চারুবাক: অভিনেত্রী মানসী সিনহা ছোট ও বড় পর্দার বেশ পরিচিত মুখ। তাঁর অভিনয়ে জীবনের স্পন্দন অনুভব করেন বাঙালি দর্শক। সম্ভবত, সেই জনপ্রিয়তা আঁচলে বেঁধে এবং সাহসে ভর করে তিনি শুরু করেছেন পরিচালনার কাজ। আর শুরুতেই বুঝিয়ে দিলেন, জনগণপ্রিয় ছবি পরিবেশনে তিনি ভালোই রাঁধুনি।
'এটা আমাদের গল্প' বর্ষীয়ান দুই মানুষের গল্প। যাঁদের আলাপ, পরিচয়, বন্ধুত্ব থেকে প্রেমের উন্মেষ এবং সংসার পাতার পরিকল্পনায় প্রথম দিকে কুণ্ঠা থাকলেও, কোনও নৈতিক সামাজিক অপরাধবোধ বাধা হয়নি। বরং এই নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণী তাঁদের ভাবনার সঙ্গী হয়েছে। বেশ সুখি সুখি সমাপ্তির পরিমণ্ডল তৈরিও হয়। কিন্তু তারপর? পার্কে নিয়মিত প্রাত:ভ্রমণে গিয়ে একটু গায়ে পড়েই প্রবীণ শর্মা (শাশ্বত) আলাপ করেন শ্রীতমার(অপরাজিতা) সঙ্গে। সঙ্গীহীন দুজনই। প্রাথমিক দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাটিয়ে বন্ধুত্ব হয় দুজনার। প্রবাসী পাঞ্জাবি প্রবীণ অকৃতদার। শ্রীতমা বিধবা। কিন্তু দুজনের মনেই রয়েছে সুপ্ত বাসনা নতুন করে সংসার পাতার।
দেবপ্রতীম দাশগুপ্তের চিত্রনাট্য এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে শুধু দুটি প্রবীণ হৃদয়ের বাসনাকে বাস্তবায়িত করতে দুটি পরিবারের নতুন প্রজন্মকেও উপযুক্ত জায়গা দিয়ে বুনেছেন হাসি মজায় বেশ কিছু ঘটনার মালা! হ্যাঁ, হয়তো বাস্তব জীবনে তেমনটি খুব একটা ঘটে না, কিন্তু ঘটলে কেমন হত তার সিনেমাটিক চিত্রায়ন ঘটিয়েছেন মানসী। তাঁর পরিচালনার কাজে, শট টেকিং ও কাটিং-এর কারিকুরিতে বাণিজ্যিক ও পেশাদারি ভাবনার সুন্দর প্রকাশ ঘটেছে।
পার্কের পাশে একটি মেকশিফট চায়ের দোকানের মালিকের (খরাজ) উপস্থিতিও দুই প্রবীণের মেলামেশায় অনুঘটক হিসেবে বেশ মজার। আর ছবির শেষে দুজনের মিলন ঘটল কি ঘটল না, বা কেমনভাবে ঘটানো হলো, সেটা সিনেমাহলে গিয়ে দেখাটাই শ্রেয়। দুই বয়সের দুটি প্রেম এবং হাসি-মজায় দর্শককে জমিয়ে রাখতে কোনও ত্রুটি রাখেননি মানসী।
[আরও পড়ুন: কাঞ্চনের ‘জিপ-বিভ্রাটে’ হেসে খুন প্রাক্তন পিঙ্কি, কী বলছেন?]
এখনকার বাংলা সিনেমায় জেড জেনারেশনের প্রেম, প্রেমভঙ্গ, হতাশা, আধুনিক নাগরিক জটিলতা জড়িয়ে থাকে। কিন্তু মানসীর এই গল্পে বাংলা সিনেমার পুরনো প্রেমকাহিনি যেন ফিরে এল পুরোনো ঘরানার হাত ধরেই। গানও ছবিতে রাখা হয়েছে সিচুয়েশনস মেপে ও ভেবে। খরাজ মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া গানটিও চমকে দেয় বৈকি! শ্রীকান্ত ও লগ্নজিতার গান শুনতে মন্দ লাগে না। তবে কৌতুকধর্মী এই ছবির শিরদাঁড়া হচ্ছে শিল্পীদের সম্মিলিত সুঅভিনয়। বিশেষ করে প্রধান চরিত্রের দুই শিল্পী - শ্বাশত চট্টোপাধ্যায় (Saswata Chatterjee) এবং অপরাজিতা আঢ্য। একটু 'অতি'র আশ্রয় নিয়েও দুজন রোম্যান্টিক পর্বগুলো যেমন জমিয়ে দিয়েছেন, তেমনি ট্র্যাজিক মুহূর্তগুলোকে আবেগঘন করে তুলেছেন।
বাঙালি ও পাঞ্জাবি সংস্কৃতির মেলবন্ধনের সাঙ্গীতিক মুহূর্তও মন কাড়ে। সোহাগ সেন এবং খরাজ মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতি নিশ্চয়ই ছবির বাড়তি আবেদন। তবে হ্যাঁ, এখনকার থ্রিলার, গোয়েন্দা প্রভাবিত বাংলা সিনেমার দর্শক এমন একটি নির্মল মজা ও আনন্দের ছবি কীভাবে নেবে, সেটাই দেখার।
সিনেমা - এটা আমাদের গল্প
অভিনয়ে - শ্বাশত চট্টোপাধ্যায়, অপরাজিতা আঢ্য, সোহাগ সেন, খরাজ মুখোপাধ্যায়, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবদূত ঘোষ, তারিন জাহান, আর্য দাশগুপ্ত প্রমুখ
পরিচালনায় - মানসী সিনহা