নির্মল ধর: সাইনা নেহওয়াল (Saina Nehwal) নির্দ্বিধায় ভারতীয় খেল জগতের সুপারস্টার। তাঁর একক কৃতিত্ব শচীন বা গাভাস্কারের তুলনায় কোনও অংশে কম নয়। ব্যাডমিন্টন, বিশেষ করে মহিলা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হিসেবে তিনি ‘পদ্মভূষণ’ পর্যন্ত পেয়েছেন। সুতরাং তাঁর জীবন নিয়ে লাগসই একটা স্পোর্টস ফিল্ম হতেই পারে। পরিচালক অমল গুপ্তে (Amole Gupte) সাইনার আত্মজীবনী থেকে কতটুকু সাহায্য নিয়েছেন জানি না, কিন্তু ছবির মধ্যে একজন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়ের যে পাঁচটি ‘S’ গুণের অধিকারী হওয়ার কথা বলেছেন – তার একটি হলো স্পিরিট। সাইনার চরিত্রায়নে সেই ‘তেজ’ বস্তুটির বেশ অভাব লাগল। হ্যাঁ, অমল খুবই নিপুণভাবে, খুব ডিটেইলসে কিশোরী সাইনার উত্থানকে তুলে এনেছেন। বিশেষ করে মা ঊষা রানির (যিনি নিজেও ছিলেন ব্যাডমিন্টন প্লেয়ার) অদম্য আগ্রহ মেয়েকে খেলোয়াড় বানানোর পর্বটি সুন্দর এঁকেছেন।
পুল্লেলা গোপীচাঁদের (Pullela Gopichand) কোচিংয়ে গিয়েই পূর্ণতা পায় সাইনার খেলা ও প্রতিভা। ছবিতে অবশ্য অজানা কারণে গোপীচাঁদকে করে দেওয়া হয়েছে জনৈক রাজন(মানব কউল)। রাজনের সঙ্গে সাইনার গুরু-শিষ্যার সম্পর্কটি নাটকীয়তায় না নিয়ে গিয়ে একটু অনুচ্চারিত রাখাটা ভাল ভাবনা। যে কারণে তাঁর কোচিং সেন্টার থেকে সাইনার অভিমান করে চলে আসা কোনও নাটকের আশ্রয় না নিয়েও একটা অভিঘাত তৈরি করে দেয়। ভাল লাগে খেলোয়াড় বন্ধু কাশ্যপের সঙ্গে সাইনার সম্পর্ক তৈরির সুন্দর বুননটিও।
ব্যাডমিন্টন কোর্টে খেলার নাটকীয় স্ম্যাশিং, সার্ভিংয়ের দৃশ্যগুলি পীযুষ শাহের (Piyush Shah) চিত্রগ্রহণ এবং সম্পাদক দীপা ভাটিয়ার (Deepa Bhatia) সুন্দর যুগলবন্দিতে দর্শকের চোখ এবং মন কেড়ে নেয় নিশ্চয়ই। কিন্তু অরিজিনাল সাইনার খেলার কোর্টে এবং কোর্টের বাইরেও যে প্রকৃত স্পিরিট ও স্ট্যামিনার পরিচয় দর্শকের অভিজ্ঞতায় রয়েছে এখনও, সেটা পর্দায় যেন তেমনভাবে জীবন্ত হল না। একটি মাত্র দৃশ্যে, যেখানে অভিমানী সাইনা রাজনের কোচিং ক্যাম্প ছেড়ে নীরবে বেরিয়ে যাচ্ছে, কিছুটা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: প্রচারে বেরিয়ে পায়ে আঘাত তৃণমূল সাংসদ মিমির, যন্ত্রণা নিয়েই করলেন জনসভা]
খেলা নিয়ে এর আগেও অমল গুপ্তে ‘হাওয়া হওয়াই’ নামে একটি ছবি বানিয়েছিলেন। সেখানে নাটকীয়তার বাড়াবাড়ি ছিল, যা এই ছবিতে অনেকটাই সংযত। আরও একটা কাজ বোধহয় পরিচালককে বাধ্য হয়ে করতে হয়েছে – মা উষা রানির চরিত্রটিকে একটু অতিরিক্ত জায়গা দেওয়া। এই চরিত্রে মেঘনা মালিক (Meghna Malik) অবশ্যই স্নেহশীল, জেদি, কর্তব্যপরায়ণ মায়ের কাজটি ক্যামেরার সামনে একেবারেই বাস্তব করে তুলেছেন।
নাম ভূমিকায় পরিণীতি চোপড়া (Parineeti Chopra) পরিশ্রমে কার্পণ্য করেননি। অভিনয়ও বেশ জীবন্ত, স্বতস্ফূর্ত। কোর্টের মধ্যে তাঁর খেলোয়াড়সুলভ মুভমেন্টগুলো নজর কাড়ে বৈকি! শুধু অরিজিনাল সাইনার মতো যদি তাঁর ছিপছিপে শরীরটি হতো। তবে সেই খামতি পরিণীতি পূরণ করে দিয়েছেন নীরব কিছু মুহূর্ত উপহার দিয়ে। অমল গুপ্তের সেরা ছবি এটা কখনই নয়, কারণ ওঁর ‘স্ট্যানলি কা ডাব্বা’ দেখার অভিজ্ঞতা এখনও ভোলা সম্ভব হয়নি। সাম্প্রতিক ছবি ‘মুম্বাই সাগা’তেও অমলের অভিনয় বেশ নজরকাড়া। তবে স্পোর্টস ফিল্ম হিসেবে ‘সাইনা’ (Saina Film) মাঝারি মাপের হয়েই রইল।