রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়: ছবির নাম, 'আমি যখন হেমা মালিনী'! নাকি, শুধু ' হেমা মালিনী'? প্রচারপত্রে দুটি নামই ব্যবহার করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাক্কা, ছবিটা উৎসর্গ করা হয়েছে হেমামালিনীকে। প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, 'Here Hemamalini stands for secret yet forbidden desires of heart'! অর্থাৎ এই ছবির হেমামালিনী মানুষ নন। তিনি হৃদয়ের গোপন অথচ নিষিদ্ধ ভাবনার প্রতীক। কিন্তু ছবি জুড়ে গোপন নিষিদ্ধ ভাবনার বহতা হৃদয়ে সীমিত থাকে না। তাকে নিপুণ ভঙ্গিতে, ইশারায় দেহজ করে তোলেন কাঞ্চনা মৈত্র। এবং দেবলীনা দত্তর নাচ ছড়িয়ে দেয় প্রকট দেহবাদ। সারা ছবি জুড়ে মন আর শরীরের জটিল যুদ্ধ বিভিন্ন স্তরে প্রতত। এবং সমস্ত স্তরগুলি এক সঙ্গে বেঁধে রেখেছে, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত, ফিরে ফিরে আসা কবীর সুমনের বাংলা খেয়াল। হন্টিং কন্ঠ ও সুর। যেন মরুপথে বারবার বৃষ্টি। রুপম ইসলামের রবীন্দ্রসঙ্গীত হৃদয় ও শরীরের বিচিত্র উপসের মধ্যে হঠাৎ আদর।
এই ছবির প্রচার পত্রে ইংরেজিতে একটি অত্যন্ত জরুরি ঘোষণা : This is not a love story, rather a story of love, where journeys of everyday struggle of ordinary humans cross each other 's paths in ways beyond human comprehension. ঘোষণাটি আমার কাছে ভারি উপাদেয় মনোহর মনে হয়। যেহেতু ছবিতে যা কিছু ঘটবে সব মানুষের বোধবুদ্ধির নাগালের বাইরে, আমি স্ক্রিন পানে জুলজুল করে তাকিয়ে ঘটমান দৃশ্যাবলী দেখতে থাকি। এই ছবির গল্প, চিত্রনাট্য , পরিচালনা, সব কিছু পারমিতা মুন্সীর।
এবার যা দেখলাম তার সারাংশ: এই ছবির হেমা মালিনী (অভিনয় পিয়ালি মুন্সী) নিজেকে হেমা মালিনী ভাবেন। নিজেই এই অসুখের নাম দিয়েছেন 'হেমামালিনী সিনড্রোম'। আসেন এক হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের কাছে। চিরঞ্জিত চক্রবর্তী সেই ডাক্তার। হেমামালিনী ওই ডাক্তারের মধ্যে এক রেডিমেড ধর্মেন্দ্র পেয়ে যান। এবং আঁকড়ে ধরেন। অন্য দিকে আর একটা গল্প। এক পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসহীন ফিল্ম মেকার (রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়) হেমামালিনীকে নিয়ে সিনেমা করার কথা ভাবে। এই বেঁটে, পরিচয়হীন, পদে পদে এক যুবতী জ্যোতিষীর গণনা নির্ভর বাঙালি চিত্র পরিচালকের নাম কি জানেন? মানিক! শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, ওই হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের গোপন জীবন প্যাথেটিক। সেখানেও শরীরের উপোস। সেইসব বুঝতে কিম্বা না বুঝতে অহেতুক পাপিয়া অধিকারী পেরিয়ে চৈতী ঘোষালের স্মার্ট ছিপছিপেমিতে পৌঁছতে হবে। এর পরে আর মনুষ্য বোধবুদ্ধির কী বা করার থাকে? ভালো কথা, প্রচার পত্রে ঘোষিত, এই ছবির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার লন্ডনের রেনবো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে। কবে? জানানো হয়নি।
