পাকিস্তানের সিনেমায় পাকিস্তানের এমন একটি ক্ষত ও ক্ষমতাঘর কখনও দেখানো হয়নি, যা ভারতীয় সিনেমায় উঠে এল। পন্থাটি সরলীকৃত।
'ধুরন্ধর' সিনেমার মাধ্যমে আদিত্য ধর বক্স অফিসে যে চমক দিয়েছেন, তার রেশ নতুন বছরে অব্যাহত থাকলে, অবাক হওয়ার কারণ নেই। তিনি অনেক দিনই বলিউডের সঙ্গে যুক্ত। ২০১০ সালে বেরনো 'আক্রোশ' ছবির ডায়ালগ লিখেছিলেন। 'আর্টিকল ৩৭০' ও 'বারামুলা'-র মতো সিনেমার স্ক্রিনরাইটার। কাশ্মীরি পণ্ডিত হওয়ার সুবাদে কাশ্মীরের কৃষ্টি ও রাজনৈতিক উত্তাপের প্রতি সহজাত আকর্ষণ রয়েছে। ২০১৯ সালে 'উরি দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' বানিয়ে তিনি তোলপাড় ফেলে দেন।
কেন্দ্রের সরকারপন্থী দলটির বাজনৈতিক দৃষ্টিকোণের ধারক ও বাহক হয়ে ওঠার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' হয়নি বলেই দেশের উদারপন্থী একটি মহল সরব ছিল। সেখানে কী করে স্ট্রাইক ঘটানো হয়েছে তা সিনেমায় দেখানোর অর্থ তো সমাজের বড় অংশকে তথাকথিত 'না-ঘটা' ও 'সাজানো' ঘটনার প্রতি লেলিয়ে দেওয়া। 'প্রোপাগান্ডা' সিনেমার বর্গে 'উরি'- কে সে কারণে দ্রুত নথিভুক্ত করা হয়। হাতেগোনা দু' একজন বাদে প্রায় কাউকেই বলতে শোনা যায়নি যে, 'উরি'-র নির্মাণ অত্যন্ত স্মার্ট। অনাবশ্যক আবেগ ও যুদ্ধ নিয়ে অতিরেক সেখানে প্রাধান্য পায়নি, 'ভারতীয় সিনেমায় যা ব্যতিক্রম।
ভাষ্য-রচনার যে গতিতরঙ্গে 'উরি' শেষ হয়েছিল, সেখান থেকে যেন এবার 'ধুরন্ধর' শুরু হল। জঙ্গিরা যেখানে আশ্রয় পেয়েছে, পায় সেখানকার মাটিতে প্রবেশ করে তাদের নিকেশ করা, আর এমনভাবে নিকেশ করা, যেন স্বপ্নেও ভারতের পাল্টা-মার তারা ভুলতে না পারে ও ত্রাসে জেগে জেগে ওঠে, তা দেখাতে চেয়েছেন এখানে আদিত্য, যা আসলে উরি'-রই মূল সুর।
প্রশ্ন হল, কোন দেশ? কোথায় জঙ্গিদের বেশুমার মদত দেওয়া হয়। আদিত্য দেখিয়েছেন পাকিস্তান। আর, এই বিন্দু থেকে শুরু হয়েছে নতুন তরজা ও আক্রমণের পালা। বিশ্বের যে কোনও অঞ্চলে ঘটা জঙ্গি কার্যকলাপে পাকিস্তানের হাত রয়েছে- কথাটি কি বাড়াবাড়ি নয়। 'লিয়ারি' বলে যা দেখানো হয়েছে, তা সত্যি? তর্কটিকে আরও জমিয়ে দেন ইউটিউবার ও ব্লগারবৃন্দ। তাদের উদ্ঘাটনে 'রহমান ডাকাইত' বা 'লিভারি'-র বাস্তব অস্তিত্ব রয়েছে। 'এসপি চৌধুরী' বলে যে খুনে পুলিশ অফিসারকে দেখানো হয়েছে তাও বানানো নয়। গত ৬০-৭০ বছর ধরে লিয়ারি রক্তধারায় স্নাত হচ্ছে। ভারতীয় সমাজবিজ্ঞানী নিদা কিরমানি এই সহস্রাব্দের গোড়ায় 'লিয়ারি' নিয়ে তন্নিষ্ঠ গবেষণা শুরু করেছিলেন।
ভারতীয় মুসলিমদের 'প্রান্তিক' করে রাখার মূলে যদি ধর্মীয় পরিচয় সক্রিয় থাকে, তাহলে লিয়ারির বেলায় সেই প্রান্তিকতার উৎসটি হল, জাতিপরিচয়ে বিন্যস্ত পাকিস্তানি মুসলিম সমাজের আন্তঃসংঘাত। লিয়ারির কথা যে এর আগে পাকিস্তানের কোনও সিনেমায় উঠে আসেনি, এর কারণ, যারা লিয়ারির মদতদাতা, তারা ক্ষমতার সঙ্গেও প্রবলভাবে লিপ্ত---'পিপিপি'। সিনেমায় সমাজবিজ্ঞানের ভাষ্য খোঁজা উচিত নয়। সরলীকরণের অভিযোগ যে আদিত্য পুরো এড়াতে পারবেন, তাও নয়। তবে পাকিস্তানি ক্ষমতাতন্ত্রকে বেআব্রু করার দুঃসাহস দেখানোটি খুব কি সহজ।
