ঘৃণার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আসল চ্যালেঞ্জ, স্বাধীনতা ও ন্যায়ের ভারসাম্য অক্ষুণ্ণ রাখা।
কর্নাটক মন্ত্রিসভার প্রস্তাবিত ‘ঘৃণা মন্তব্য ও ঘৃণামূলক অপরাধ (প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ) বিল, ২০২৫’ আপাতদৃষ্টিতে সময়োপযোগী ও সামাজিক ঐক্যরক্ষার সদিচ্ছার প্রতিফলন হলেও, এর গভীরে, একাধিক জটিল প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পরিচয়ভিত্তিক বিদ্বেষ, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘৃণা এবং সহিংস উসকানির যে বিস্তার দেখা গিয়েছে, তা যে গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য গভীর উদ্বেগের, তা নিয়ে দ্বিমত নেই।
সেই বাস্তবতা থেকেই এই কঠোর আইনি কাঠামোর জন্ম। কিন্তু প্রশ্ন হল, সদিচ্ছা কি সর্বদা সঠিক ফল বয়ে আনে, না কি অতিরিক্ত কঠোরতা নাগরিক স্বাধীনতার পরিসর সংকুচিত করে? বিলটিতে ঘৃণামূলক বক্তব্য ও অপরাধকে ‘জামিন অযোগ্য’ বলে চিহ্নিত করে এবং সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে একটি শক্ত বার্তা দিতে চাওয়া হয়েছে। ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, যৌন অভিমুখিতা, ভাষা বা অক্ষমতার মতো পরিচয়ের ভিত্তিতে ঘৃণা ছড়ানো বা হিংসা উসকে দেওয়াকে অপরাধ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা নিঃসন্দেহে প্রগতিশীল পদক্ষেপ। সেই সঙ্গে মৌখিক, লিখিত, দৃশ্যমান ও ডিজিটাল– সমস্ত ধরনের যোগাযোগকে এর আওতায় এনে আইনটি আধুনিক বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়েছে। বিশেষ করে ডিজিটাল পরিসরে ঘৃণার বিস্তার যে কত দ্রুত এবং কত গভীর প্রভাব ফেলতে পারে, তা সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতায় স্পষ্ট।
তবে উদ্বেগের জায়গা তৈরি হয়েছে আইনের ব্যাপ্তি ও প্রয়োগে। সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম, সার্চ ইঞ্জিন, ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীদের উপর ফৌজদারি দায় চাপানোর প্রস্তাব একদিকে দায়বদ্ধতা বাড়ালেও, অতিরিক্ত সতর্কতা বৈধ মতপ্রকাশ বা বিতর্কিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তুর উপর স্বেচ্ছা সেন্সরশিপের ঝুঁকি তৈরি করে। ‘জেনেশুনে’ বা ‘অজান্তে’ ঘৃণামূলক প্রচারের মতো দ্ব্যর্থবোধক শব্দবন্ধ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে অতিরিক্ত ব্যাখ্যার পরিসর রেখে দেয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রতিরোধমূলক আদেশ জারি করার ক্ষমতা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়ক হতে পারে, কিন্তু একই সঙ্গে এটি সমাবেশ, মিছিল বা প্রতিবাদের মতো সাংবিধানিক অধিকারের উপর অস্থায়ী হলেও গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।
ইতিহাস সাক্ষী, এমন ক্ষমতা প্রায়শই রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। ‘সরল বিশ্বাস’-এ কাজ করা সরকারি কর্মকর্তাদের আইনি সুরক্ষা দেওয়ার বিধানও জবাবদিহির প্রশ্নকে দুর্বল করে। অন্যদিকে, ভিকটিম ইমপ্যাক্ট স্টেটমেন্টের ধারণা ভুক্তভোগীর কণ্ঠকে বিচারপ্রক্রিয়ায় গুরুত্ব দেওয়ার ইতিবাচক দিক। একইভাবে শিল্প, গবেষণা, সাংবাদিকতা ও ধর্মীয় বক্তৃতার জন্য ছাড় দেওয়া আইনের ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা। কিন্তু বাস্তবে কোন বক্তব্য ‘ঘৃণা উসকে দেয়’ আর কোনটি সমালোচনাযোগ্য
বা অস্বস্তিকর সত্য– এই সূক্ষ্ম পার্থক্য নির্ধারণ করবে কে? সার্বিকভাবে, এই বিল ঘৃণার রাজনীতির বিরুদ্ধে একটি অবস্থান হলেও, আইনের প্রয়োগকে হতে হবে সংযত, সাংবিধানিক মূল্যবোধের প্রতি অনুগত।
