shono
Advertisement
Tarasundari

একক অভিনয়ে হিরণ্ময়ী গার্গী, মঞ্চে তারাসুন্দরীর 'প্রাণপ্রতিষ্ঠা' কেমন হল? পড়ুন রিভিউ

কেমন হল 'তারাসুন্দরী'? লিখছেন রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।
Published By: Sandipta BhanjaPosted: 07:02 PM Nov 07, 2025Updated: 07:02 PM Nov 07, 2025

রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়: ‘দময়ন্তী হয়ে আমি, এই তারা, চারিদিকে শুঁটকো সখীর দল, মাঝে আমার অনাবৃত উদর-কটি ও জঙ্ঘার মধ্যবর্তী সানুদেশ - বারেন্দ্র ইলিশের ঝকঝকে আঁশের মতো অ্যাকট্রেসের এই নির্লোম রংচঙা উদর-’ প্রবল হাততালির মধ্যে দাঁড়িয়ে ১ নভেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় জি ডি বিড়লা সভাঘরে মঞ্চের মাঝখানে একক অভিনয়ে অবিকল্প গার্গী। তারাসুন্দরী রূপে উৎসারিত তাঁর আবেদন ও নির্যাস বিতরণ করেন। এইভাবে উন্মোচিত, প্রকাশিত হলেন গত শতবর্ষ ধরে মেঘে ঢাকা তারাসুন্দরী! আমরা নাম শুনেছি এই বাঙালি অভিনেত্রীর। আমি দেখেওছি তাঁকে। আমার ছয়-সাত বছর বয়েসে। যেহেতু থাকতেন পাশের বাড়িতে শ্যামপুকুর লেনে। ছায়া ছায়া মনে পড়ে। তাঁর মেয়ে ছিলেন আমার প্রতিভামাসি। মায়ের বন্ধু। এই প্রথম তারাসুন্দরীকে জানলাম, চিনলাম, জীবন্ত দেখলাম গার্গীর অনন্য একক অভিনয়ে। এবং এই ভাবেই গার্গীর অনেক দিনের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা, তাঁর একান্ত নিজস্ব থিয়েটার প্লাস-এর প্রথম প্রকাশ ঘটল। আমরা সাক্ষী থাকলাম এক সাংস্কৃতিক জন্মলগ্নের। শুরু হল বাংলার মঞ্চে গার্গীর নিজস্ব প্রয়াস!

