shono
Advertisement
Messi

প্রেমহীন পূজা!

‘প্রেম’ এবং ‘পূজা’-র মাঝের পরিসরটি অনুভবের।
Published By: Biswadip DeyPosted: 01:04 PM Dec 17, 2025Updated: 01:04 PM Dec 17, 2025

মেসি ভক্তদের কাছে প্রণম্য, পূজ্য, প্রাপণীয়। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত, শৈথিল্যে ভরা ‘প্রেম’ কি স্বপ্নের নায়ককে পূজার্ঘ্য নিবেদনের যোগ্য?

Advertisement

‘গীতবিতান’-এর আবেদন এতই অমোঘ যে, সেখানে ‘প্রেম’ ও ‘পূজা’-র পর্যায়ভেদ লুপ্ত হয়। প্রেম হয়ে ওঠে ‘পূজা’, আবার পূজার উপাচারে ‘প্রেম’ লতিয়ে ওঠে। কিন্তু ‘গীতবিতান’-এর রচয়িতার সঙ্গে তঁার শেষযাত্রায় বাঙালি যে ব্যবহার করেছিল, তা না ‘প্রেম’ না ‘পূজা’ পদবাচ্য!

ইন্দিরা দেবীকে লেখা চিঠিতে রবি ঠাকুর ইচ্ছাপ্রকাশ করে রেখেছিলেন যে, মৃত্যুর পরে তঁাকে যেন শান্তিনিকেতনের ‘ছাতিমতলায় বিনা আড়ম্বরে দাহ’ করা হয়। কিন্তু ‘বাইশে শ্রাবণ’, মহাগুরু নিপাতের দিনে প্রকৃতই কী হয়েছিল, তা জানা যায় নির্মলকুমারী মহলানবিশের লেখা থেকে– ‘জোড়াসঁাকোর আঙিনায় নেবে দেখি জনসমুদ্র পার হয়ে উপরে যাওয়া অসম্ভব।... ঘরে লোকে লোকারণ্য।... যখন স্নান করানো হচ্ছে নীচের জনতার মধ্যে একদল উপরে এসে বাইরে থেকে টান মেরে দরজার ছিটকিনি খুলে ঘরে ঢুকে পড়ল। কী দারুণ অপমান কবির চৈতন্যহারা এই দেহটার।...’ এখানেই শেষ নয়, বেলা তিনটের সময় একদল অচেনা লোক ঘরে মধ্যে ঢুকে– ‘আমাদের সামনে থেকে সেই বরবেশে সজ্জিত দেহ তুলে নিয়ে চলে যায়’। স্লোগান ওঠে: ‘জয় বিশ্বকবির জয়’।

রবীন্দ্র-মৃত্যুতে বঙালির একাংশ এত কাতর ও অবশ হয়ে পড়েছিল সেদিন, অনেক বাড়িতে হঁাড়ি চড়েনি, পালিত হয়েছিল অরন্ধন। অাবার ‘স্মারক’ স্বরূপ, প্রণামের অছিলায়, উপড়ে নেওয়া হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের নখ। ভিড়ের মধ্যে অনেকে কবির চুল ও দাড়ি ছিঁড়ে নিতে কুণ্ঠিত হয়নি। ভক্তি কি এমন হয়? ভক্ত কি এমন হতে পারে? ব্যক্তিপূজা কোন স্তরে উন্নীত হলে এমন হিতাহিতজ্ঞানশূন্য আচরণ সম্ভব, তা অনুমান সাপেক্ষ।

ভক্তি ভয়াবহ হয়ে ওঠার এমন নিদর্শনের পাশে কি রাখা যায় মেসিকে নিয়ে তৈরি হওয়া সাম্প্রতিক উন্মাদনা? আগেরটি যদি সাংস্কৃতিক আতিশয্যের নমুনা হয়ে থাকে, এটি তবে বিনোদনমূলক অতিরেক। লিও মেসি আন্তর্জাতিক মহাতারকা। এই বাংলায়, যেখানে ফুটবল নিয়ে আবেগের পারদ সম্বৎসর ঊর্ধ্বগামী থাকে, মেসি এলে প্রবল হইচই তৈরি হবে, প্রত্যাশিত। উচ্চমূল্যের টিকিটের দাম অগ্রাহ্য করে তাই সমাজের নানা স্তরের, নানা শ্রেণির মানুষ ছুটে গিয়েছিলেন তঁাকে চাক্ষুষ দেখতে।

কিন্তু বাদ সাধল কিছু ব্যক্তির ব্যাখ্যাতীত ব্যবহার, নিয়ন্ত্রণহীন ব্যক্তিপূজার বাহার। মেসি পরিবেষ্টিত থাকলেন ক্ষমতার বারান্দায় যেতে পারা কিছু মানুষের দ্বারা। পরিবেষ্টিত থাকলেন এমন ঢঙে, যা স্বাভাবিক নয়। সাধারণ মানুষ যদি মেসিকে ভালোবাসতে পারেন, তঁাকে দেখতে চান– তাহলে রাজনৈতিক কর্মকর্তার মনেও মেসি-দর্শনের অভীপ্সা তৈরি হওয়ায় অনৌচিত্য নেই, তবে তফাত রচিত হল, পরিমিতি বোধের অভাবের কারণে। এই দেশে সিনে-স্টারগণ দেবতার পর্যায়ে উন্নীত। এই দেশে ক্রীড়াব্যক্তিত্বরা একই রকমভাবে পূজিত। কিন্তু লাগামহীন, অনিয়ন্ত্রিত, বাস্তববর্জিত শৈথিল্যে ভরা ‘প্রেম’ কি স্বপ্নের নায়ককে পূজার্ঘ্য নিবেদনের যোগ্য? ‘প্রেম’ এবং ‘পূজা’-র মাঝের পরিসরটি অনুভবের, অনুশীলনের। সেখানে ঘাটতি– সমর্থনযোগ্য?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • মেসি ভক্তদের কাছে প্রণম্য, পূজ্য, প্রাপণীয়।
  • কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত, শৈথিল্যে ভরা ‘প্রেম’ কি স্বপ্নের নায়ককে পূজার্ঘ্য নিবেদনের যোগ্য?
  • ভুললে চলবে না ‘প্রেম’ এবং ‘পূজা’-র মাঝের পরিসরটি অনুভবের।
Advertisement