স্টাফ রিপোর্টার, মালদহ: শীত ফিরতেই মুকুলে ভরল আমবাগান। আমের জেলা মালদহে এবার ব্যাপক হারে মুকুল এসেছে আম গাছে (Mango tree)। আশায় বুক বেঁধেছেন আমচাষিরা। মালদহের প্রতিটি আমগাছ মুকুলে মুকুলে ভরে গিয়েছে। যা সাম্প্রতিক অতীতে হয়নি। প্রায় ৮০ শতাংশ আমগাছে ব্যাপক হারে মুকুল এসেছে।
আম রসিক বাঙালিদের কাছে এটি অবশ্যই সুখবর। মুকুল দেখে অনেকেই আশাবাদী, ফলন ভাল হলে মালদহের আম মিলতে পারে সস্তায়। আমের জেলার ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে উদ্যানপালন দপ্তরের কর্তারা বলছেন, গাছে যা মুকুল এসেছে তার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ টিকে থাকলেই এবার মালদহে আমের ফলন রেকর্ড করবে। যা আগের সমস্ত রেকর্ডকে ভেঙে দেবে। ইংলিশবাজারের মহদিপুরের এক আম রপ্তানি ব্যবসায়ী সমীর ঘোষ বলেন, “এবার যে পরিমাণে আমগাছে মুকুল এসেছে তা আমি আগে কখনও দেখিনি। কিন্তু ভয় হচ্ছে এত মুকুল শেষ পযর্ন্ত টিকে থাকবে তো?” রতুয়ার কাহালা এলাকার আমচাষি আসগার আলি বলেন, “এখন বৃষ্টি না হলে এই মুকুল রক্ষা করা যাবে না। রোদেই সব পুড়ে যাবে। তাই মুকুলে জল স্প্রে করতে হচ্ছে। এতে আমের গুটির ডগা শক্ত হয়ে উঠবে। ঝরে পড়ার আশঙ্কা থাকবে না।”
[আরও পড়ুন: নেট হাউজের মাধ্যমে আলুর বীজ বপন, লাভের মুখ দেখছেন মালবাজারের কৃষকরা]
মালদহের (Maldah) জেলা উদ্যান পালন দপ্তরের বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অতিরিক্ত গুটি ঝরে না পড়লে আমের আকার ছোট হয়। আমের গুণগত মান ও ফলন কমে যায়। প্রতিটি মুকুলে একটি করে গুটি থাকলেই আমের ব্যাপক ফলন হবে। এনিয়ে দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। আমবাগানের মাটিতে রসের অভাব হলেও আমের গুটি ঝরে যায়। এজন্য গাছের চারপাশে নিয়মিত জল দিতে হবে। বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত ১৫ দিন অন্তর জল দিলেই সমস্যা থাকবে না। আমবাগান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আগাছামুক্ত ও খোলামেলা অবস্থায় রাখতে হবে। উদ্যান পালন দপ্তরের এক কর্তা রাহুল চক্রবর্তী জানিয়েছেন, রাজ্যে ৬০-৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। তার প্রায় অর্ধেক জমি মালদহে রয়েছে। রাজ্যের মোট আমের ৪৫-৫০ শতাংশ উৎপাদন মালদহ জেলা থেকেই হয়।
চাঁচোলের শিক্ষক তথা জেলার আমচাষ বিশেষজ্ঞ কমলকৃষ্ণ দাসের মতে, গাছে মুকুল এলেও আম গজানোর জন্য অন্তত ২২-২৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা দরকার। শীতের পর সেই উষ্ণতা না পেলেই আমের ফলন মার খায়। সেই সমস্যা এবার নেই। গাছে গাছে মুকুল ভালই এসেছে। জেলা উদ্যান পালন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়। জেলার মধ্যে ইংলিশবাজারে ৯ হাজার, মানিকচকে ৫ হাজার, রতুয়া ১ ও ২ ব্লকে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়। গাজোল, বামনগোলা, চাঁচোল, হবিবপুর, কালিয়াচক-সহ বিভিন্ন এলাকায় আমচাষের জমির পরিধি ক্রমশ বাড়ছে।