shono
Advertisement

সম্পাদকীয়: কীভাবে বদলাবে অর্থনীতি?

২০২১-এর বাজেটে কি মিলবে উত্তর?
Posted: 03:56 PM Jan 24, 2021Updated: 08:06 PM Jan 31, 2021

জয়ন্ত ঘোষাল: কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ সম্প্রতি জানিয়েছেন, তিনি এবার এমন একটা বাজেট পরিবেশন করতে চলেছেন, যা এর আগে কেউ কখনও দেখেনি। সাংঘাতিক একটা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বলেছেন, এবারের বাজেট দেখলে আপনারা প্রত্যেকেই খুব খুশি হবেন। ২০২১-এর এই বাজেট ঠিক কী ধরনের বাজেট হতে চলেছে, যা অতীতে হয়নি? সেই রহস্য উদঘাটন করার জন‍্য পয়লা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে মানুষের জীবনযাত্রা কি সত্যিই সুখকর?]

ভারতের রাজনীতিতে অন্তত চার দশকের মধ্যে এরকম আর্থিক পরিস্থিতি কখনও দেখা যায়নি। আর এই প্রেক্ষাপটেই হতে চলেছে এবারের বাজেট। অর্থনীতির ক্ষেত্রে দেশের নেতিবাচক বৃদ্ধি আমরা আগেও দেখেছি। ১৯৫৮-’৫৯, ১৯৬৬-’৬৭, ১৯৭৩-’৭৪ সালে দেখেছি। এমনকী, ১৯৮০-’৮১ সালের আর্থিক বাজেট পরিবেশনের সময়ও আমরা দেখেছি, দেশ সাংঘাতিক নেতিবাচক বৃদ্ধিতে আক্রান্ত।

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি যখন নির্মলা সীতারমণ বাজেট পেশ করেছিলেন তখনই অর্থনীতিতে ভাঙন ধরে গিয়েছে। আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল শতকরা মাত্র ৪.১ ভাগ। এহেন পরিস্থিতিতে ‘কোভিড-১৯’। তারপরে দেশজুড়ে লকডাউন, যা অর্থনীতির আরও বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। এটা বলার জন্য ‘অর্থনীতিবিদ’ হওয়ার প্রয়োজন নেই। সাধারণ মানুষ
বাজার-দোকানে গিয়েই তা টের পাচ্ছে। লকডাউনের পরে দেশজুড়ে শতকরা ৭.৭ ভাগ অর্থনীতি সংকোচন হতে চলেছে।

এরকম একটা পরিস্থিতিতে বাজেটে সরকারকে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে খরচে। অর্থাৎ, সরকারকে খরচ করতে হবে। যাকে অর্থনীতির ভাষায় বলা হয় ‘স্পেন্ডিং প্রায়োরিটি’। এই আর্থিক সংকট করোনার জন্য ঘনীভূত হয়েছে। তার মধ্যে এমন একটা সময়ে বাজেট পেশ হতে চলেছে, যখন করোনা প্রতিষেধক বিদেশ থেকে কেনা, সেগুলো রাজ্যে রাজ্যে বণ্টন করা, সুষ্ঠুভাবে সাধারণ মানুষের কাছে বিনা পয়সায় বা কম পয়সায় বা যথেষ্ট ভরতুকি দিয়ে পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। অনেক অর্থনীতিবিদ তো এটাও বলছেন, এখন অর্থনীতিতে স্টিমুলাস দেওয়ার থেকে মানুষের কাছে প্রতিষেধক পৌঁছনোটা অনেক বেশি জরুরি।

২০২১-’২২ সালের বাজেট তাই এমন একটা সময়ে হচ্ছে, যখন আর্থিক চালচিত্র সাংঘাতিক পর্যায়ের। রাজস্ব ভীষণভাবে অধোগতিতে আক্রান্ত। কিন্তু খরচ প্রচণ্ড পরিমাণে বেড়েছে। অর্থনীতিবিদরা তিনটি গ্রোথ ইঞ্জিনের কথা বলে থাকেন। তার মধ্যে একটি হল বেসরকারি কনজাম্পশন। দ্বিতীয়টি, প্রাইভেট এক্সপেন্ডিচার। তৃতীয়টি হল, রফতানি। এই সবগুলোই কিন্তু এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। চতুর্থটি হল, সরকারি খরচ। সরকারি খরচ মানে ‘সরকারি বিনিয়োগ’। এক্ষেত্রে ‘স্পেন্ডিং’ মানে বাজারকে তেজি করার জন্য সরকারকে টাকা খরচ করতে হবে। যাতে বাজারে একটা পণ্যের দাম বহাল থাকে। সেই বিক্রিবাটার জন্য বাজারদরটাকে চাঙ্গা রাখা অর্থনীতিতে খুব জরুরি। কিন্তু সেখানে যদি চাহিদা না থাকে, বিক্রেতা যদি সঠিকভাবে দাম না পায়- তাহলে তো সবদিক থেকেই পরিস্থিতিটা ঘোরাল হয়ে যায়!

