নির্মল ধর: কোনও সরকারি কর্মী যদি আপাদমস্তক সৎ থাকতে পারেন, তবে এই দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় তাঁকে বা তাঁর সততাকে উপযুক্ত সম্মান দেয়। যা আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে ঘটেছিল এবং এখনও ঘটে। বাইরের শত্রু যতই শক্তিমান হোক বা প্রতিকূল অবস্থা যতই কঠিন হোক, সত্যের জয় অবধারিত। এখনও। সেটা তো আমরা নিজেরাই বুঝতে পারছি সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের সাম্প্রতিক কিছু রায় দেখে। পরিচালক সেজাল শাহ তেমনই এক সৎ,সাহসী, কর্তব্যপরায়ণ গোয়ানিজ কাস্টমস অফিসার 'কোস্তাও ফার্নান্ডেজে'র দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের সত্য কাহিনি তুলে এনেছেন 'কোস্তাও' ছবিতে। যে ছবি সদ্য মুক্তি পেয়েছে জি ফাইভে।
গল্পটা কীরকম? সুন্দরী এবং স্বামী অনুরক্ত স্ত্রী মারিয়া (প্রিয়া বাপাত) কোস্তাওয়ের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জীবনকে আপন করে নিয়েছিলেন। সংসারে তাঁদের তিন সন্তান। কোস্তাও যে শুধু নিজের অফিস কাজের দায়িত্বের প্রতি নিবিষ্ট ছিলেন তাই নয়, স্নেহশীল বাবা এবং প্রেমিক স্বামী হিসেবেও যথেষ্ট দায়িত্ববান। তাঁর কাছে অফিসের কাজ প্রায় আত্মযাপনের এক নির্দিষ্ট পথ এবং একমাত্র উদ্দেশ্য। এতটুকু বিচ্যুতি ঘটেনি তাঁর কখনও। গোয়ার অন্যতম এক রাজনৈতিক নেতা জি-ডিমেলো (কিশোর কুমার) যখন দেড় হাজার কিলো সোনা পাচারের পরিকল্পনা করে, সূত্র মারফৎ সেই খবর জেনে পাচার ভেস্তে দিতে নিজের জান লড়িয়ে দিয়েছিলেন কোস্তাও। দুর্ভাগ্যক্রমে ডিমেলোর ভাই পিটার (হুসেইন দালাল) খুন হলে কোস্তাও প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত হন খুনি হিসেবে। সিবিআই অফিসারও (গগন দেব) তদন্তে তাঁকেই আসামী সাব্যস্ত করেন। এবার শুরু হয় গোয়ার পানাজি, মুম্বই, সুপ্রিম কোর্টে মামলা। দীর্ঘ দশ বছর আইনি লড়াই চালিয়ে শেষ পর্যন্ত সরকারী কাস্টমস বিভাগের অন্যতম সেরা অফিসারের সম্মান ফিরে পান কোস্তাও। ভবেশ ম্যান্ডেলা ও মেঘ শ্রীবাস্তব এর চিত্রনাট্য সত্যকাহিনি নিয়ে তৈরি হলেও ঘটনা সাজাতে তাঁরা কল্পনা ও সিনেম্যাটিক লাইসেন্স নিয়েছেন একটু বেশিই। স্টাইলও নিয়েছেন থ্রিলার তৈরির। বিশেষ করে পুলিশি ক্রিয়াকর্ম, জি ডিমেলোর চরিত্রায়ান, আকশন দৃশ্যগুলোর চিত্রায়নে।
অন্যদিকে মারিয়া কোস্তাও তাঁর সন্তানদের নিয়ে পারিবারিক দৃশ্যের পরিবেশনায় বেশ সংসারী ও ঘরোয়া মেজাজ ধরা দিয়েছেন। এমনকী স্বামী-স্ত্রীর আবেগপূর্ণ বাকবিতণ্ডার মধ্যেও একে অপরের প্রতি যে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন, সেখানেও অতি নাটকের সঙ্গে বাস্তব পরিবেশ সুন্দর রক্ষা করেছেন পরিচালক। সহজ ন্যারেশনে গল্প বললেও দৃশ্যবিন্যাসে তাঁর গভীর সিনেমা ভাবনা প্রকাশ পায়। তবে এই ছবির সবচাইতে বড় আকর্ষণ কোস্তাও এর চরিত্রে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির জীবন্ত অভিনয়। অনেকদিন পর তাঁকে এতো বাস্তব এবং একইসঙ্গে সংসারী, লাভেবল স্বামী ও কাজের প্রতি জীবন বাজি রাখা নিষ্ঠাবান সরকারি অফিসারের ভূমিকায় পাওয়া গেল। ঝগড়া ও ভালোবাসা প্রকাশের মুহূর্তে তিনি কি অসাধারণ। বয়স তাঁকে অনেক পরিণত করেছে। স্ত্রী মারিয়ার চরিত্রে প্রিয় বাপাতও তাঁর সঙ্গে পাল্লা দিয়েছেন এবং জি ডিমেলোর চরিত্রে খুব ঠাণ্ডা মেজাজেই তাঁর খলতা প্রকাশ করেছেন কিশোর কুমার। সিবিআই অফিসারের চরিত্রে গগন দেবের অভিনয়ের উল্লেখ না করলেই নয়। 'কোস্তাও' বুঝিয়ে দেয় ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় এখনও এমন কিছু ন্যায়াধীশ আছেন, যাঁদের সিদ্ধান্তের প্রতি মানুষের বিশ্বাস রয়েছে। সিস্টেমের সবটাই যে এখনও ঘুন ধরে যায়নি।
