shono
Advertisement

মাতৃত্বের লড়াইয়ে রানির দাপুটে অভিনয়! কেমন হল ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’? পড়ুন রিভিউ

পরিচালক দর্শককে প্রথমেই বুঝিয়ে দিলেন এই ছবির মেজাজ উঁচু তারে বাঁধা।
Posted: 04:19 PM Mar 16, 2023Updated: 06:01 PM Mar 16, 2023

বিদিশা চট্টোপাধ্যায়: রানি মুখোপাধ্যায় ভাল অভিনেত্রী , এ কথা আমরা সবাই জানি , কিন্তু জুহুর পিভিআর মাল্টিপ্লেক্সে স্পেশাল স্ক্রিনিংয়ে ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ (Mrs Chatterjee vs Norway) দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল রানি সবটা উজাড় করে দিয়েছেন। এই ছবি নিয়ে উৎসাহ ছিল আরও একটা কারণে। অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য্যর বলিউড ডেবিউ। রানির পাশাপাশি অনির্বাণকে দেখার আগ্রহও ছিল। অসীমা ছিব্বর পরিচালিত এই ছবি সাগরিকা ভট্টাচার্যর জীবন নিয়ে । ২০১২ সালে বিরাটির সাগরিকার, নরওয়ে সরকারের বিরুদ্ধে নিজের সন্তানের হেফাজত নিয়ে আইনি লড়াই হেডলাইন হয়েছিল। সাগরিকার লেখা বই ভিত্তি করে মাতৃত্বের এই লড়াই নিয়েই তৈরি ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’। সাগরিকা এখানে দেবিকা এবং সেই চরিত্রেই রানি । অনির্বাণ ভট্টাচার্য রানীর স্বামী অনিরুদ্ধ চ্যাটার্জির চরিত্রে। ছবির শুরতেই দেখা যায় নরওয়ের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সংস্থা , দেবিকা – অনিরুদ্ধর সন্তান শুভ এবং সুচিকে তুলে নিয়ে যায়। হলুদ ঢাকাই শাড়ি পরে প্রায় খালি পায়ে রানির দৌড় নরওয়ের রাস্তায়। ছবির লয় প্রথমেই হাই অকটেভে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: পাওনা শুভশ্রীর অভিনয়, মানুষ আর সময়ের গল্প বলে ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’]

পরিচালক এবং চিত্রনাট্যকার দর্শককে প্রথমেই বুঝিয়ে দিলেন এই ছবির মেজাজ উঁচু তারে বাঁধা। ছবি যত এগোয় খানিক ফ্ল্যাশব্যাকে আমরা দেখি দেবিকা আর অনিরুদ্ধর সংসারের নানা টুকরো ছবি। আর পাঁচটা বাঙালি পরিবারের মতোই দেবিকা নতুন বাড়ি আর বাচ্চা সামলাতে হিমশিম, অন্যদিকে অনিরুদ্ধ ব্যস্ত তার অফিসের কাজ নিয়ে। এরই মধ্যে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার অফিসারদের রেগুলার ভিজিট। তাদের চোখে , অনেক কিছুই বিচ্যুতি মনে হয়। বাচ্চাকে নিজের হাতে খাওয়ানো, কপালে কালো টিপ এঁকে দেওয়া , বাচ্চাদের বাবা মায়ের সঙ্গে শোয়া কিংবা অনিরুদ্ধ সংসারের কাজে একেবারেই সাহায্য না করা। আমাদের সংস্কৃতিতে এইসব স্বাভাবিক। স্বামী ঘরের কাজ করে না বেশির ভাগ বাড়িতেই। অনিরুদ্ধ সেই মিসোজিনির বরপুত্র। আলাদা নয় কোথাও। ইমোশনালি হাইপার দেবিকার ওপর বেশিই শাসন করে অনিরুদ্ধ । একটা দৃশ্য আছে যেখানে অনিরুদ্ধ চড় মারে দেবিকাকে , পাল্টা দেবিকাও হাত তোলে বরের ওপর। হল ফেটে পড়ে হাততালিতে। বোঝা যায় কিছুতেই হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয় দেবিকা। এদিকে পরিবারের একটা অশান্ত ছবি তৈরি হয় বাইরের জগতের কাছে যা এই দেবিকা – অনিরুদ্ধর বিরুদ্ধে যায়। অন্যদিকে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার মহিলা অফিসারদের চরিত্র এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন তারা বসেই আছে একটা সুযোগের জন্য। বাবা মা ভুল করলেই তারা প্রায় খপাত করে বাচ্চা নিয়ে দৌড় দেবে , অনেকটা ছেলেধরাদের মত । তারা যে ভিলেন সেটা স্পষ্ট করে দেওয়া হয় তাদের নিজেদের মধ্যে শয়তানি দৃষ্টি বিনিময়ের দৃশ্যে । ঠিক যেন মেগা সিরিয়ালের কুচক্রী ননদ ! পরিচালক সেইভাবেই তাদের দেখাতে চেয়েছেন। একদিকে সন্তান হারানোর যন্ত্রণায় কান্নায় জেরবার দেবিকা আর অন্যদিকে সাবধানী অনিরুদ্ধ, কারণ নিজের পার্মানেন্ট ভিসা পাওয়ার সুযোগ সে হাতছাড়া করতে চায় না। যত ছবি এগিয়েছে তাদের চরিত্রের কনট্রাস্ট উঠে এসেছে । রানি এবং অনির্বাণের অভিনয়ের মধ্যেও সেটা বেরিয়ে আসে। রানি কার্পণ্য করেননি তার আবেগ প্রকাশে আর এদিকে অনির্বাণ তার সুযোগসন্ধানী , টক্সিক চরিত্রে প্রাণ ঢেলেছেন পরিমিত অভিনয় দিয়ে। ফলে একটা ব্যালেন্স তৈরি হয় ছবিতে ।