সরকার এর আগে ২৯.৮৭ লক্ষ কোটি টাকার স্টিমুলাস প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল। যেটা ভারতের সার্বিক বৃদ্ধির হারের (জিডিপি) শতকরা ১৫ ভাগ। যার মধ্যে ৮ লক্ষ কোটি টাকা ‘রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া’-র পক্ষ থেকে বিনিয়োগ। যাতে টাকার সচলতা বাজারে তৈরি হয়। এইরকম একটা পরিস্থিতিতে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যে সুদ নেওয়া হয়, সেই সুদের হার কমিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিরক্ষা, খাদ‍্যক্ষেত্রে ভরতুকি, পেনশন এবং বিভিন্ন রাজ্যে এগুলোকে পৌঁছে দেওয়াও চলে। এগুলো বাজেটের শতকরা ৬০ ভাগ জায়গা দখল করে থাকে। এসবের মধ্যে অনেক রাজনৈতিক বার্তাও থাকে। এরই মধ্যে থাকে চিনের সাম্প্রতিক আক্রমণ এবং লাদাখের সীমানায় এই আক্রমণের জন্য ভারতের যে প্রভূত ব‍্যবস্থা, তা তৈরি করা। চিনা সীমান্তে প্রতিরক্ষা বাড়ানোর জন্য ভারত সরকারের কোটি কোটি টাকা ব‍্যয় হচ্ছে। সীমান্তে প্রতিরক্ষা খাতে ব‍্যয়বরাদ্দ যা ছিল, তা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। বিদেশমন্ত্রী জয়শংকর সংসদীয় কমিটির বৈঠকে রাহুল গান্ধী, আনন্দ শর্মা, শশী থারুরের সামনেই কার্যত বলে দিয়েছেন যে, এখন চিনা আক্রমণের জন্য সীমান্তে প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ভারত সরকারকে অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।

সুতরাং বলা যেতে পারে, নুন আনতে পান্তা ফুরয় অবস্থা। এইরকম একটা অবস্থায় ভারত সরকার ঠিক কীভাবে পরিস্থিতিটাকে বদলাবে, সেটাই এখন দেখার। টাকার দাম বাড়ানোর জন্য যেমন অর্থমন্ত্রীকে নজর রাখতে হয়- সেরকম প্রচুর বাজার-বিশেষজ্ঞ, স্টকমার্কেট-বিশেষজ্ঞ সেদিকে নজর রাখছেন। ‘রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া’ এই পরিস্থিতির জন্য খুবই চিন্তিত। তারাও কীভাবে উপভোক্তাকে আরও আকৃষ্ট করা যায়, তার জন্য সুদের হার এবং অন‍্যান‍্য ব্যাংককে শক্তিশালী করার জন্য কী কী ভাবে সাহায্য করা যায়- সবরকমের চেষ্টাই চলছে। অনেকে আবার মনে করছেন, এখন রাজ‍্যগুলির অর্থনীতিকে মজবুত না করে শুধু কেন্দ্রীয় অর্থনীতির দিকে তাকানোটাও মস্ত বড় ভুল। সে কারণে রাজ্যের অনুদান বাড়িয়ে, রাজ্যের অর্থনৈতিক বাজারের উপর নিয়ন্ত্রণটাকে বাড়ানোর চেষ্টা করলে কেন্দ্র শক্তিশালী হবে। যেরকম প্রতিষেধক দেওয়ার ব‍্যাপারেও এখানে যদি বাজেট বরাদ্দ করতে হয়, তাহলে সেটা স্বাস্থ্য পরিষেবাকে উন্নত করার জন্য রাজ‍্যস্তরে রাজ‍্য সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রকে আরও সমন্বয় বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে জেলা এবং উপজেলার স্তরে অনেক বেশি প্রতিষেধক বণ্টন এবং ব‍্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।

[আরও পড়ুন: চাকরি পেলেন ও খোয়ালেন সাংবাদিক নিধি রাজদান]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement