সন্দীপ্তা ভঞ্জ: আমাজন প্রাইম ভিডিওতে সদ্য মুক্তি পেয়েছে ‘বাওয়াল’। মুখ্য ভূমিকায় বরুণ ধাওয়ান, জাহ্নবী কাপুর। হিটলারি শাসন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধর সঙ্গে সম্পর্কের কাহিনি কতটা মেলাতে পারলেন পরিচালক নীতেশ তিওয়ারি?
ট্রেলার দেখে প্রথমটায় অনেকেই মনে করেছিলেন যে পরিচালক হয়তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এক প্রেমকাহিনি বুনেছেন। তবে সিনেমা রিলিজের পরই ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়ল বিড়াল! বলিউডি মশালা মোড়কে এই ছবি আদতেও ইতিহাস কেন্দ্রিক নয়। বরং, সামাজিক ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য এক ইতিহাস শিক্ষকের ‘শুচিবায়ুগ্রস্থ’ বদঅভ্যসের গল্প। আত্মকেন্দ্রিক একটা মানুষের জন্য তাঁর পারিপার্শ্বিক মানুষজনকে কতটা ভুগতে হয় কিংবা কীরকম সংকটের মধ্যে পড়তে হয়, ‘বাওয়াল’-এ সেই গল্পই বলা হয়েছে।
লখনউয়ের এক স্কুলে ইতিহাস পড়ান অজয় দীক্ষিত। কিন্তু পৃথিবীতে পড়ানো বাদ দিয়ে বাকি সব বিষয়ে তাঁর জ্ঞানের জুড়ি মেলা ভার! সকলের কাছে আজ্জু ভাইয়া বরুণ ধাওয়ান একজন আদর্শ। আসলে লখনউ শহরে নিজের ভাবমূর্তি তৈরিতে কিংবা ঠিক রাখতে এতটাই ব্যস্ত সে যে নিজের স্ত্রী, মা-বাবা কাউকেই রেয়াত করে না। শৈশবের না পাওয়ার খিদে তাকে এহেন ভাবমূর্তি লোভী করে তুলেছে। এদিকে আজ্জুর স্ত্রী নিশার ভূমিকায় জাহ্নবী শৈশব থেকেই মৃগী রোগে আক্রান্ত। তবে পাড়া-পড়শিদের কাছে ইমেজ ঠিক রাখতে অবস্থাসম্পন্ন ঘরের মেয়ে নিশাকে বিয়ে করে সে। বিয়ের দিন দশ বছর পর স্ত্রীয়ের ফিরে আসা মৃগী রোগের ছটফটানি তার সব স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দেয়। স্ত্রী-পরিবার কিছুতেই সন্তুষ্ট নয় আজ্জু। এহেন স্বার্থান্বেষী মানুষ একদিন বিদেশে গিয়ে সংকটে পড়ে স্ত্রীয়ের সঙ্গে ভাব জমাতে বাধ্য হয়। তারপর কি মধুরেণ সমাপয়েৎ? বাকিটা দেখতে হলে ওটিটির পর্দায় চোখ রাখুন। তবে সিনেমার মেকিং নিয়ে দু-চার কথা অতি উল্লেখযোগ্য।
প্রথমত চিত্রনাট্যের কথায় আসি। বুনোট একেবারে আলগা। ইতিহাসের সঙ্গে অস্তিত্ব সংকটে ভোগা একটা মানুষের ক্রাইসিসের গল্প মেলাতে গিয়ে একেবারে ভরাডুবি ঘটেছে। বহু জায়গায় লুপহোল চোখে পড়ে। দ্বিতীয়ত সংলাপ। মশালা, আবেগি ডায়লগ থাকলেও ইতিহাসের কালো অধ্যায়ের বিবরণ দিতে গিয়ে যে স্পেসটা ব্যবহার করেছেন পরিচালক, তা সত্যিই বালখিল্যতার পরিচয়। ‘ছিঁচড়ে’, ‘দঙ্গল’, ‘ভূতনাথ রিটার্নস’-এর মতো সিনেমার পরিচালকের থেকে অন্তত এটা আশা করা যায়নি! মধ্যবিত্ত বাড়ির ক্রাইসিসটা আরেকটু ভাল করে দেখানো যেত। নিশার সঙ্গে আজ্জুর চরিত্রের কনট্রাস্ট খাওয়ানোর ক্ষেত্রে আরও দক্ষ হওয়া যেত। উল্লেখ্য, বরুণ ধাওয়ানের অভিনয় মন্দ নয়। জাহ্নবী কাপুরকেও যথাযথ লাগল। তবে ভাল ছবি হিসেবে মার্কশিটে ভাল নম্বর দেওয়ার মতো নয়!
সিনেমা – বাওয়াল
অভিনয়- বরুণ ধাওয়ান, জাহ্নবী কাপুর, মনোজ পাহুয়া
পরিচালনা: নীতিশ তিওয়ারি