চার বছর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নেন, স্বস্তির শ্বাস ফেলেছিল আমেরিকা। বলা হয়েছিল, বিভাজনের রাজনীতির পরাজয় হয়েছে। কিন্তু, সেই ট্রাম্প-ই আবার ক্ষমতায় ফিরলেন হইহই করে। তিনি জিতেছেন আমেরিকার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতার ভোটে। তবু, তিনি ফিরতে দেশটিতে ‘ভয়ের পরিবেশ’-ও ফিরেছে। অন্তত, এই ক’দিনে আলাপ-আলোচনায় সেটাই বোঝা যাচ্ছে।
এই উদ্বেগের কেন্দ্রে রয়েছে চরম রাজনৈতিক মেরুকরণ। গত কয়েক বছরে আমেরিকা রাজনৈতিকভাবে আরও বিভক্ত হয়েছে, উভয় পক্ষই একে-অপরকে দেশের জন্য বিপদ হিসাবে দেখছে। ট্রাম্পের অধীনে, এই বিভাজনগুলি আরও তীব্র হয়ে উঠেছিল, এবং অনেকই মনে করছে তঁার প্রত্যাবর্তন মেরুকরণের ধারাবাহিকতাকে অক্সিজেন জোগাবে। বিভিন্ন গবেষণা ও সমীক্ষায় ইঙ্গিত মেলে যে, মার্কিনরা ক্রমবর্ধমান মতাদর্শগত অক্ষে সংঘবদ্ধ হচ্ছে, যেখানে কেবল নিজের মতটি প্রাধান্য পায়, বিরোধিতা বা বিপরীত দিকের দৃষ্টিভঙ্গিকে ‘শত্রুতা’ হিসাবে দেগে দেওয়া হয়। অনেকেই আবার এই কারণে চিন্তিত যে, ট্রাম্পের ভাষণ ও কার্যকলাপ গণতান্ত্রিক রীতিনীতি এবং প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও দুর্বল করতে পারে। অনেকেই একে গণতন্ত্রের পক্ষে গুরুতর বিপদ হিসাবে দেখছে।
চার বছর আগে তঁার এই ‘ভুল’-এর জন্যই তঁাকে হারিয়ে জো বাইডেন ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু আমেরিকায় কী এমন ভাব-পরিবর্তন হল যে, সেই ট্রাম্পকেই দেশের মানুষ আবার ক্ষমতায় ফেরাল? বলা হয়, আমেরিকার কাছে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ ছিল ‘দুঃস্বপ্ন’। সেই জায়গা থেকে তাই তঁার হোয়াইট হাউসে ফেরা অকল্পনীয় ছিল। কিন্তু ৭১ মিলিয়নেরও বেশি আমেরিকানের ভোটে জয়ী হয়েছেন ট্রাম্প। তিনি শুধুমাত্র ইলেক্টোরাল কলেজ-ই জেতেননি, পপুলার ভোটেও জিতেছেন– এমন কৃতিত্ব তিনি ২০১৬ বা ২০২০ সালেও দেখাতে পারেননি। তঁার এই বিপুল জয়ের পরেও দেশের একাংশের মানুষের আশঙ্কা, হোয়াইট হাউসে ফিরলে প্রথাগত ভারসাম্যকে হ্রাস করতেই থাকবেন ট্রাম্প।
কারণ, ট্রাম্পের পূর্ববর্তী মেয়াদকাল জুড়ে তঁাকে কেউ কেউ অতি-ডান ও চরমপন্থী গোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতিশীল হিসাবে দেখেছিল। যারা প্রায়শই নিজেকে ‘দেশপ্রেমিক’ বা ‘স্বাধীনতার রক্ষক’ হিসাবে দাবি করে থাকে, সেই উগ্র জাতীয়তাবাদীরা তঁার নেতৃত্বে উত্সাহিত ছিল। ট্রাম্পের ফিরে আসায় তারা আবার উৎসাহিত হবে। ট্রাম্পকে যারা ভোট দিয়েছে, তারা বলছে যে, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার মতো বৈধ ইসু্যগুলিতে ট্রাম্পকে সমর্থন করেছে। এর অর্থ: ট্রাম্প তঁার প্রচারে অর্থনীতি এবং অভিবাসনের উপর যেভাবে জোর দিয়েছিলেন, সেটি কার্যকর হয়েছে। এখন ট্রাম্প তঁার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলি রক্ষা করবেন, কিংবা করবেন না। কিন্তু তিনি যদি নিজেকে সংশোধন করেন, তার জন্যও তঁাকে সময় দিতে হবে। ভবিষ্যতে আমেরিকা কোন পথে হঁাটবে, কোন নীতিতে আস্থা রাখবে– তাও নির্ভর করবে রাজনৈতিক পক্ষপাতের ধরন ও মানসিকতার উপর।