shono
Advertisement
Union Budget 2025

বাজাটে যারা উপক্ষিত

দেশের অর্ধেক জনসংখ্যার হাতে রইল পেনসিল! 
Published By: Kishore GhoshPosted: 09:35 PM Feb 02, 2025Updated: 09:35 PM Feb 02, 2025

কর-ছাড়ে উচ্চ-মধ‌্যবিত্ত শ্রেণি হয়তো উপকৃত হবে, তবে দেশের অর্ধেক জনসংখ‌্যা, যার মধ্যে রয়েছে নিম্ন এবং নিম্ন-মধ‌্যবিত্ত, তাদের হাতে পেনসিল!  লিখছেন অভিরূপ সরকার

Advertisement

এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটের যে-দিকটি নিয়ে মধ‌্যবিত্ত উল্লসিত, তা হল– বেতনভোগী যাদের বার্ষিক আয় ১২ লাখ পর্যন্ত– তাদের কর দিতে হবে না। এবারের বাজেট কতখানি জনমুখী, প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের জন‌্য কতখানি ভাবিত– তা নিয়ে যথারীতি বিস্তর আলোচনা শুরু হয়েছে। কেন্দ্র যে প্রচুর বিজ্ঞাপন করবে, স্বাভাবিক। কিন্তু মূলকথায় ফিরে আসা যাক, এই যে ট‌্যাক্স ছাড় দেওয়া হল, নিঃসন্দেহে বড় মাপের ছাড়, আমার স্মৃতিতে অন্তত এরকম কর-ছাড় আগে প্রত‌্যক্ষ করিনি, প্রশ্ন– আসলে কারা এই ‘ছাড়’ পাবে?

২০২৫ সালের বাজেট ‘কার্যকর’ হওয়ার আগে অবধি ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত যাদের বার্ষিক আয় ছিল, তাদের কোনও কর দিতে হত না। এখন তা ১২ লক্ষ হল। এক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ– ভারতে অংসগঠিত ক্ষেত্রে প্রচুর মানুষ কাজ করে। তাদের অনেকের বার্ষিক আয় হয়তো ৭ লক্ষের উপরে। কিন্তু আয় করে ছাড় পেতে হলে স্থায়ী বেতনভোগী হতে হবে। কনট্র‌্যাকচুয়াল কর্মীরা কর ছাড়ের এই সুবিধ‌া পাবে না।

আমাদের দেশে মাথাপিছু আয় গড়ে ২ লক্ষ ১২ হাজার টাকা। এই স্ল‌্যাবের নিচেও রয়েছে বহু মানুষ। ৭ লক্ষ টাকা আয় মানে মাসিক মাইনে হতে হবে ৫০ হাজারের একটু বেশি। ভারতে
এই আয়ভুক্ত পরিবারের সংখ‌্যা সীমিত। জোর গলায় বলতে পারি, দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ পরিবারের এই আয় নেই। বা ধরা যাক, একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে যে-চাকরি পাচ্ছে, তারও স্টার্টিং স‌্যালারি এত হয় না। পায় না এমন নয়, তবে হিসাবের নিরিখে না-পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এবার কোম্পানি যে-টাকা দেয়, সেটা ‘সিটিসি’ (কস্ট টু কোম্পানি), তার মধ্যে অ‌্যালাওয়েন্স, পিএফ এমন নানাবিধ বিষয় ঢুকে আছে। সুতরাং মাইনের পুরোটা কেউ হাতে পায় না, তার ফলে ৭ লক্ষ টাকার নিচে যে-শ্রেণির কর্মীরা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই বাজেট নতুন কিছু দিতে পারল না। অর্থাৎ, দেশের উপরের ৫০ শতাংশ মানুষের জন‌্য কেন্দ্রের পরিকল্পনা থাকলেও, দেখা গেল– নীচের ৫০ শতাংশর জন‌্য কোনও ভাবনা নেই।

এত দিন জোগানের দিকে সরকারের নজর ছিল, এবার চাহিদার দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে। সরকারের ভাবনা যদি মধ‌্যবিত্তদের কিছু বাড়তি টাকা দেওয়া যায়, তাহলে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে, তারা আর-একটু খরচ করবে, ফলে অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। কিন্তু এই কর্মযজ্ঞ থেকে কিন্তু দেশের ৫০ শতাংশ মানুষ বঞ্চিত থেকে গেল। এবার এর ফলে যে-ইনফ্লেশন হবে, অর্থাৎ মূল‌্যবৃদ্ধি হবে, সেখানে এই ৫০ শতাংশের অবস্থা যে আরও করুণ হবে– সন্দেহ নেই।
এই সরকার পরিকাঠামো বলতে রাস্তা-ব্রিজ এসবই বারবার বুঝিয়েছে, কিন্তু তারা ভুলে গিয়েছে ‘হিউম‌্যান রিসোর্স’-ও একটা বড় ক‌্য‌াপিটাল। আবার শিক্ষাখাতেও বরাদ্দ বাড়েনি। যে সাধারণ পরিবারের সন্তান, তার কোয়ালিটি এডুকেশনের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। এবং কোয়ালিটি এডুকেশন না হলে কোয়ালিটি এমপ্লয়ি তৈরি হবে না। বিশেষত, প্রাইভেট সংস্থায়।

তার ফলে আনএমপ্লয়মেন্ট বাড়ে। বহু ক্ষেত্রে ডিগ্রি থেকেও চাকরি পায় না বহু প্রার্থী। কোম্পানিতে পদ খালি থাকলেও তাদের নাম প্রাধ‌‌ান‌্য পায় না, কারণ কোয়ালিটি এডুকেশন ও শার্পনেস নেই । অন্যদিকে, যে-সমস্ত প্রাইভেট ইনস্টিটিউশন কোয়ালিটি এডুকেশন দিচ্ছে, সেখানে হয়তো ৪ বছরের কোর্স ফি ৫০ লক্ষ টাকা। দেশের কত ভাগ মানুষ এই টাকা অ‌্যাফোর্ড করতে পারে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। সুতরাং এই ট‌্যাক্স রিজিমে আন্ডারপ্রিভিলেজ্‌ড শ্রেণির নতুন প্রজন্মের সিংহভাগই ঢুকতে পারছে না।

পলিটিক‌্যাল দিক থেকে দেখলে বিহার ছাড়া তো সব রাজ‌্যই ব্রাত‌্য! অসম কিছুটা উপকৃত, কারণ সেখানে বিজেপি সরকার, তছাড়া সেখানে ভোট আসন্ন! মিলিজুলি সরকার এবার কেন্দ্রে। সমর্থনকারী দলগুলির স্বার্থ সুরক্ষিত করার গোপন অঙ্কটি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এবং তা হয়তো হবে ভোটের সমীকরণ বুঝেই। বঙ্গের বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার তো জনসমক্ষে বললেন– পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি অফিস করারই জায়গা পায় না, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকার রাজে‌্যর কথা ভাববে কেন! কিন্তু কেন্দ্র যেটা ভুলে যাচ্ছে, তা হল, বাজেটের টাকা কেন্দ্রে নয়, দেশের করদাতাদের। সুতরাং এমন মন্তব‌্য অভিপ্রেত নয়।

(মতামত নিজস্ব)
লেখক অর্থনীতিবিদ
(কথা বলে অনুলিখিত)
abhirupsarkar.sarkar@gmail.com

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
Advertisement