প্রেমে ব্যর্থতা যে মানতে পারে না, সে পুরুষ কি প্রেমিক? একতরফা প্রেমে কীসের আধিপত্য? কিন্তু ভারতের নবপ্রজন্মের পুরুষ তা বুঝলে তো?
কপিল শর্মার শো শুধু হাসির উদ্রেক ঘটায় না, একই সঙ্গে পুরনো অনেক স্মৃতির উদ্ভাসও ঘটায়। সানি দেওলকে যেমন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘ডর’ সিনেমা চলাকালীন আপনি নাকি জিনসের পকেটে হাত রেখেই প্যান্ট ছিঁড়ে ফেলেছিলেন?
এ-প্রশ্ন এর আগেও বহুবার সানিকে শুনতে হয়েছে। সলমন খান একবার করেছিলেন একটি রিয়েলিটি শো-তে। সানি মৃদুভাষী বলে কথিত, অফ স্ক্রিন কথায় বা আড্ডায় তেমন স্বচ্ছন্দ নন, কিন্তু কপিল শর্মার শো-তে খুলেই বলেছিলেন গোপন কারণটি। ‘ডর’ সিনেমায় তাঁর ‘রোল’ ছিল সেনা অফিসারের। সানির প্রশ্ন বা বিবৃতি হল, সেনা অফিসার মানে খুব ফিট কেউ। তাকে সামনাসামনি কী করে একজন আমআদমি ছুরি মেরে দিতে পারে? পিছন থেকে বা পাশ থেকে চোরাগোপ্তা আক্রমণ করা হয়তো অসম্ভব নয়, কিন্তু সামনে থেকে তা কেউ করলে, প্রত্যাশিত যে, আর্মি অফিসার সেটা প্রতিহত করবে।
এর বিপরীত যুক্তি দিয়ে বলা হয়েছিল, যে এই ছুরি মারছে, যে-চরিত্রে অভিনয় করছিলেন শাহরুখ খান, সেই চরিত্রটি উৎকেন্দ্রিক, মানসিকভাবে বিশৃঙ্খল, সে প্রেমে উন্মাদ এমন একটি মেয়ের জন্য, যে তাকে ভালবাসে না, আর ব্যর্থতার এই জ্বালা ছেলেটিকে উন্মাদ করে তুলেছে, কাজেই তার পক্ষে সীমা ছাড়িয়ে এ ধরনের আক্রমণ করে বসা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সানি রাজি হননি সে-যুক্তি মানতে। এদিকে, চিত্রনাট্যে বদল করাও হচ্ছে না। তখন রাগে পকেটে হাত নিবদ্ধ অবস্থায় সানি এমন প্রতিক্রিয়া দেন যে, জিন্সের প্যান্ট ছিঁড়ে যায়!
এ-গল্প, সিনেমার বাইরের গল্প। ‘ডর’ সিনেমার মূল গল্প কিন্তু ভয়ংকর– অবসেশন ও অবাধ্য কামনা একযোগে যে মনস্তাত্ত্বিক বিপর্যয় ঘটিয়েছিল, তার বিবরণ। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল। কিন্তু প্রবণতার দিক থেকে দেখলে, এ-গল্পের থিম যেন এখনকার সময়ের। পৌরুষের অপরাজেয় মনোভাব হৃদয়ে নিয়ে যেসব প্রেমিকপ্রবর দেশের আনাচকানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের আয়নাদর্শন করাতে পারে ‘ডর’।
একতরফা ভালবাসা তখনই মোহ তৈরি করে, ভাল লাগা জাগায়, যখন তা একতরফা থেকেও উপদ্রব তৈর করে না। একই কথা ব্যর্থ প্রেমের প্রশ্নেও সত্যি। ব্যর্থ প্রেম হয়তো অনেক যৌথস্বপ্নের মৃত্যু ঘটায়, কিন্তু ব্যর্থ প্রেমের মধ্যে দিয়ে সলাজ, সনম্র, সরল মনের পরিচয়ও ঘটে। কিন্তু যে-প্রেম ব্যর্থতা মানতে পারে না, বা যে-প্রেম একতরফা হয়েও একাধিপত্য ফলাতে চায়, দাপট ও ক্ষমতা, পৌরুষ ও পেষণের চোটে পার্টনারের উপস্থিতিকে ডলে দিতে চায়, সে-প্রেম বিপজ্জনক।
প্রেরণা জাগায় না সে-প্রেম। মধ্যপ্রদেশে, প্রেমে সম্মত না-হওয়া একটি মেয়েকে, তাড়া করে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে ছুরির আঘাতে মেরেছে একজন প্রেমিক বীরপুরুষ! সে যে প্রেমিক নয়, বীরও নয়, নয় প্রকৃত পুরুষ, তা বলে দিতে হয় না। এদের কথায় সানি দেওলসুলভ ক্রোধ জাগুক আবার!
দিনদুপুরে একটি মেয়ে এমন নৃশংসভাবে খুন হল, কিন্তু কেউ সামান্যতম প্রতিবাদ করল না। এ থেকে স্পষ্ট, ‘প্রতিবাদ’ ও ‘পুরুষ’– এই দু’টি শব্দ একসঙ্গে থাকার গৌরব হারিয়েছে।
