সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিভিন্ন সময়ে বাংলার বুকে ত্রাস হয়ে উঠেছে ত্রৈলোক্য তারিণী, রশিদ খান, হুব্বা শ্যামল, সজল বাড়ুই, কামরুজ্জামান সরকারদের মতো নাম। ব্রিটিশ অধ্যুষিত ভারত থেকে শুরু করে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত এদের মতো কিছু মানুষের অপরাধের খতিয়ান বোনা হয়েছে 'গণশত্রু' সিরিজে। অপরাধপ্রবণ মানসিকতা থেকে এহেন সিরিয়াল কিলারদের খুনের প্যাটার্ন কেমন ছিল? সেসবই এই পাঁচ পর্বে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
পাঁচ পর্বের পাঁচ আলাদা পরিচালক। কোনওটার সঙ্গে কোনওটার যোগসূত্র নেই। তবে সকলেই 'গণশত্রু'। শহর কলকাতা থেকে বাংলার গ্রামগঞ্জে বিভিন্ন সময়ে ত্রাস হয়ে উঠেছিল এই পাঁচ সিরিাল কিলার। প্রথম সিরিজ সজল বাড়ুইকে নিয়ে। নয়ের দশকে নিজের বাবা, সৎ-মা ও সৎ-ভাইকে খুন করে পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য কীভাবে হাড়হিম করা প্লট সাজিয়েছিল বছর ষোলোর সজল, সেই গল্প ডকুমেন্টেশনের আদলে তুলে ধরা হয়েছে। সজলের চরিত্রে আয়ুষ দাসের অভিনয় এককথায় অসাধারণ। ঠান্ডা মাথার খুনী হিসেবে চোখ এবং অভিব্যক্তি দিয়ে যে অভিনয় তিনি করেছেন, তা প্রশংসার দাবিদার। এই পর্বের মেকিংও দেখতে মন্দ লাগে না। দ্বিতীয় গল্প 'চেন ম্যান'কে নিয়ে। বর্ধমানের বিভিন্ন অঞ্চলে একসময়ে 'লাল রং' ত্রাস হয়ে উঠেছিল। কারণ লাল রঙের পোশাক পরিহিতা কাউকে দেখলেই কামরুজ্জামান ওরফে 'চেন ম্যান' সাইকেলের চেন দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করত। শুধু তাই নয়, কামরুজ্জামান ছিল নেক্রোফিলিয়্যাক। মহিলাদের খুন করে তাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করত সে। এহেন সিরিয়াল কিলারের ভূমিকায় দেবপ্রিয় মুখোপাধ্যায় বাজিমাত করেছেন। বিশেষ করে স্থানীয় ভাষায় তাঁর সংলাপ বলার ধরন প্রশংসার দাবিদার। মেকিং যথাযথ।
তৃতীয় পর্ব ত্রৈলোক্য তারিণীকে নিয়ে। ব্রিটিশ অধ্যুষিত কলকাতায় সেসময়ে ত্রৈলোক্য ত্রাস হয়ে উঠেছিল। বাংলার প্রথম সিরিয়াল কিলার, যাঁকে ধরতে কার্যত নাকানি চোবানি খেয়েছিল পুলিশও! সমাজের চোখে এক 'নষ্টনারী' কীভাবে দিনের পর দিন মেয়েদের মগজধোলাই করে পুকুরে ডুবিয়ে খুন করেছিল, এই পর্বে সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। ত্রৈলোক্য তারিণীর ভূমিকায় পাওলি দাম এককথায় অসাধারণ। কিন্তু এই পর্বে চিত্রনাট্যের বাঁধন আরও পোক্ত হলে রহস্য-রোমাঞ্চ বিষয়টি ফুটে উঠত। তবে পিরিয়ড ড্রামা হিসেবে আলো এবং সেটের নিখুঁত কাজ প্রশংসনীয়। আরও দুটি পর্ব 'সাট্টা কিং' রশিদ খান আর হুব্বা শ্যামলকে নিয়ে। এই দুটি পর্ব দেখার জন্যেই 'গণশত্রু' অ্যানথোলজি সিরিজটি দেখতে হয়। যেমন কাস্টিং, তেমনই টানটান চিত্রনাট্য। 'সাট্টা কিং'য়ের ভূমিকায় সুব্রত এবং হুব্বা শ্যামলের চরিত্রে রুদ্রনীল ঘোষের অভিনয় দেখে শিরদাঁড়া দিয়ে হিমস্রোত বইতে বাধ্য। দেখতে বসে কোথাও একঘেয়ে লাগে না। ডকুমেন্টেশনের আদলে হাড়হিম করা নানা ঘটনা নিয়ে যেভাবে এই দুই পর্ব সাজানো হয়েছে, তা দেখে পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি দেখার আবদার করা যায় দর্শক হিসেবে।
