নির্মল ধর: ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ দিয়ে শুরু। নাহ, সেই শুরুটা সত্যিই ছিল অন্যরকম! বাংলা সিনেমায় সাম্প্রতিক রাজনীতির অমন ব্যঙ্গাত্মক মূল্যায়ণ আগে হয়নি। এরপর ভূতকে বিষয় করে একাধিক ছবি হয়েছে বটে, কিন্তু ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এর সাফল্যের কাছাকাছি কেউই পৌঁছতে পারেনি। তবুও ভূত বাংলা সিনেমার ঘাড়ে চেপেই যেন আছে, ঘাড় থেকে নামতেই চাইছে না। ভূত বলে কথা! অত সহজে কি তাড়ানো যায়? পরিচালক দেব রায় তাঁর প্রথম স্বাধীন ছবিতেও তাই বুঝি ভূতের ঘাড়ের ওপর চেপে বসলেন নিশ্চিত সাফল্যের আশায়। তবে ভূত যে অতি বিষম বিপজ্জনক বস্তু! তার সঙ্গে ব্যবসা করতে হলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। নইলে ভূতই না ছবির নির্মাতার ঘাড়ে চেপে বসে! দর্শক তো অনেক দূরে!
‘তরুলতার ভূত’ ছবির (Torulatar Bhoot Movie) চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালক দেব রায় নিজেই, গপ্লের ভাবনা তাঁরই। সুতরাং ধরেই নিচ্ছি তিনি দর্শককে একটা বেশ জমজমাট থ্রিলার উপহার দেওয়ার আশায় ছবিটি তৈরি করেছিলেন। কিন্তু সেই আশা পূর্ণ হল কি? ছবির তিন চতুর্থাংশ জুড়ে রয়েছে চড়ুইভাতি করতে যাওয়া একটা দলের হুল্লোড়ে কীর্তিকলাপ।
অবশ্য পিকনিক করার পাশাপাশি দলের নেত্রী বড়দি(দীপান্বিতা হাজারি) এবং ম্যারিকা থেকে আসা জনৈক ভিকি ঘোষের (ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত) নার্সারি ব্যবসার একটা চক্করও রাখা হয়েছে।
অর্থাৎ তরুলতা নামের এক তরুণী বছর বিশেক আগে খুন হওয়ার পর যে পুকুরে তাঁর মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল, সেই পুকুরেই পরবর্তী সময়ে একাধিক কিশোরের জলমগ্ন হয়ে মৃত্যু হয়। রটে যায় ওই পুকুরের তলায় থাকা ‘তারুলতার ভূত’ ওই কিশোরদের মৃত্যুর কারণ। কিন্তু আসল ঘটনাটি কী? তা জানানোর জন্যই বরাদ্দ ছবির মাত্র বাকি এক চতুর্থাংশ।
[আরও পড়ুন: ভেঙে ফেলা হল ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’, মন খারাপ পরিচালক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের]
না, গল্পের সে রহস্য তো খোলসা করা যাবে না। তবে এটা বলা যায়, রহস্য উন্মোচনে কোনও নতুনত্ব নেই বা প্রয়োগেশৈলীর তেমন ব্যবহার নেই। সবটাই কথোপকথন ভিত্তিক, একেবারেই স্কুলছাত্রের মতো উত্তর লেখার ভঙ্গিতে। জানি, পেডোফেলিক এর মত বিষয় নিয়ে আমাদের নিরামিষ বাংলা ছবি আর কদ্দুর এগোতে পারে! তাহলে বাপু, এমন ‘অচ্ছুৎ’ বিষয় বেছে নেওয়াই বা কেন? ইচ্ছে থাকলেও সেন্সর নামক জুজুর ভয়ে ‘পেডোফিলিয়া’ নামের অসুস্থ মানসিকতার ব্যাপারটাই ‘চেপে’ যেতে হয়েছে পরিচালককে। ফলে সংঘ্যাগুরু দর্শকের কাছে গল্পের কেন্দ্রবিন্দুটাই পরিষ্কার হবে কিনা বলা মুশকিল।
দেব রায় মহাশয় চড়ুইভাতি করতে যাওয়ার মতো বেশ হালকা চালে ছবির শুরু এবং অনেকটা জায়গাই জমিয়ে রেখেছেন বিভিন্ন চরিত্রের সম্পর্কের খুনসুটি আর হালকা রসিকতায়। তাদের কয়েকজনের কারণ সুধা পান করে ফুর্তি করার পরিবেশটিও মন্দ লাগেনি। অবশ্য এখানেও দলের কিচেন ম্যানেজার এবং তার স্ত্রীর গাছপালার আড়ালে শারীরিক কম্মোটি দেখানো কি খুবই জরুরি ছিল? ভূতের কার্যকলাপ নিয়ে এত যুক্তি-তর্কই বা কেন?
উপল সেনগুপ্তর সুরে চন্দ্রিল ও অনিন্দ্যর গাওয়া গানগুলো কিন্তু ছবির গায়ে ভূতের চাদর জড়িয়ে রাখার মতোই লাগল। একমাত্র পিকনিকের গানটি ব্যতিক্রম। সেটিকে ‘ভূত’ ধরতে পারেনি। ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায়, ইশা সাহা, সুমিত মজুমদার, প্রদীপ মুখোপাধ্যায়, দীপান্বিতা ছাড়া বাকিদের প্রায় সকলেই নতুন বা অল্প পরিচিত শিল্পী। তাদের অভিনয় কিন্তু বেশ জমাট। ভূতের ভয়ে সকলে তটস্থ হয়ে ক্যামেরার সামনে এতটুকুও ঘাবড়ে যাননি। মনের চোরাবালিতে বোধহয় যাবতীয় ভয় হারিয়ে গিয়েছে!
- ছবি – তরুলতার ভূত
- অভিনয়ে – ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, ইশা সাহা, বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায়, প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
- পরিচালক – দেব রায়