এই ছবিতে ফ্যাক্ট এবং ফিকশনের রেশিও না খোঁজাই ভাল। কারণ গোটা ছবিটাই এক মায়ের আর্তি, তার যন্ত্রণার কথা বলে। অন্যান্য দিকগুলো কেবল হালকা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাওয়া হয়েছে। যেমন একটা ইঙ্গিত আছে যে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের একটা অন্য দিক আছে যেখানে অন্যের সন্তানের হেফাজতে আনতে পারলে রয়েছে টাকার খেলা। সেটা খুব স্পষ্ট করা হয়নি। সেটা হয়ত রাজনৈতিক কারণেই। অন্যান্য চরিত্রগুলো যেন একটু দায়সারা করে লেখা ,সেগুলোর প্রতি যত্ন নিলে এই ছবি অন্য একটা মাত্রা পেত। তবু তার মধ্যে দাগ কেটে যান ড্যানিয়েল সিং চুপ্যেক- এর চরিত্রে জিম সর্ব। রানি এবং জিমের কোর্টরুমের দৃশ্যগুলো আলাদা মাত্রা যোগ করে। স্বল্প পরিসরে জিম এবং বালাজি গৌরী ( ভারতীয় আইনজীবী ) নজর কেড়েছেন। অনির্বাণ ভট্টাচার্য ছাড়াও কলকাতা থেকে রানির বাবা এবং মায়ের চরিত্রে রয়েছেন বোধিসত্ত্ব মজুমদার , শাশ্বতী গুহঠাকুরতা এবং অনির্বাণের মা এবং ভাইয়ের চরিত্রে মিঠু চক্রবর্তী এবং সৌম্য মুখোপাধ্যায়। বাকিদের মত তাদেরও কিছু করার নেই। এমনকি নীনা গুপ্ত অভিনীত ক্যামিও চরিত্রেও মুখ দেখানো বিশেষ কিছু করতে পারেননি।

‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রানি মুখোপাধ্যায়ের ছবি। একজন মা যখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে তখন সিনেমায় আর কোনও কিছু গুরুত্ব পায় না। রানি এই চরিত্রে তার সর্বস্ব দিয়ে অভিনয় করেছেন । তার জন্যই এই ছবি দেখা যায়। এবং অবশ্যই রুমাল নিয়ে সিনেমা হলে ঢুকবেন। এই ছবি দেখতে হলে সেটা মাস্ট ।

[আরও পড়ুন: প্রেম-ব্রেকআপের গল্পে সেরা রণবীরই, একশো শতাংশ বিনোদন দেবে ‘তু ঝুটি ম্যায় মক্কার’, পড়ুন রিভিউ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement