সুনীতা যাত্রার শুরুতে বলেছেন, মহাকাশ কেন্দ্র থেকে পৃথিবীতে ফিরতে তঁার আনন্দ হচ্ছে বটে, তবে সেই আনন্দে মিশে থাকছে ছেড়ে আসা মহাকাশ কেন্দ্রটির জন্য মনকেমন। এই যে মহাকাশে থেকে গেল পৃথিবীর মনকেমন, নস্টালজিয়া এবং অন্বেষের অবদান চিহ্ন, এ কি কম কথা?

সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর দু’জনে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে গিয়েছিলেন আট দিনের জন্য। এবং সেখানে আটকে থাকতে হল ন’মাস! মূল কারণ, যে-রকেট তঁাদের উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল, সেই রকেটে দেখা দিল নানা যান্ত্রিক অপারগতা। নতুন রকেট পাঠিয়ে তঁাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে লেগে গেল ন-ন’টি মাস। ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরই ঘোষণা করেন সুনীতাদের ফিরিয়ে আনার এই বিলম্বের জন্য দায়ী তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এই সংক্রান্ত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যর্থতা।
ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই ‘বন্ধু’ এলন মাস্ককে অনুরোধ করেন, তিনি যেন তঁার ‘স্পেসএক্স’ সংস্থার মহাকাশযান ‘ক্রু ড্রাগন’ পাঠিয়ে যত দ্রুত সম্ভব সুনীতা-বুচকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনেন। সেই ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। ভারতীয় সময় বুধবার ভোররাত ৩টে ২৭-এ স্পেসএক্স-এর মহাকাশ সুনীতাদের নিয়ে ফ্লোরিডা উপকূলের কাছে মহাসমুদ্রে নেমে গিয়েছে।
সুনীতাদের জন্য পৃথিবী ব্যাকুল প্রতীক্ষায় ছিল। মর্তের দুই মানব-মানবী দীর্ঘকাল মহাশূনে্য কাটিয়ে ফিরে আসছে পৃথিবীতে, সেই সঙ্গে ফিরছে তাঁদের অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতার মহাশূন্য– কেমন কেটেছে তাঁদের এই পর্ব, পৃথিবীর সময় থেকে অনেক দূরে ন’মাস কি হারায় তাদের দৈর্ঘ্য? কিংবা মনে কি হয় পৃথিবীর সময় মহাকাশের কালের চলনে সম্পূর্ণ লুপ্ত হয়? সুনীতা যাত্রার শুরুতে বলেছেন, মহাকাশ কেন্দ্র থেকে পৃথিবীতে ফিরতে তঁার আনন্দ হচ্ছে বটে, তবে সেই আনন্দে মিশে থাকছে ছেড়ে আসা মহাকাশ কেন্দ্রটির জন্য মনকেমন।
এই যে মহাকাশে থেকে গেল পৃথিবীর মনকেমন, নস্টালজিয়া এবং অন্বেষের অবদান চিহ্ন, এ কি কম কথা? কীসের অন্বেষ? এই মহাবিশ্বে কোথাও প্রাণের চিহ্ন আছে কি না, তারই সন্ধান। রাত্রের আকাশে, হাজার-হাজার আলোকবর্ষ দূরের নক্ষত্রবীথির দিকে তাকিয়ে যুগে যুগে একটি প্রশ্ন মানুষের মনে জেগেছে, সৃষ্টি রহসে্যর শিকড়ে জড়িয়ে থাকা আদিম প্রশ্ন– মহাবিশ্বে ‘প্রাণ’ বলতে শুধুই কি আমরা? তা কি হতে পারে? প্রাণ আছেই আছে। কিন্তু মহাবিশ্বের কতটুকু জানি আমরা? এই জানার পথে প্রধান অন্তরায় মহাবিশ্বের লক্ষ-লক্ষ অালোকবর্ষ দূরত্বের অকল্পনীয় বিস্তার! কিন্তু তবু মানুষ পৃথিবী ছেড়ে মহাকাশে ধেয়ে যাচ্ছে বারবার। পাঠাচ্ছে পৃথিবীর বার্তা গ্রহে-গ্রহে। মহাকাশ আবিষ্কারে ছুটছে আধুনিক বিজ্ঞান, বৈজ্ঞানিক ভাবনা ও কল্পনা।
সুনীতাদের অভিজ্ঞতায় পৃথিবীতে নিঃসন্দেহে এল এক নতুন মহাবিশ্ব, যা অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে মহাবিশ্বে প্রাণসন্ধানের রূপকথাকে। প্রার্থনা ছিল, সুনীতারা সবাই যেন ভালোয়-ভালোয় মর্তে ফিরে আসেন। সেটা ঘটার পর এবার অপেক্ষা শুরু। তাঁদের মুখ থেকে, তাঁদের ব্যক্তিগত বার্তায় যেন আমরা জানতে পারি মহাশূন্যের প্রাণময়তার কথা। আর সেই সঙ্গে জানতে পারি, দূরের আকাশে ঠিক কেমন দেখায় আমাদের পৃথিবীকে!