishore GhoshPosted: 09:16 PM Feb 10, 2025Updated: 09:23 PM Feb 10, 2025

সমাগত প্রেমের দিন। প্রেম ও প্রতিশ্রুতি হাতে হাত রেখে চলে। মুখের কথায় জ্ঞাপিত হয় ভরসা। কথার খেলাপ মানে প্রেমেরও খেলাপ।

Advertisement

রাজশেখর বসু বর্ণনা করেছেন সেই যক্ষের শরীর– ‘তালবৃক্ষের ন্যায় মহাকায়, বিকটাকার, সূর্য ও অগ্নির ন্যায় তেজস্বী।’ ইনি প্রথমে বকের রূপ ধারণ করে সরোবরে ঘুরছিলেন। ভীম-সহ চার পাণ্ডব তাই পাত্তা দেননি। এঁর সাবধানবাণী অমান্য করে সেই সরোবরের জল খেতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। যুধিষ্ঠির ঠান্ডা মাথার। চার ভাইয়ের পরিণতি দেখেই বুঝে যান, বিষয়টি জটিল। একটি সামান্য বকের পক্ষে চারজন মহারথীকে বধ করা সম্ভব নয়। তিনি অনুরোধ করলেন বককে– স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করতে। তখন যক্ষ সামনে এলেন। সে-রূপ কেমন তা ইতিপূর্বে বিবৃত হয়েছে। তা, এরপর যক্ষের সঙ্গে যুধিষ্ঠিরের রফা হল। মানে, মৌখিক চুক্তি।

কিছু কূট প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। ঠিকঠাক পারলে, তবে সরোবরের জল খেতে পাবেন। শুরু হল যক্ষের সঙ্গে যুধিষ্ঠিরের সেই বিখ্যাত দার্শনিক সংলাপ, যা অনুভব ও বৌদ্ধিক আবেদনে এখনও অমলিন। কী সব বিচিত্র প্রশ্ন রাখা হয়েছিল। ‘কী ত্যাগ করলে লোকপ্রিয় হওয়া যায়?’, ‘সুখী কে?’, ‘আশ্চর্য কী?’ যুধিষ্ঠির কিন্তু প্রতিটি প্রশ্নের যথাযথ জবাব দাখিল করেন। বলেছিলেন– ‘অভিমান ত্যাগ করলে লোকপ্রিয় হওয়া যায়।’ বলেছিলেন– ‘যে ব্যক্তি ঋণী নয়, প্রবাসে থাকে না, দিনের অষ্টম ভাগে শাকান্ন খায় নিজের ঘরে, সে-ই সুখী।’ বলেছিলেন– ‘প্রাণিগণ প্রত্যহ যমালয়ে যাচ্ছে, তথাপি অবশিষ্ট সকলে চিরজীবী হতে চায়, এর চেয়ে আশ্চর্য কী আছে?’ আরও অনেক প্রশ্ন ছিল। বিস্তারে যাওয়ার আপাতত প্রয়োজন নেই।

মোটকথা, যুধিষ্ঠির উতরে যেতে– যক্ষ তাঁকে বললেন– তোমার উত্তরে খুশি হয়েছি। তুমি ‘মৃত’ চার ভাইয়ের থেকে কোনও একজনকে বাঁচাতে পারো। যুধিষ্ঠির প্রস্তাব রাখেন নকুলকে বাঁচিয়ে দিতে। যক্ষ প্রবল অবাক হন। বলেন, ভীম তোমার প্রিয়। অর্জুন তোমার অবলম্বন। এঁদের না-বাঁচিয়ে কেন নকুলকে প্রাণে বাঁচাতে চাইছ? যুধিষ্ঠিরের উত্তরটি ছিল যেন-বা জ্যোৎস্নায় প্লাবিত– কুন্তী ও মাদ্রী দু’জনেই আমার মা। কুন্তীর এক ছেলে আমি জীবিত। এখন, নকুলকে যদি জীবনদান করেন, তাহলে মাদ্রীরও এক ছেলে বেঁচে থাকবেন। যক্ষ খুশি হয়ে চার ভাইকেই বাঁচিয়ে দেন, আর জানিয়ে দেন, তিনি আসলে ‘ধর্ম’। পরীক্ষা নিচ্ছিলেন।
এই গল্পের মধ্যে কল্পনার যে-বুনন রয়েছে, তা যেমন অসামান্য, তেমনই পূর্বাপরের প্রতিটি পরিণতি আবার নির্ভর করে আছে– মুখের কথায়, প্রতিশ্রুতি পালনের অঙ্গীকারে।

যদি সদুত্তর দাও, জল খেতে পারবে। এই যে মুখের কথা, ধরে নেওয়া হচ্ছে, এটিই অলঙ্ঘ্য। এখানে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ঘটনা ঘটবে না। কাগজে-কলমে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, তার পাথুরে মূল্য হয়তো অনেক। বাস্তব পৃথিবীর কেজো সংসারে এমন লিখিতং-পঠিতং করে নেওয়ার দরকারও নিশ্চিতভাবে রয়েছে। কিন্তু এই কর্পোরেট ধাঁচার বাইরে যে বিরাট ক্ষেত্র রয়েছে সংযোগের, সেখানে মুখের কথার ওজন বেশি। সেই পৃথিবী আবর্তিত হয় মুখের কথার ঔজ্জ্বল্যে। প্রেমে ও প্রতিহিংসায়, তপস্যায় বা সম্ভোগে– মহাভারতের গল্পে বারবার প্রতিধ্বনিত মুখের কথার সারবত্তা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • কিছু কূট প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। ঠিকঠাক পারলে, তবে সরোবরের জল খেতে পাবেন।
  • তেমনই পূর্বাপরের প্রতিটি পরিণতি আবার নির্ভর করে আছে– মুখের কথায়, প্রতিশ্রুতি পালনের অঙ্গীকারে।
Advertisement