চারুবাক: শরৎচন্দ্রের গল্প উপন্যাস নিয়ে ছবি করা মানেই বাজারি সাফল্য নিশ্চিত। সম্ভবত সেই কারণেই চিত্র – সাংবাদিকতাকে পাশে সরিয়ে নির্মল চক্রবর্তীর ছবি করতে আসা! মজার ঘটনা হল শরৎচন্দ্রের ‘দত্তা’ (Datta) কাহিনি নিয়ে ইতিপূর্বে দু-দু’বার বাংলাতেই ছবি হয়েছে। প্রথম ১৯৫১ সালে। অভিনেত্রী সুনন্দা দেবীর প্রযোজনায়। তিনি নিজেই ছিলেন মুখ্য চরিত্র বিজয়ার ভূমিকায়, পরিচালক ছিলেন সৌমেন মুখোপাধ্যায়। সে ছবিতে অবশ্য সুনন্দার অভিনয় খুব একটা প্রশংসা পায়নি। যাই হোক, ‘দত্তা’ দ্বিতীয়বার চিত্রায়িত হয় পরিচালক অজয় করের হাতে ৭৬ সালে। তখন বিজয়ার ভূমিকায় ছিলেন অবসৃত নায়িকা সুচিত্রা সেন (Suchitra Sen)। মহানায়িকার উপস্থিতি ছবিটি নিয়ে সাধারণ দর্শকের মধ্যে উৎসাহ জাগিয়েছিল।
কিন্তু উল্লেখযোগ্য সঙ্গে সৌমিত্রকে (নরেন) নিয়েও ছবিটি মাঝারি সাফল্য পায়।
এবারে তৃতীয় সংস্করণে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (Rituparna Sengupta) বিজয়ার চরিত্রে শুধু অভিনয় করেননি, ছবিটি প্রযোজনার দায়িত্বও নিয়েছেন। নতুন পরিচালক নির্মল চক্রবর্তীকে হয়তোবা কিঞ্চিৎ সাহায্যের জন্য। কিন্তু, ছবিটি কি সফল হবে বক্স অফিসে? জিজ্ঞাসা থাকছে ‘দত্তা’র নির্মাণ পারিপাট্য নিয়ে।
প্রথমত, পুরনো সময়ের কাহিনিটি এখনকার দর্শকের কাছে কতটা আবেদন রাখবে সেটাই বড় প্রশ্ন। চিত্রনাট্যকার সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায় মূল উপন্যাসের থেকে এতটুকু বিচ্যুতি ঘটাননি। যেটা প্রয়োজন ছিল এখনকার দর্শকের কথা ভেবে। হয়তো প্রযোজক পরিচালক বলবেন শরৎচন্দ্রের গল্পের ওপর কোনও পরিবর্তনের দুঃসাহস তাঁরা দেখাননি। কিন্তু এখনকার দৃষ্টিতে দর্শক যদি জনপ্রিয় কাহিনির নতুন ইনটারপ্রিটেশন চায় সেটা অন্যায্য হবে কেনো?
[আরও পড়ুন: হনুমানের মুখে রদ্দিমার্কা সংলাপ, দেশের কাছে ক্ষমা চান! ‘আদিপুরুষ’ নির্মাতাদের তোপ শিবসেনার]
শেক্সপিয়রের বহু নাটক ও গল্পের নতুনতর ইন্টারপ্রিটেশনতো আমরা দেখেছি। কাহিনির প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে গিয়ে তাঁরা সেই গত শতাব্দীর বিশ তিরিশ দশকের পটভূমিতে একটি প্রণয় কাহিনীর চিত্রনির্মাণ করেছেন শুধু। বাড়তি কোনও মাত্র যোগ দিতে পারেননি। গল্পের অন্দরে আর ঢুকছি না, বিজয়া চরিত্রের দৃঢ়তা, পুরষশাসিত দম্ভের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাঁর প্রতিবাদ যেভাবে সুচিত্রা সেন ব্যক্তিত্ব নিয়ে অভিনয় করেছিলেন, ঋতুপর্ণা চেষ্টা করেছেন মাত্র। বিজয়ার ব্যক্তিত্ব ও প্রতিবাদে সেই জোশ নেই। তাঁর মেকআপটাও সারা ছবি জুড়ে মসৃণ ছিল না।
জয় সেনগুপ্ত (Joy Sengupta) হয়েছেন নরেন। তাঁর অভিনয়ের কমেডির মোড়ক দেওয়াটা ভাল লাগেনি, চরিত্রটি কিছুটা খেলো হয়ে গেছে। বিলাসের চরিত্রে সাহেব চট্টোপাধ্যায় (Saheb Chatterjee) বরং ভিলেনিপনাটি এনেছেন ভালই। রাসবিহারীর ভূমিকায় বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী মানিয়েছে। তবে নলিনী (দেবলীনা কুমার) চরিত্রটির আরও একটু বেশি জায়গা দেওয়া উচিত ছিল চিত্রনাট্যে। ছবির চিত্রগ্রহণ ও শিল্পীদের সাজসজ্জা এবং পুরনো সময়ের পরিবেশ তৈরিতে যতটা মনোযোগ দিয়েছেন, তার ভগ্নাংশ যদি কাহিনি বিন্যাসে দিতেন তাহলে এই তৃতীয় ‘দত্তা’ অন্য চেহারা পেতে পারত। এই ছবির মাত্র একটাই প্লাস পয়েন্ট – জয় সরকারের আবহ। রবীন্দ্র গানের ব্যবহার আগের ছবিগুলির তুলনায় অনেক বেশি নাটকীয় এবং প্রিল্যুড হিসেবেও সুন্দর। পরিচালক নির্মল চক্রবর্তী তাঁর প্রথম ধাপে একটু হোঁচটই খেলেন। আশাকরি, পরবর্তী প্রয়াসে তিনি একটু সচেতন হবেন।
ছবি – দত্তা
অভিনয়ে – ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, জয় সেনগুপ্ত, সাহেব চট্টোপাধ্যায়, দেবলীনা কুমার, বিশ্বনাথ চক্রবর্তী
পরিচালনা – নির্মল চক্রবর্তী