বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: সর্বকালীন রেকর্ড কাঁচা চা পাতার দাম মিলতেই পালটাতে শুরু করল উত্তরের পাঁচ জেলার কৃষি বলয়ের ছবি। সবজি চাষ ফেলে চাষিদের একাংশ এখন উর্বর জমিতে চা বাগান তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে চা পাতার অতি উৎপাদন এবং সবজি চাষ কমে যাওয়ার শঙ্কা বাড়ছে।
কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “লকডাউনের আগে কাঁচা চা পাতা ৪০ টাকা থেকে ৪৩ টাকা কেজি দামে বিক্রি হয়েছে। সর্বকালীন রেকর্ড দাম ছিল এটা। ওই দাম দেখে এখন অনেকেই নতুন করে চা বাগান তৈরিতে নেমেছে।” এমনিতেই উত্তরের জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর জেলা এবং শিলিগুড়ি মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষের উর্বর জমি দখল করে চা বাগান পৌঁছে গিয়েছে বাড়ির উঠানে। যেদিকে চোখ যাবে দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির হদিশ। ওই পরিস্থিতি দেখে অর্থনীতির গবেষকদের কপালে অনেক আগেই চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তাঁদের শঙ্কা, ভূমি ব্যবহারের চরিত্রগত এই পরিবর্তন চলতে থাকলে আগামী দিনে উত্তরবঙ্গে সবজি ও খাদ্যশস্য উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
কৃষি দপ্তর সুত্রে জানা গিয়েছে, গত তিন দশক থেকে গ্রামের চেনা ছবি পালটাতে শুরু করেছে। ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে উত্তরের বিরাট মাপের চাষের জমিতে ছোট চা বাগান গড়ে ওঠে। ২০০১ সালের পর পরিবর্তন আরও গতি পেয়েছে। চাষিদের অনেকেই নিজের জমিতে বাগান গড়ে তোলেন। আবার অনেক চাষি কাজের শর্তে বাগান তৈরির জন্য জমি লিজে দিয়ে শ্রমিকে পরিণত হয়েছেন। ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সমীক্ষা রিপোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর এবং দার্জিলিং জেলার প্রায় আড়াই লক্ষ হেক্টর উর্বর চাষের জমি ছোট চা বাগানের দখলে চলে গিয়েছে। কেন ধান ও সবজি চাষ ছেড়ে চা বাগান তৈরির ঝোঁক? ময়নাগুড়ির রামশাই এলাকার চাষি ভবেন রায় বলেন, “সবজির দাম নেই। নিরুপায় হয়ে এক একর ধানের জমিতে চা বাগান করেছি। বছরে ৬ হাজার কেজি পাতা উঠছে। এবার দাম মিলছে ৪৩ টাকা কেজি।।”
কিন্তু চাষিদের একাংশ খুশি হলেও জলপাইগুড়ি আনন্দচন্দ্র কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, “এক সময় জঙ্গল সাফ করে তৈরি বড় চা বাগানগুলি এখন ধুঁকছে। কাঁচা পাতার দাম কমে গেলে ক্ষুদ্র চা চাষিরা কোথায় যাবে জানি না। তা ছাড়া চাষের জমি কমে যাওয়ায় সবজি ও খাদ্যশস্য উৎপাদনেও ঘাটতি দেখা দেবে।”
[আরও পড়ুন: সাধারণতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে এ কী করলেন শিল্পা! নেটদুনিয়ার হাসির রোল]
যদিও ওই বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাতে পারেননি কৃষি দপ্তরের কর্তারা। জলপাইগুড়ি মহকুমা কৃষি আধিকারিক মেহফুজ আহমেদ জানান, এই বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার বাইরে কিছু করার নেই। কারণ, চাষিরা নিজের জমিতে কি করবেন সেটা নিয়ে জোর করা সম্ভব নয়। কিন্তু পরামর্শ শুনছে কে? উলটে গ্রামীণ জীবনের ছবি এতটাই দ্রুত পালটে যাচ্ছে যে এখন উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং ও কোচবিহার জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ধান ও সবজির খেত খুঁজে বেড়াতে হয়। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী জানান, বাগানের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পাতার উৎপাদন বেড়েছে। ২০২০ সালে পাতা উৎপাদনে প্রথম বড় বাগানকে পিছনে ফেলেছে ছোট বাগান। আগামী দিনে সেটা আরও বাড়বে।