Advertisement

একঘণ্টা বিশ মিনিটের জ্যোতির্ময় কোহিনুর বিখ্যাত নাট্যকার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের নাটক ‘তারাসুন্দরী’। তবে গার্গীর ‘তারাসুন্দরী’ কর্মকাণ্ডর প্রাণন-প্রদীপ ব্রাত্য বসু। তিনিই গার্গীকে বলেন, তোমার থিয়েটার প্লাসের প্রথম প্রয়াসের জন্য ভাবো, তারাসুন্দরীকে নিয়ে। তারাসুন্দরীর মতো অভিনেত্রী! অথচ বড্ড আড়ালে থেকে গিয়েছেন। ব্রাত্যর এই স্ফুলিঙ্গের উড়ান আগুন জ্বালল গার্গীর মধ্যে। এবং গার্গী অচিরে বুঝলেন তারাসুন্দরী অথৈ। এবং আঁধার সমুদ্র। যত আলো সব বিনোদিনী-বিস্তারে। তুলনায় সমসময়ের তারাসুন্দরী অনাদরে, অবহেলায়। অথচ তিনি প্রতিভা ও প্রণোদনায় দুর্বার। এই সময়ে গার্গী পড়লেন প্রতিদিন-এর ‘রোববার’ পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশিত ব্রাত্য বসুর অসামান্য উপন্যাস ‘উদ্ভাসিত মান্দাস’। এবং তিনি এই উপন্যাসে তারাসুন্দরীকে পেলেন অরুণ এষণার আলোয়। এবং নাট্যকার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়কে পেলেন পাশে। ব্রাত্যর তারাসুন্দরী চর্চা ও ভাবনাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এমন একটি নাটক লিখলেন, যেখানে গার্গী ছাড়া আর কেউ নেই। গার্গী তারাসুন্দরী। গার্গীই তারার জীবনে দুই পুরুষ, অমরেন্দ্র দত্ত আর অপরেশ মুখোপাধ্যায়। গার্গী নিজের পক্ষে-বিপক্ষে। প্রেমে-অপ্রেমে। আদরে-অনাদরে। এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন এক ঘণ্টা বিশ মিনিটের ঝলসে ওঠা গার্গী। নিরন্তর কথায় তিনি। ভাবনার চুপকথায় তিনি। উদ্দাম হাসিতে তিনি। গভীর কান্নায় তিনি। আবেগের প্লাবন তিনি। নিঃসঙ্গ ভাঙনে তিনি। তিনিই এই নাটকের অবিস্মরণীয় অবিকল্প অদ্বিতীয়া! এবং তিনিই তাঁর প্রেমিক অমরেন্দ্রনাথ দত্ত হয়ে নিজেকে বলতে পারেন: “শোনো তারা, আমি অনেক দিন ধরেই তোমার রূপ ও গুণের খাতির করি। তোমার মতো শরীরের বিভঙ্গ আর কার! এখন তুমি ইংরেজি মতে সেক্স সিম্বল। মানে বোঝো? তোমার অভিনীত শৈবলিনী আমার রক্তে বন্যার জলকল্লোল ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত করেছে। ‘কিন্তু এতে আমার প্রতি জৈব আকাঙ্ক্ষা বোঝায়, ভালোবাসা বোঝায় না’, বলেন তারা সুন্দরী। ক্রমে বুঝবে। সাধারণত থিয়েটারে অভিনেত্রীরা বারাঙ্গনা। এই অমরবাবুও চলে যান তারাকে ছেড়ে। গার্গী ফুটিয়ে তোলেন তারার ভাঙন। তারার হৃদয় চিৎকার। হাহাকার।তারার অস্তিত্বের সার সত্য। ও শরীরের অভিমান: “অমরবাবু, কুসুমের নরম বক্ষে ঝাঁপ দিলে? আমাকে ঠকালে দত্তবাবু? আমার এই সৌন্দর্য কি এখনও মনোহর নয়? স্তনযুগল কি বজ্রকঠিন নয়? আমার কটিতে কি সেই বাঁক নেই যা নিম্ননাভি বেয়ে আমার যৌবনদ্বারে পৌঁছেছে?
তারাসুন্দরীর শরীর অভিমানের এই সাহসী উচ্চারণ গার্গীর ঠোঁটে, মনে থাকবে আমার।

গার্গীর একক অভিনয় শেষ পর্যন্ত তারাসুন্দরীকে পৌঁছে দেয় সেই প্রান্তিক প্রত্যয়ে যে তারা আজীবন যুক্ত থাকবে নারীর মুক্তিযুদ্ধে। তিনি প্রত্যাখ‌্যান করেন বিনোদিনীর ডাক। বলেন, তিনি দূরায়ত আধ্যাত্মিকতায় পলাতক হতে চান না। তিনি ব্রতী থাকতে চান নারী চেতনার উন্মোচনে। তিনি যুক্ত থাকতে চান নারীর সামাজিক অস্তিত্বের লড়াইয়ে। এই নাটকের শেষে গার্গীর কণ্ঠে তাই নজরুলের গান: জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা জাগো স্বাহা-সীমন্তে রক্তটিকা মেঘে আনো বালা বজ্রের জ্বালা চিরবিজয়িনী জাগো জয়ন্তিকা আমরা সবাই উঠে না দাঁড়িয়ে পারি না। প্রেক্ষাগৃহ উপচে যায় করতালিতে।

ঋণস্বীকার : আমার লেখায় তারাসুন্দরীর কথাগুলি চিত্রনাট্য থেকে উঠে এলেও সেগুলি ব্রাত্য বসুর লেখা ‘উদ্ভাসিত মন্দাস’ উপন্যাসের অপূর্ব অঙ্গ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • একঘণ্টা বিশ মিনিটের জ্যোতির্ময় কোহিনুর বিখ্যাত নাট্যকার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের নাটক ‘তারাসুন্দরী’।
  • তবে গার্গীর ‘তারাসুন্দরী’ কর্মকাণ্ডর প্রাণন-প্রদীপ ব্রাত্য বসু।
  • গার্গীর একক অভিনয় শেষ পর্যন্ত তারাসুন্দরীকে পৌঁছে দেয় সেই প্রান্তিক প্রত্যয়ে যে তারা আজীবন যুক্ত থাকবে নারীর মুক্তিযুদ্ধে।
Advertisement