সুমন করাতি, হুগলি: জলে আর বয়ে যাবে না। পুকুরের মালিকরা হয়তো তুলেও ফেলবেন না। বরং আগামীতে চাষও হতে পারে। ভাবছেন, কী সেটা? উত্তর - কচুরিপানা। হ্যাঁ, কার্যত অব্যবহার যোগ্য ফাঁপা, রসালো জলজ উদ্ভিদ। কচুরিপানার ফুল দেখতে বেশ সুন্দর হলেও, তা কোনও কাজে আসে না। সেই পন্টেডেরিয়া (কচুরিপানার বিজ্ঞানসম্মত নাম) থেকে তৈরি হচ্ছে শৌখিন ব্যাগ, ফাইল, পেনদানি, ডাইনিং ও যোগা ম্যাট। যা বাজারে বিকোচ্ছে ৫০ থেকে ২ হাজার টাকায়।
হুগলির ব্যান্ডেল (Bandel) ত্রিকোণ পার্ক এলাকায় কচুরিপানা থেকে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন সামগ্রী। সেই কাজ করছেন মহিলারা। কীভাবে কচুরিপানা থেকে এত সামগ্রী তৈরি হচ্ছে? মহিলা হস্তশিল্পী শর্বরী কুণ্ডু বলেন, "জল থেকে তুলে এনে রোদে শুকনো হয়। পরের ধাপে সরু ও মোটা কচুরিপানা বাছাই করে আলাদা করা হয়। তার পর বুনোটে ফেলে তৈরি করা হয় বিভিন্ন সামগ্রী।"
[আরও পড়ুন: মিড ডে মিলের খাবারে বিছে! স্কুলের বাইরে বিক্ষোভ অভিভাবকদের, ব্যাপক চাঞ্চল্য বাঁকুড়ায়]
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য তাপসকুমার বৈদ্য বলেন, "আমাদের শহরের পাশে রয়েছে সরস্বতী নদী। সেই নদী থেকেই কচুরিপানা সংগ্রহ করি। তার পর বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে তৈরি করি আর্দ্রতা মুক্ত পরিবেশবান্ধব সামগ্রী।" কারা তৈরি করছেন এসব? তাপসবাবু বলেন, "প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কর্মী তৈরি করেছি আমরা। মূলত মহিলারাই এই কাজ করছেন।"
এই শিল্পের ভবিষৎ কী? জবাবে তিনি জানাচ্ছেন, "এই সামগ্রীগুলি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে বিদেশের বাজারে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেখানে চাহিদাও রয়েছে, দামও ভালো পাওয়া যাবে।" স্বনির্ভর গোষ্ঠী মারফত জানা যাচ্ছে ইতিমধ্যেই এই বছর আমেরিকা, জাপান ও ইন্দোনেশিয়াতেও বেশ কিছু হস্তশিল্প নমুনা পাঠানো হয়েছে। এখানকার শিল্পীরা দেরাদুন, চণ্ডীগড়-সহ একাধিক রাজ্যে নিজেদের পসরা নিয়ে গিয়েছেন। এক্ষেত্রে সরকারি বা বেসরকারি সাহায্য পেলে আরও বেশি করে রপ্তানি করার চেষ্টা করা হবে বলে জানানো হয়েছে ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তরফে।
শর্বরী কুণ্ডু আরও বেশি করে মহিলাদের এই কাজে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, "সংসারের সমস্ত কাজ সেরে তার পর আমরা এই কাজে আসি। মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকা উপার্জন হয়। আগামী দিনে অন্যান্য মহিলারাও এই কাজে এগিয়ে আসুক।" অযত্নে পড়ে থাকা কচুরিপানা থেকেও যে এভাবে শিল্পকর্ম করা যায় সেটা দেখে খুশি এলাকার বাসিন্দারা। অনেকের মতে এটা আগামী দিনে আয়ের একটা বড় উৎস হতে চলেছে।